মোবাইল চার্জে রেখে কথা বলার সময় বিস্ফোরণে ‍যুবতির মৃত্যু

ফাইল ছবি

পিবিএ, ডেস্ক: ভারতের দুর্গাপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডর দেশবন্ধুনগরে রিয়া বন্দোপাধ্যায় (২৩) নামে এক যুবতি মোবাইলে চার্জ দেওয়া অবস্থায় ফোনে কথা বলতে গিয়ে শর্ট সার্কিট হয়ে বিস্ফোরণ ঘটে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এলাকাবাসী দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শিউরে উঠেছেন , নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ঘটে দুর্ঘটনাটি। ঘরে সেই সময় একাই ছিলেন রিয়া। নিজের মোবাইল ফোনটির ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ায় তা চার্জে বসিয়েছিলেন তিনি। ওই সময়ই একটি ফোন আসে। চার্জে থাকা অবস্থাতেই ফোন কানে কথা বলতে থাকেন রিয়া। আচমকাই সেই ফোনে বিস্ফোরণ ঘটে। চিৎকার করতে করতে জানলার কাছে এসে প্রতিবেশীদের সাহায্য চান যুবতী। রিয়ার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজনরা ছুটে আসেন। ঘরে ঢুকে দেখেন প্রায় গোটা ঘরই আগুনে জ্বলছে। বিছানা পুড়ে গিয়েছে। ঘরের ইলেকট্রিক বোর্ডেও আগুন লেগেছে। আর ঘরজুড়ে তীব্র দহন যন্ত্রণায় চিৎকার করে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন রিয়া। রিয়ার শরীরের উপরের অংশ বিস্ফোরণের ফলে সম্পূর্ণ ঝলসে যায়। পরনের শাড়িও জ্বলে ছাই হয়ে গিয়েছে ততক্ষণে।

প্রতিবেশীদের দাবি, রিয়ার এক মাথা চুলও আগুনে পুড়ে যায়। ওই অবস্থায় রিয়াকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। খবর দেওয়া হয় পুলিশ ও দমকলকে। রিয়ার মা ছায়া বন্দোপাধ্যায় অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী। বাবা শ্যামল বন্দোপাধ্যায় দুর্গাপুরের এক সিমেন্ট কারখানার ঠিকা কর্মী। একমাত্র বোন কলেজে পড়েন। দুর্ঘটনার সময় কেউই বাড়িতে ছিলেন না। সম্প্রতি সরকারি নার্সিং কলেজে সুযোগ পেয়েছিলেন রিয়া। এমনকী তাঁর বিয়ের জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বাবা-মা।

ঘটনার সময় মা ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। তিনি ফিরলেই তাঁর সঙ্গে দুর্গাপুর নগর নিগমে রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেট আনতে যেতেন রিয়া। তার জন্য শাড়ি পরে তৈরিও হয়েছিলেন। সেই সময়ই ঘটে দুর্ঘটনা। বিস্ফোরণের জেরে প্রায় নব্বই শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় রিয়াকে হাসপাতালে ভরতি করা হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের সুপার দেবব্রত দাস বলেন, “অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আসার পর মৃত্যু হয় ওই যুবতীর। শরীরের নব্বই শতাংশ পুড়ে যাওয়ার ফলেই হৃদরোগে মৃত্যু হয় বলেই প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।” ঘটনায় শোকস্তব্ধ রিয়ার পরিবার।

মা ছবি বন্দোপাধ্যায় কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি কিছু বুঝতেই পারিনি। প্রতিবেশীরাই বলল মেয়ের গায়ে আগুন লেগেছে। কিচ্ছুক্ষণের জন্য টাকা তুলতে বাইরে বের হয়েছিলাম। তার মধ্যেই এই দুর্ঘটনা ঘটে গেল। আমার ফুটফুটে মেয়েটা জ্বলে গেল।” দমকলের একটি ইঞ্জিন আধঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুর্গাপুরের দমকলের ওসি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “শর্ট সার্কিট থেকেই আগুন লেগেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিস্তারিত তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...