পিবিএ,চট্টগ্রাম: মায়ের হত্যাকারীদের বিচার চাইতে মানববন্ধনে চার মাসের শিশু মরিয়ম ! কার কোলে ঠাঁই হবে চার মাসের ফুটফুটে শিশু মরিয়মের ? পুথিবীর আলো দেখার চার মাসের মাথায় হারাতে হয় মাকে। জম্ম নেয়ার এত অল্প সময়ের মধ্যে গর্ভ ধারিনী মাকে হারিয়ে মরিয়ম এতিম হবে এটা কেউ ভাবতে পারেনি। মায়ের মৃত্যুর পর কারো কোলে যাচ্ছে না মরিয়ম সারাক্ষন শুধু কান্না করছে। বুধবার মায়ের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অন্যদের মত চার মাসের মরিয়মও অংশ নিয়েছিল। ফুফুর কোলে চড়ে মরিয়ম মানববন্ধনের ব্যানার নিজ হাতে আকড়ে ধরে হত্যাকিারীদের গ্রেফতারের দাবী জানায় নিরব ভাষায়। চার মাসের অবুঝ শিশুর মানববন্ধনের ব্যানার হাতে ধরার দৃশ্যটি সবার চোখে পড়ে। মীরশ্বরাই উপজেলার হিঙ্গুলী গ্রামের গৃহবধু হোসনেয়ারা আক্তার লিপি হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন করে স্থানীয় জনতা। বুধবার বিকালে স্থানীয় কালামিয়া মসজিদ চত্ত্বরে এলাকাবাসী ও মঈনিয়া যুব ফোরাম এবং মঈনিয়া ওলামা মাশায়েখ এর ব্যানারে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ লিপির হত্যাকারী আসামীদের পক্ষ নিয়ে হত্যাকান্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহের চেষ্টা করছে । জোরারগঞ্জ থানার ওসি ইফতেখারের সহায়তায় মামলার অন্যতম আসামী লিপির স্বামী কামাল উদ্দিন বিদেশে পালিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করা হয় । বক্তারা অনতিবিলম্বে লিপি হত্যাকারীদের গ্রেফতার পূর্বক দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান। এসময় বক্তব্য রাখেন লিপির পিতা শেখ আলম, মা রহিমা আক্তার,চাচা মফিজুর রহমান,স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহ আলম, মঈনিয়া যুব ফোরাম নেতা আকবর হোসেন রুবেল, মাওলানা ইসমাইল সিরাজী,মাও.মশিউর রহমান,মাও.মনসুর, মাও. সরোয়ার, স্থানীয় হিঙ্গুলী মাদরাসার সহ সুপার মাও.বোরহান উদ্দিন, শিক্ষক নাও. জামাল উদ্দিন,মাও.জাফর উদ্দিন,মাও.সিরাজ উদ্দিন প্রমুখ। মানববন্ধনে গৃহবধূ লিপি হত্যাকান্ড ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন লিপির পিতা শেখ আলম।তিনি বলেন স্থানীয় মেম্বারের (ইউপি সদস্য) সহযোগিতায় একটি প্রভাবশালী মহল প্রতিনিয়ত তাঁকে মামলা তুলে নিতে নানা প্রলোভন দেখাচ্ছে । লিপির চাচা মফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, স্থানীয় ২ নং হিঙ্গুলী ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যম আজমনগর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দ্বীন মোহাম্মদ গত বেশ কিছুদিন ধরে মামলা তুলে নিতে লিপির পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ ছাড়া মামলা তুলে নেয়া শর্তে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ারও প্রস্তাবও দিচ্ছেন তিনি। অবশ্য এ বিষয়ে কথা বলতে ইউপি সদস্য দ্বীন মোহাম্মদের ব্যক্তিগত মোবাইলফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। লিপির আরেক চাচা মোহাম্মদ ইকবাল অভিযোগ করেন, ‘ঘটনার রাতে লিপির লাশ উদ্ধারের পর ঘটনার আলামত সংগ্রহ করে ওই ঘর তালাবদ্ধ করে দেয় পুলিশ। অথচ মেম্বার দ্বীন মোহাম্মদ তালা খুলে ঘরে ঢুকে ধোয়ামোছা করিয়ে খুনের সবরকম চিহ্ন নষ্ট করে ফেলে।’ এ সময় তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা লিপির নিকট আত্মীয় হয়েও ওই ঘরে ঢুকতে পারিনি। ঘটনার রাতে আমাদের পরিবারের লোকজন পৌঁছার আগেই পুুলিশ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। লিপির বাবা শেখ আলম অভিযোগ করেন, মামলার এক মাস পার হলেও এখনো পুলিশ কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি। আসামী ধরার পরিবর্তে উল্টো পুলিশ বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। উল্লেখ্য গত ১০ জুন রাতে মিরসরাইয়ে হিঙ্গুলী ইউনিয়নের মধ্যম আজমনগর গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে হত্যা করা হয় শিশু মরিয়মের মা হাসেনে আরা আক্তার লিপি (২৫) কে । হত্যার পর লিপির মরদেহ শোয়ার ঘরের সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেয় শশুরবাড়ীর লোকজন। পরের দিন ১১ জুন মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানায় স্বামী মো: কামাল উদ্দিন, শাশুড়ি হোসনেয়ারা বেগম ও শ্বশুর নূর মোহাম্মদকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নিহত গৃহবধূ হোসনে আরা লিপির বাবা শেখ আলম। ঘটনার একমাস অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনো কোন আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। উল্টো লিপির পরিবারকে মামলা আপোষ করতে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া ঘটনার পরপর আসামিদের সবাই আত্মগোপন করে আছে। এরই মধ্যে পুলিশের সহায়তায় লিপির স্বামী কামাল উদ্দিন বিদেশে পারি জমিয়েছে বলে অভিযোগ লিপির পরিবারের। এ ব্যাপারে জোরারগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার আবেদ আলী জানান, হোসনে আরা লিপি মারা যাওয়ার ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তার বাবা শেখ আলম। পুলিশের মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রেখেছি। আশা করছি, শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো। নিহত লিপির বাড়ি একই ইউনিয়নের মেহেদীনগর গ্রামে। চার বছর আগে প্রবাসী কামালের সাথে লিপির দাম্পত্য জীবন শুরু হয় ।
পিবিএ/জীবন মুছা/বাখ