“এরশাদের শেষ ঠিকানা রংপুরে”

পিবিএ,রংপুর: ‘এরশাদ হামার জাগার ছাওয়া। সারা জীবন তায় হামার ঘরের ছাওয়া হিসেবে কাছোত আছিলো। ভোট করছে। সোগ সময় লাঙ্গল নিয়্যা জিতিছে। এ্যালা মরার পর ক্যানে তায় হামার বাইরোত থাকপে। শুরুতে রংপুর যেমন তার ঠিকানা আছিলো, মরিয়াও যেন শেষ ঠিকানাটা রংপুরই হয়।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন এরশাদভক্ত তফেল উদ্দিন।
শতবর্ষী এই বৃদ্ধ কখনো টেলিভিশনের পর্দায় নতুবা পত্রিকা দেখে এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতেন। তার মতো হাজারো এরশাদভক্ত ও জাতীয় পার্টির দলীয় নেতা-কর্মী, সমর্থকদের চোখ এখন মিডিয়ার দিকে। সবার আকুতি রংপুরই হোক এরশাদের শেষ ঠিকানা।
বৃদ্ধ তফেল উদ্দিনের মতই আরেক এরশাদভক্ত সাজ্জাদ হোসেন। পেশায় তিনি রিকসাচালক। আক্ষেপ নিয়ে এই রিকসাচালক বলেন, ‘সারা জীবন এরশাদ সাইবোক ভোট দিনো। দুনিয়ার মানুষ জানে এরশাদ সাইব রংপুরের ছাওয়া।এ্যালা শোনোছি তায় মরি গেইলে নাকি রংপুরের বাইরোত তার কবর হইবে। মুই চাও রংপুরের মাটিতে তার জাগা হোউক।’
এরশাদ ভক্তদের মতো জাতীয় পার্টির তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরাও চাইছেন রংপুরেই তাদের নেতার সমাধি করা হোক। জাতীয় ছাত্র সমাজের জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার আল-আমিন সুমন বলেন,‘এরশাদ স্যারের পরিবারের বেশির ভাগই রংপুরে শায়িত আছেন।তার প্রতি রংপুরের মানুষের আলাদা ভালোবাসা রয়েছে। যা কোনদিনই শোধ করা যাবে না। তাই আমি মনে করি, স্যারের সমাধি রংপুরে করা হোক। রংপুরের মানুষ যেন তার সমাধিতে ফুলটুকো দিতে পারে।’
মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন বলেন, ‘নব্বইয়ে সরকার পতনের পর এরশাদ স্যার জেলে বন্দি হয়েছিলেন। রংপুর থেকেই তার মুক্তির আন্দোলন শুরু হয়েছিল। রংপুরের মানুষই তাকে ভোট দিয়ে জেল থেকে মুক্ত করেছেন। জাতীয় পার্টির জন্য এরশাদ স্যারের জন্য এ অঞ্চলের মানুষের কোন ঘাটতি নেই। তাই দলের সুন্দর ভবিষ্যৎতের জন্য রংপুরের মাটিতেই এরশাদ স্যারের সমাধি করা উচিত।’
জাতীয় পার্টিকে ধরে রাখতে হলে এরশাদের সমাধি রংপুরে করাটা বেশি জরুরী বলে মনছেন রংপুর সদর উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদার রহমান মিলন।তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের সমাধি তার গ্রাম টুঙ্গিপাড়াতে। সেখানকার মানুষরা বঙ্গবন্ধুকে যেমন আগলে রেখেছেন, আমরাও আমাদের নেতাকে আগলে রাখব। এরশাদ স্যারের সমাধি তার অছিয়তকৃত পল্লীনিবাসে করা হোক, এটা রংপুরের মানুষের দাবি।’
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, ‘স্যারের তার সমাধি কমপ্লেক্স তৈরির পল্লীনিবাসের কথা বলেছিলেন। একটা ডিজাইনও তিনি দেখিয়েছেন। আমরা বিষয়টি কেন্দ্রের সিনিয়র নেতাদেরও বলেছি। বৃহত্তর রংপুরের মানুষ চায়, স্যারের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী রংপুরেরই তার শেষ ঠিকানা হোক।’
এদিকে রংপুরের পল্লীনিবাস ভবনের কেয়ারটেকার বৃদ্ধ মোসলেম উদ্দিন বলেন, স্যার রংপুরে আসলে এই বাসাতে থাকতেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে তার মৃত্যুর পর এখানে সমাধি তৈরি করার কথা বলেছেন। জায়গাও দেখে দিয়েছেন। কিন্তু এখন যে কোথায় তার সমাধি হবে, তা আমার জানা নেই।
প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জানাজা চার স্থানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর শিকদার লোটন।
তিনি বলেছেন, ‘মোট চারটি স্থানে তাঁর (এরশাদ) জানাজার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে। প্রথমে ক্যান্টনমেন্টে, এরপর জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, তারপর রংপুর নেওয়া হবে। রংপুরের জানাজার পরদিন জাতীয় ঈদগাহে জানাজা শেষে সামরিক করবস্থানে দাফন করা হতে পারে। যদি পূর্বের সিদ্ধান্তে কোনো রদবদল না হয়। দাফনের আগে কোনো এক সময় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেওয়া হতে পারে।’ তবে রসিক মেয়র আজ সকালে বলেন স্যারের জানাজা মঙ্গলবার বাদ জহর রংপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে ।
পিবিএ/আল আমীন সুমন/জেআই

আরও পড়ুন...