গলায় যখন কষ্ট?

পিবিএ ডেস্কঃ ধরলে ছাড়ে না। উঠতে বসতে, খেতে শুতে, সবেতেই পথের কাঁটা। ফ্যাকাসে স্বরে কথা বলা যেন শাস্তি। গলার কষ্টের মূলে নানা অসুখের হাতছানি থাকতে পারে। লক্ষণ চিনিয়ে গলার সমস্যা সমাধানের উপায় জানালেন হোমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ।

গলা ব্যথাঃ গলা ব্যথা, খুসখুসে কাশি কিংবা গলার স্বরের হঠাৎ পরিবর্তন- এমন ঝামেলায় প্রায়ই সব বয়সিরা ভুক্তভোগী। নির্দিষ্ট সময় বা ঋতু মেনে এই সমস্যা আসে না, যখন তখন থাবা বসায়। গলার কষ্টে চটজলদি উপশম পাওয়া বেশ কঠিন। একবার শুরু হলে পুরোপুরি সারতে অনেক সময় নেয়। আড়ালে থাকতে পারে একাধিক অসুখও। তবে শুরুতেই হোমিওপ্যাথি ওষুধ ম্যাজিকের মতো কাজ করে গলার বিভিন্ন সমস্যায়।

বসা স্বরঃ গলার শত সমস্যার মধ্যে খুব বেশি হয় স্বর ভেঙে যাওয়া বা বসে যাওয়া। বাচ্চা, বড় সকলেরই ঠান্ডা লেগে অথবা হঠাৎ জোরে চিৎকার করলে প্রায়ই এমন হয়ে থাকে। এমন হলে প্রথম অবস্থায় উচিত দিনে দু’বার নুনজলে গার্গল করা। তিন চার দিন করতে হবে।

লুকিয়ে টিউমারঃ ভাঙা বা বসে যাওয়া স্বর সাত থেক ১০ দিনের বেশি থাকলে ও ওষুধ খাওয়ার পরও গলা ঠিক না হলে ব্যাপারটা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এক্ষেত্রে ভোকাল কর্ডে টিউমার বা ইডিমাও হতে পারে। তখন অবহেলা না করে ইএনটি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। গলায় টিউমারের চিকিৎসা দ্রুত শুরু করলে একদম ঠিক হয়ে যায়। টিউমার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি অনবদ্য। চিকিৎসকের পারমর্শ মতো কয়েক মাস টানা ওষুধ খেলে তবেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। দেরি করে চিকিৎসা শুরু করলে টিউমার, ক্যানসারে পরিণত হতে পারে।

অ্যালার্জির জেরঃ হঠাৎ করে গলার ভিতরে চুলকাতে শুরু করলে ও সঙ্গে শুকনো কাশি হলে তার কারণ হতে পারে অ্যালার্জিও। এমন হলে গলায় খুব অস্বস্তি হতে থাকে, মনে হয় যেন গলায় কী একটা আটকে রয়েছে। লালা জমে থাকে গলার কাছে। ফলে কথা বলতে, কিছু খেতে খুব কষ্ট হয়। এমন লক্ষণ থাকলে প্রথম বুঝতে হবে অ্যালার্জি ঠিক কী থেকে হচ্ছে। সেই জিনিস সর্বপ্রথম ত্যাগ করা উচিত। দূষণ থেকেও এই ধরনের অ্যালার্জি হয়। সেক্ষেত্রে মাস্ক ব্যাবহার করা জরুরি।

গলায় ঘাঃ অনেক সময় অ্যালার্জির কারণে গলায় ঘা হতে পারে। বিশেষ করে কোনও নির্দিষ্ট খাবার থেকে গলায় অ্যালার্জি হলে তা দীর্ঘ দিন থাকতে থাকতে গলায় ঘা হয়ে যায়। বিশেষ করে ফুড অ্যালার্জি থেকে এমন সমস্যা হয়। অনেক সময় খুব গরম খাবার, চা, কফি খেলে তা থেকে গলা পুড়ে গিয়ে ঘায়ের আকার নেয়। ফলে খাবার গিলতে, কথা বলতে কষ্ট হয়। খুব ঠান্ডা খাবার খেলেও তা থেকে গলা ফুলে ঘা হতে পারে। এছাড়া ভিটামিনের অভাব ও অতিরিক্ত ধূমপান এমন সমস্যার একটি অন্যতম কারণ।

বলতে বলতে স্বরভঙ্গঃ অনেক সময় আবার দেখা যায়, যাঁদের কাজের প্রয়োজনে অতিরিক্ত কথা বলতে হয়, বিশেষ করে শিক্ষক শিক্ষিকা, রাজনৈতিক নেতা, সংগীত শিল্পী, এঁদের কথা বলতে বলতে হঠাৎ গলার স্বর আটকে যায় বা স্বর ভেঙে যায়।

গলার শত্রু সিগারেটঃ যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের গলার স্বর খুব সহজেই নষ্ট হয়। সিগারেটের নিকোটিন স্বরযন্ত্রের ক্ষতি করে। ফলে গলার স্বর ফ্যাসফেসে হয়ে যায়। গলায় সংক্রমণের প্রবণতা বাড়ে। প্রায়ই গলা ধরে যায়। এঁদের সবার আগে প্রয়োজন ধূমপান ত্যাগ করা।

টনসিলের যমঃ টনসিল সব বয়সিদেরই হয়। ভাল হতে অনেক সময়ও নেয়। গলায় মারাত্মক ব্যথা, খেতে কষ্ট, গলা ফুলে যাওয়ার লক্ষণ নিয়ে এই টনসিলের উপস্থিতি। সমস্যা হঠাৎই ধরা পড়ে। টনসিলের এমার্জেন্সিতে ভরসাযোগ্য হোমিওপ্যাথি। সব বয়সিরাই ভরসা করতে পারেন। ক্রনিক টনসিলের সমস্যায় টনসিল বড় হয়ে গলা ফুলে যায়। ঠিক হতে অনেক সময় লাগে। রোগীকে ঠান্ডা খাওয়া, ঠান্ডা পানিতে গোসল, ঠান্ডা লাগানোর থেকে দূরে রাখতে হয়। তবে টনসিলের চিকিৎসায় চিকিৎসকের পরামর্শ দ্রুত নেওয়া উচিত। কারণ টনসিল ঠিকমতো না সারিয়ে তুললে ভবিষ্যতে তা থেকে হার্টের সমস্যা হতে পারে।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...