পাঠ্যবই থেকে নাস্তিক্যবাদ ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষা বাতিল করুন : বাবুনগরী

রমজানুল মোবারকের পবিত্রতা রক্ষা করুন
আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী

খোরশেদ আলম শিমুল, পিবিএ,হাটহাজারী: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’র মহাসচিব ও দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার সহযোগী পরিচালক আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেছেন, ২০১৩ সালে শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে নবম-দশম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাস্টার্স শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে ডারউইনের ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। আমরা দেখেছি, এর আগে ২০১২ সাল পর্যন্ত একই বইসমূহে এই ‘বিবর্তন’ পাঠ ছিল না। এই শিক্ষার মাধ্যমে ৯২ ভাগ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের কোমলমতি লক্ষ লক্ষ মুসলিম শিক্ষার্থীর মননে মহান আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাসকে ঘোরতর সন্দিহান ও ভঙ্গুর করে নাস্তিক্যবাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করার শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।

জুনায়েদ বাবুনগরী’র ব্যক্তিগত খাদেম ইন’আমুল হাসান ফারুকী শুক্রবার (১২ জুলাই)সংবাদপত্রে দেওয় প্রদত্ত বিবৃতিতে পাঠ্যবইয়ে ‘বিবর্তনবাদ’ অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারের প্রতি অবিলম্বে ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস ও জাতি বিনাশী এই শিক্ষা বাতিল ও নিষিদ্ধের দাবি জানান। পাশাপাশি ‘বিবর্তনবাদ’ অন্তর্ভুক্তির সাথে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা এবং রাষ্ট্রীয় সকল কর্মকাণ্ড থেকে তাদেরকে দূরে রাখার কথাও বলেন।

তিনি বলেন, ‘বিবর্তন’-এর এই শিক্ষা চলতে থাকলে আগামী কয়েক প্রজন্ম পর সকলের অগোচরেই এই দেশ নাস্তিক অধ্যুষিত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। নামে মুসলমান থাকলেও চিন্তা চেতনায় সকলে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণা ও ভোগবাদে ডুবে থাকবে। আল্লাহ, রাসূল, ইসলাম নিয়ে কটূক্তি বাড়তে থাকবে। আলেম-উলামা, ধর্মীয় শিক্ষা ও ধর্মভীরু মানুষকে বিরক্তিকর ভাবতে শুরু করবে। ধর্মীয় বিয়ের বাধ্যবাধকতা মানবে না। বিয়ের নানাবিধ দায়বদ্ধতা ছাড়াই লিভটুগেদার ও অবাধ যৌনতার প্রতি আগ্রহী হবে। মদ, জুয়ার বিধিনিষেধ মানবে না। সমকামিতার বৈধতা দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নামবে।

আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী আরো বলেন, বিবর্তনবাদ মতে, সৃষ্টিকর্তার ধারণা ভিত্তিহীন। তাই বিবর্তনবাদ সৃষ্টিকর্তাকে স্বীকার করে না। পৃথিবীর প্রচলিত কোন ধর্মকেই স্বীকার করে না। এই বিবর্তনবাদের পাঠ দিতে গিয়ে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর সমাজ বিজ্ঞান বইয়ে বাংলাদেশের মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীদেরকে পড়ানো হচ্ছে- ‘ধর্ম মানুষের চিন্তা- চেতনার ফসল’ হিসেবে, নাউযুবিল্লাহ।
তিনি বলেন, নবম-দশম শ্রেণী থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত বিবর্তন পাঠের বিষয়গুলো যেকোন অভিভাবক পরখ করলে সহজেই দেখতে পাবেন যে, তার সন্তানকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানান সস্তা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বুঝানো হচ্ছে যে- “পৃথিবীর সবকিছুই প্রাকৃতি থেকে সৃষ্টি হয়ে বিবর্তনের মাধ্যমেই বর্তমান অবস্থায় এসেছে। মানুষ ও বানরের আদি পিতা একই ছিল। হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) এসব কিছু না। সৃষ্টিকর্তা ও ধর্মের ধারণা বিভিন্ন যুগের অশিক্ষিত কর্তৃত্বপরায়ণশীল মানুষের তৈরি মতবাদ। বিজ্ঞানের বিবর্তনের এই আবিষ্কার কেউ খণ্ডাতে পারবে না। ৯৯ পার্সেন্ট বিজ্ঞানী বিবর্তনবাদকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন”।

আল্লামা বাবুনগরী বলেন, দেশের সংবিধানে প্রতিটি নাগরিকের পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ হল- স্বাধীনভাবে ধর্মকর্ম পালন, ধর্মীয় শিক্ষার্জন, ধর্মীয় বিশ্বাস তথা ঈমান-আক্বিদা ধারণ সকলের নাগরিক অধিকার। সুতরাং ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে যে কোন হুমকি ও আগ্রাসী তৎপরতা থেকে রক্ষা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিরোধী বিবর্তনবাদ শিক্ষা দেওয়া সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় অধিকার রক্ষার বিধানের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, সংবিধান মতে যেখানে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হল- প্রতিটি নাগরিকের ধর্মীয় বিশ্বাসের চেতনাবোধের চর্চাকে নিরাপদ রাখা, সেখানে পাঠ্যবইয়ে ৯২% ছাত্র-ছাত্রীকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের বিরোধী বিষয় পড়তে শিক্ষাবোর্ড কী করে বাধ্য করার সুযোগ পেল- জাতিকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। একজন মুসলমানকে মানব জাতির উদ্ভব মা হাওয়া ও বাবা আদম (আ.) থেকে উৎপত্তি- আবশ্যিকভাবে এই বিশ্বাস ধারণ করতে হয়। তাহলে পাঠ্যবইয়ে মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মানবজাতি ও বানরের পূর্বপুরুষ একই ছিল- এমন ঈমান-আক্বিদা বিরোধী শিক্ষা দেওয়ার অধিকার সাংবিধানিকভাবে শিক্ষাবোর্ডের আছে কিনা- আমরা এই ব্যাখ্যাও জানতে চাই।

হেফাজত মহাসচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছেন। ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া প্রকৃত শিক্ষা হয় না, এমন প্রশংসনীয় বক্তব্যও বার বার দিয়েছেন। আলেম-উলামা ও মাদ্রাসা শিক্ষার প্রতি তাঁর আন্তরিকতার উল্লেখ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের আরো মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাগণও ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্বের উপর একই রকম বক্তব্য দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। এসব বক্তব্যের সাথে জাতীয় শিক্ষার পাঠ্যবইয়ে ঈমান-আক্বীদাবিরোধী ‘বিবর্তনবাদ’ শিক্ষার কোন মিল নেই। যেখানে আধুনিক বিজ্ঞান বাতিল করার কারণে এই বিবর্তনের পাঠ ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশ, কোরিয়া, রুমানিয়া, তুরস্কে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রে এই বাতিল বিষয় সংযোজন হয় কি করে?
পিবিএ/খোরশেদ/জেডআই

আরও পড়ুন...