শাহাদৎ হোসেন মিশুক, পিবিএ, গাইবান্ধা: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহের চাপড়িগঞ্জ বাজারে রাজা পেপার মিলের বর্জ্য ও দূষিত পানি ইছামতি গজারি খালের পানি দূষণ হচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছে না এলাকাবাসী।
গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া নদীর ঘোড়ামারা এলাকা থেকে উৎপত্তি ইছামতি গজারি খালটি চলে গেছে দক্ষিণে বগুড়ার শিবগঞ্জের দিকে। চাপড়িগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চাপড়িগঞ্জ এস এম ফাজিল মাদরাসার কোল ঘেষে ইছামতি গজারি খালটি বগুড়ায় চলে গেছে। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধীক শিক্ষার্থীকে রাজা পেপার মিলের বর্জ্য ও দূষিত পানির দুর্গন্ধে ভুগতে হচ্ছে। এছাড়াও গত দেড় বছর থেকে এই খালের পানি কোন কাজেই ব্যবহার করতে পারছে না গোবিন্দগঞ্জ ও বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইছামতি গজারি খালের দুর্গন্ধযুক্ত কিছু পানি নিচু অঞ্চলে হালকা স্রোতে চলে যাচ্ছে। আর অনেক স্থানেই এই পানি জমে থাকছে। পানির দুর্গন্ধে দাঁড়িয়ে থাকা যায়না এই খালের পাশে। বর্জ্য ও পানি পঁচে কালো বর্ণ ধারণ করেছে।
সুনীল শীল বলেন, ইছামতি গজারি খালে আমরা অনেকেই মাছ ধরে খেয়েছি। পানি দূষণের কারণে এখন আর একটি মাছও পাওয়া যায় না। পানিতে নামলেই চুলকানিসহ চর্মরোগ আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই। খালে অনেক বেশি পরিমাণ পানির স্রোত যদি দেওয়া যেত তাহলে দূষিত বর্জ্য ও নোংরা পানি আর থাকতো না।
তোতা মিয়া বলেন, এই খাল মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু গোসলসহ কৃষি কাজে আসতো। বর্তমানে তেমন পরিস্থিতি নেই। তাই খালের পানি কৃষি কাজসহ কোন কাজেই ব্যবহার করা যায়না। পানি দুর্গন্ধের কারণে বিপাকে পড়েছেন খালের পাশে বসবাসকারী পরিবারের লোকজনও। এছাড়া সেচের পানির অভাবে খালের পাশের বেশ কিছু কৃষিজমি অনাবাদী পড়ে রয়েছে।
আমজাদ হোসেন বলেন, বর্ষাকালে খালের এই পানি জমিতে প্রবেশ করায় ফসলের ক্ষতি হয়। গত বছর খালের ভালো পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারি নি। ফলে আঁশসহ পাট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করেছি। এতে করে ৬০ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। মিলের ছাই উড়ে এসে বাড়ীতে পড়ে টিনের চালা ও কাপড় নষ্ট হচ্ছে।
সহকারী অধ্যাপক আব্দুল জলিল বলেন, এই খালের পানি খেয়ে গত বছর নওদাপাড়া গ্রামের এনতাজ আলী ও জবেদ আলীর দুইটি গরু এবং অনেকগুলো হাঁস মারা গেছে। এই পানিতে নামায় রিকসা-ভ্যান মেরামতকারী গেলম্যানের চর্মরোগ হয়েছে। খালটি থেকে আমরা উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি সম্মুখিন বেশি হচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেও খাল দূষণ বন্ধ করা যায়নি। প্রতিনিয়তই দূষিত করা হচ্ছে এই খারের পানি।
চাপড়িগঞ্জ এস এম ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু তালেব মন্ডল বলেন, দূষিত এই খালের দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা পড়ায় মনোযোগী হতে পারছে না। সবসময় জানালা বন্ধ রাখায় শ্রেণিকক্ষে অল্প আলোর কারণে দিনের বেলাতেই বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে। ফলে পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে বিদ্যালয় দুটির পাঁচ শতাধীক শিক্ষার্থীর।
রাজা পেপার মিলের ব্যবস্থাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ২০১৮ সালের প্রথমের দিকে মিল চালু করার সময় খালের পানি দূষিত হয়। এখন ইটিপি মেশিন ব্যবহার করায় আর খালে দূষিত পানি ছাড়া হচ্ছে না। আসন্ন বর্ষাকালেই খালে নদীর পানি চলে আসলে দূষিত পানি আর থাকবে না। এই খালের পানি পান করলে কোন গবাদিপশু মারা যাবে না।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ প্রধান বলেন, অতীতে তাদের ত্রুটি ছিল। এখন ঠিক হয়ে গেছে বলে প্রত্যক্ষ করেছি। তারপরও মিল কর্তৃপক্ষ যদি বর্জ্য ও দূষিত পানি খালে ছেড়ে দেয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাম কৃষ্ণ বর্মন বলেন, খুব শীঘ্রই রাজা পেপার মিলে পরিদর্শনে যাবো। কোন অনিয়ম দূর্নীতি আমাদের চোখে ধরা পরলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পিবিএ/এসএইচএম/জেডআই