শেখ হারুন অর রশিদ, পিবিএ, খুলনা: সমন্বিত নাগরিক সুবিধা নিয়ে দেশের প্রথম একটি ‘সিভিক সেন্টার’ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে খুলনায়। শেখ রাসেল সিভিক সেন্টার নামের এ প্রকল্পটি ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। মূল্যায়নের পরে এ প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উত্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪১ কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, একনেকের অনুমোদন পেলে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এ সিভিক সেন্টারটি নির্মাণ কাজ শুরু করবে। প্রকল্পটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রস্তুত করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই এ বিষয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেই সভায় প্রকল্পটির নানান দিক মূল্যায়ন করে ছাড়পত্র দেওয়া হতে পারে। পরে পরিকল্পনা মন্ত্রীর দপ্তরে পাঠালে মন্ত্রী একনেক সভায় উপস্থাপন করবেন। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকলে সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকের সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হতে পারে।
সূত্রমতে, খুলনায় দেশের প্রথম এ ধরনের সিভিক সেন্টার নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সিভিক সেন্টারে থাকবে অত্যাধুনিক ক্লাব, সেমিনার হল, গেস্ট হাউস, সুইমিং পুল, টেনিসকোর্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। সিভিক সেন্টার শহরের এমন একটি অংশ যেখানে একটি শহরের সমগ্র কার্যক্রমগুলো ছোট পরিসরে এবং সুসজ্জিতভাবে সন্নিবেশিত থাকে। যেখানে অধিকাংশ লোকের সমাগম হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। সিভিক সেন্টার একটি শহরের বিনোদন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। সিভিক সেন্টারে শহরের অধিবাসীদের- সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মনের চাহিদা পরিপূর্ণ হয়।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে শেখ রাসেল সিভিক সেন্টার নির্মাণের জন্য মোট ১৪১ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এই টাকার পুরোটাই সরকারি অর্থায়নে করা হবে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে এ বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২২ সাল পর্যন্ত।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, শেখ রাসেল সিভিক সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পটি খুলনা শহরের কেন্দ্রস্থল হতে ৬ কিলোমিটার দুরে খালিশপুর, দৌলতপুর, পাবলা ও দেয়ানার মধ্যবর্তী কেডিএ আউটার বাইপাস রোড সংলগ্ন কবির বটতলা এলাকার ১ দশমিক ৪৪ একর জমিতে স্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রকল্পের সামনের দিকে ১০০ ফুট প্রসস্থ কেডিএ আউটার বাইপাস রোড বিদ্যমান রয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে খুলনার মানুষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আধ্যাত্মিক, ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ সেমিনার-সিমপোজিয়াম ও সম্মেলনের আয়োজন করা সম্ভব হবে। ফলে ওই এলাকার জনসাধারণের সামাজক-সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড প্রসারের পাশাপাশি এলাকাবাসীর চিত্তবিনোদন এবং নাগরিক চাহিদা পূরণ হবে।
খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির মহাসচিব আশরাফ উজ জামান বলেন, ‘শুধু শহরে হাইরাইজ বিল্ডিং থাকলেই হবে না। আধুনিক নগর সভ্যতা প্রতিষ্ঠায় যে সমস্ত সুযোগ থাকে সেটা খুলনায় নেই। খুলনা শহরে দু’টি পার্ক আছে। কিন্তু যে মানের হওয়া দরকার সে মানের নয়।’
তিনি বলেন, খুলনা শহরে ৩০০ লোক নিয়ে অনুষ্ঠান আয়োজন করার জন্য ভালো হল নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব শেখ রাসেল সিভিক সেন্টার প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়া দরকার। খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অনেক আগের পরিকল্পনা এটা। এই প্রকল্পটি অনুমোদন পেলে চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি খুলনার নাগরিক চাহিদা পূরণেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তিনি।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রকল্প) মর্তুজা আল মামুন জানান, প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমের অংশ হিসাবে সেখানে তিনটি কনফারেন্স রুম ছাড়াও একটি করে মাল্টিপারপাস হল, অডিটরিয়াম, জিমনেশিয়াম, রেস্টুরেন্ট, অতিথিশালা, ক্লাব হাউস, এম্পিথিয়েটার, টেনিস কোর্ট, স্যুভেনিরসপ স্থাপন করা করা হবে। সেই সঙ্গে ৭৯৩ দশমিক ৯১ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, ১০৭১ দশমিক ১০ বর্গমিটার অভ্যন্তরীণ ড্রেন ও এপ্রোন নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্প অনুমোদনের পর বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করা হবে। সে সময় বর্তমান নকশার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে বলে তিনি জানান।
পিবিএ/শেখ হারুন/ জেডআই