রুশ ডুবোযানে ১৪ নৌ-সেনার মৃত্যু নিয়ে রহস্য

পিবিএ ডেস্ক: গত সপ্তাহে রুশ নৌ-বাহিনীর বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ব্যবহৃত একটি ডিপ সাবমার্সিবলে (ডুবোযান) আগুন লেগে ১৪ নৌ-সেনা নিহতের ঘটনা ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্য। কীভাবে আগুন লাগলো বা কতজন এ দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে গিয়েছেন, তা এখনো পরিষ্কার জানায়নি রাশিয়া। এরই মধ্যে, ইসরায়েলি একটি সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ওইদিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দু’টি সাবমেরিনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার পরপরই ওয়াশিংটন ও ক্রেমলিন কর্তৃপক্ষ পূর্ব নির্ধারিত সব কর্মসূচি বাতিল করে জরুরি আলোচনায় বসেছে বলেও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।

অজ্ঞাত সূত্রের বরাতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সংবাদমাধ্যম ডেবকা ফাইল জানায়, আলাস্কার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের জলসীমায় একটি মার্কিন সাবমেরিনের সঙ্গে রুশ পারমাণবিক সাবমেরিনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রুশ সাবমেরিনটি নৌ-বাহিনীর গবেষণার কাজে ব্যবহৃত ডিপ সাবমার্সিবলের (ডুবোযান) পাহারায় নিযুক্ত ছিল।

ইসরায়েলের দাবি, রুশ সাবমেরিনের ছোড়া বলকান ২০০০ টর্পেডোর আঘাতে মার্কিন সাবেমেরিনের উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনার পরপরই নিজ নিজ দেশে জরুরি বৈঠকে বসেন মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা। যদিও, এ সংঘর্ষের ঘটনা এখনো ওয়াশিংটন বা ক্রেমলিন, কেউই স্বীকার করেনি।

গত সপ্তাহে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স হঠাৎই পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী নিউ হ্যাম্পশায়ার সফর বাতিলের পর থেকেই এ বিষয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। ভাইস প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র র‌্যান্ডি গ্রেন্ট্রি সংবাদমাধ্যমকে জানান, হঠাৎ জরুরি ডাক পাওয়ায় পেন্সকে ওয়াশিংটন ফিরে যেতে হচ্ছে। পরে, পেন্সের প্রেস সেক্রেটারি আলিসা ফারাহ এক টুইটবার্তায় বলেন, কিছু একটা ঘটায় ভাইস প্রেসিডেন্টকে ওয়াশিংটনেই থাকতে হচ্ছে। এতে শঙ্কার কোনো কারণ নেই।

আলিসা জানান, এ ঘটনার পর থেকে মাইক পেন্স ওয়াশিংটন ছেড়ে যাননি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। এদিকে, গত সোমবার (১ জুলাই) ডিপ সাবমার্সিবলে আগুন লেগে ১৪ নৌ-সেনা নিহতের পরপরই পূর্ব নির্ধারিত সব কর্মসূচি বাতিল করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সার্জিও শোইগুর সঙ্গে বৈঠকে বসেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।

রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, পানিতে বায়োমেট্রিক পরিমাপের সময় ডুবোযানটিতে আগুন ধরে গেলে বিষাক্ত ধোঁয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৪ জন মারা যান। পরে যানটির অন্য ক্রুরাই আগুন নেভাতে সক্ষম হন।

তবে, যানটিতে মোট কতজন ছিলেন ও কীভাবে আগুন লাগলো, তা জানানো হয়নি। ইসরায়েলের দাবি, রুশ ডুবোযানটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার হিসেবে পরিচিত হলেও, এটি গুপ্তচরবৃত্তিতেও ব্যবহৃত হতো। ডুবোযানটির ২৫ ক্রুর মধ্যে কতজন বেঁচে গেছেন, তা নিশ্চিত নয়। তবে, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সেভেরোমরস্কির সামরিক হাসপাতালে পাঁচ জন চিকিৎসাধীন।

আরেকটি সংবামধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিহতদের বেশিরভাগই ডুবোযানের মধ্যে বা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছেন। তবে, তাদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কোথাও আগুনের কথা উল্লেখ করা হয়নি।

জানা যায়, ‘লোশারিক’ নামে পরিচিত রুশ ডুবোযানটির নির্মাণকাজ ১৯৮০ সালে শুরু হলেও, তা শেষ হয় ২০০০ সালের দিকে। সমুদ্রের নিচে থাকা বিদেশি যোগাযোগ ব্যবস্থায় নজরদারির পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করাই ছিল এর মূল কাজ।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেস্কভ বলেছেন, দুর্ঘটনা আক্রান্ত ডুবোযানটির বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হবে না। কারণ, এটা একেবারেই ‘টপ সিক্রেট’। এছাড়া, দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া নৌ-সেনাদের জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সার্জিও শোইগু।

পিবিএ /এমএসএম

আরও পড়ুন...