পিবিএ ডেস্কঃ মওসুম বদল জীবনের অঙ্গ হলেও মওসুমি অসুখ বিসুখকে জীবনে খুব একটা ঘেঁষতে না দেওয়াই ভাল। তবু স্বস্তি আর মেলে কই? বরং গরম কাটিয়ে বৃষ্টির ঘরে পা দিতে না দিতেই জাঁকিয়ে ধরে ফ্লু, সর্দি-কাশি। বৃষ্টির দিনের জলীয় আবহাওয়া বৃষ্টি না হলেই ভ্যাপসা গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। শঁখের করাতের এই দ্বিমুখী চালেই সক্রিয় অ্যালার্জেন, ভাইরাস ও ব্যাকটিরিয়ারা।
সাধারণত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাওয়াদাওয়া, ওষুধপথ্যেই এত দিন কমেছে হরেক কিসিমের ভাইরাল ফিভার। তবে সময় বদলের সঙ্গে জীবাণুরাও তাদের চরিত্র বদলাচ্ছে। তাই ভাইরালেও প্রয়োজন পড়ছে বাড়তি সতর্কতা। বিশেষ করে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার ও কিডনির অসুখে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এই সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার।
এক) খোলা বাজারে বৈধ প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকের দেদার বিক্রি।
দুই) অসুখের শুরুতেই কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ।
কিন্তু কী ভাবে এরা ভাইরাল ফিভারকে উস্কে দিচ্ছে নিয়ত? বাজার থেকে ইচ্ছা মতো ওষুধ কিনে খাওয়ার চল এ দেশে রয়েছে। ওষুধ যাও বা খেলাম, একটু ভাল হতই আর কোর্স শেষ করলাম না। ফলে শরীরে ভাইরাল ফ্লুয়ের জীবাণু এতে কিছুটা নিস্তেজ হল ঠিকই, কিন্তু কোর্স শেষ না হওয়ায় ফের মাথাচাড়া দিল দিন কয়েকে ভিতরেই। এমনকি, তারা শরীরে বংশবিস্তারও করে ফেলতে পারে। আর এ ক্ষেত্রে জিন মিউটেশনের কারণে ব্যাকটিরিয়ার পরবর্তী প্রজন্ম শরীরের ভিতর থাকা অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা নিয়েই জন্মায়। তাই অনেক সময় বার বার ঘুরে ঘুরে আসে জ্বর-সর্দি-কাশি।
তা ছাড়া অনেক সময় দেখা যায়, ব্যস্ততার যুগে দ্রুত অসুখ ঠেকাতে প্রথমেই কড়া ডো়জের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয় রোগীর শরীরে। এতে অসুখ সারে ঠিকই, কিন্তু প্রথমেই কড়া ডোজের অ্যান্টিবায়োটিক পেলে তার সঙ্গে মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতাও তৈরি হয়ে যায় শরীরের জীবাণুদের। তখন কম ডোজে তো কাজ হয়-ই না, এমনকি, কড়া ডোজ পেতে পেতে তার সঙ্গে লড়াই করার নতুন উপায় খুঁজে পেয়ে যায় জীবাণুরা।
তাই ভাইরাল ঠেকাতে অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক প্রয়োগও প্রয়োজন। সে না হয় ঠেকানোর একটা উপায়, কিন্তু কেন মরসুম বদলের সঙ্গে সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে ভাইরাল ফ্লু?
চিকিৎসকের মতে, এর অনেকগুলো কারণ আছে ঠিকই। তবে মূলত আবহাওয়ার সঙ্গে শরীরের নিজস্ব তাপমাত্রা সহন ক্ষমতা সহজে মানিয়ে উঠতে না পারাও বাড়তে থাকা দূষণ এর নেপথ্যের অন্যতম কারণ। মাঝে মাঝেই বৃষ্টির জেরে তাপমাত্রার আচমকা হেরফের ও ক্রমাগত দূষণের ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘরেও কোপ পড়ে। দূষণের জেরে পরিবেশে অ্যালার্জেন ক্রমেই বাড়ছে। ফলে অ্যালার্জির হানা একটা বড় সমস্যা বইকি। সেই সুযোগে ভাইরাস বা কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটিরিয়া শরীরে ঢুকে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে এই বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলছে। সাধারণত ভাইরাল ফ্লু-তে ঘুষঘুষে জ্বর যেমন থাকে, আবার ১০৩-১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বরও উঠতে পারে। অনেক সময় জ্বর কমলেও অ্যালার্জেনের প্রভাবে থেকে যাচ্ছে হাঁচি-কাশি। তাই ভাইরালের লক্ষণ দেখলেই প্রথম থেকে সচেতন হতে হবে।
কিন্তু কী কী লক্ষণে বুঝব?
সব সময় যে খুব বেশি জ্বর হবেই এমন কোনও কথা নেই। হালকা গা গরম থেকেও শরীরে বাসা বাঁধতে পারে ভাইরাল ফ্লু।
জ্বরের সঙ্গে গা-হাত-পায়ে ব্যথা থাকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই।
অ্যালার্জির প্রভাবে নাক দিয়ে কাঁচা জল ঝরা, সর্দি-কাশির প্রভাব থাকে।
জ্বরের সঙ্গে মাথা যন্ত্রণা, দুর্বল লাগাও এই অসুখের অন্যতম লক্ষণ।
ভাইরাল হলে তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিকেও জ্বর তিন-চার দিনে না কমলে রক্ত পরীক্ষাও করতে হবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলার পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে বেশ কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পরামর্শ দিলেন চিকিৎসক।
যতটা সম্ভব বৃষ্টি এড়িয়ে চলুন। অল্প ভিজলেও ঠান্ডা লাগতেই পারে। তার হাত ধরে জ্বরে পৌঁছে যাওয়া নতুন কিছু নয়।
বৃষ্টিতে ভিজেই এসি-তে প্রবেশ নয়। বরং ভিজে গেলেই ভাল করে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করে নিন বাড়ি ফিরে। এতে বৃষ্টির জলের দূষণ শরীর থেকে ধুয়ে যায় আবার জল বসে থাকতে পারে না শরীরে।
ঠান্ডার ধাত থাকলে গোটা বর্ষাকাল জুড়েই গা সওয়ানো উষ্ণ জলে স্নান করুন।
চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ নয়, কড়া ডোজ দিতে বলার অনুরোধও চলবে না।
পাতে বাড়ান সবুজ শাক-সব্জি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে এমন খাবারদাবার।
শরীরে জলের পরিমাণ কমিয়ে ফেললে চলবে না। তাই ঠান্ডা পানীয়, মদ্যপান এ সব থেকে বিরত থাকুন। এরা শরীরকে শুষ্ক করে অসুখ ডেকে রোগ প্রতিরোধকে মেরে ফেলে। সঙ্গে ভিতর থেকে দুর্বল করে শরীর।
মশারি টাঙিয়ে ঘুমনোর অভ্যাস করুন। ভাইরাল রোখার সঙ্গে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়াও কম হয় না এ সময়।
বেশি দূষণযুক্ত এলাকায় থাকলে চেষ্টা করুন মাস্ক ব্যবহার করতে।
কাশি হলেই কাফ সিরাপ নয়।
পিবিএ/এমআর