আজ সোমবার বঙ্গভবনে শপথ নেবে নতুন সরকার

পিবিএ,ঢাকা: আজ সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে শপথ নেবে আওয়ামী লীগের নতুন সরকার। গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে ৪৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। চতুর্থবারের মত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলা শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি জনপ্রশাসন এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখছেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় এবার তার সঙ্গী হচ্ছেন ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রী। গতবার তার সরকার ছিল সব মিলিয়ে ৪৮ সদস্যের।

পুরনো দপ্তরে থেকে যাচ্ছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দুই টেকনোক্র্যাট ইয়াফেস ওসমান এবং মোস্তাফা জব্বারই থাকছেন।

সিলেট-১ আসনে এবার আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়ী হন তার ভাই এ কে আবদুল মোমেন। জাতিসংঘে কিছুদিন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মোমেন প্রথমবার এমপি হয়েই পেয়ে গেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ। গত মেয়াদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর মতই পুরনো এবং ‘সফল’ অনেকের জায়গা হয়নি নতুন মন্ত্রিসভায়।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মত প্রবীণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের ছাড়াই সরকার গড়েছেন শেখ হাসিনা।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন নরসিংদী-৪ আসনের এমপি নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, যিনি গত সংসদে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে থাকছেন ঢাকা-১৫ আসনের সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার।

আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক টিপু মুনশি গত সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বড় দায়িত্ব তার হাতে তুলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে মন্ত্রিত্বে ফিরেছেন। পেশায় কৃষিবিদ রাজ্জাক ২০০৯-১৪ মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকারের খাদ্যমন্ত্রী ছিলেন।

গত সরকারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক পদোন্নতি পেয়ে একই দপ্তরের মন্ত্রী হয়েছেন নতুন সরকারে। তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পাচ্ছেন জামালপুর-৪ আসনের সাংসদ কল্যাণ মুরাদ হাসানকে।

নতুন শিক্ষামন্ত্রী হয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, যিনি ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে। উপমন্ত্রী হিসেবে তিনি সঙ্গে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে এসেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম।

নব্বই দশকের পর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদকদেরই দেখে আসছিল বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের জুলাই মাসে সেই রেওয়াজ পাল্টে শেখ হাসিনা মন্ত্রী করেছিলেন তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে।

এবার স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব শেখ হাসিনা দিয়েছেন কুমিল্লার সাংসদ তাজুল ইসলামের হাতে, যিনি গত সংসদে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। তার সঙ্গে প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন যশোর-৫ আসনের সাংসদ স্বপন ভট্টাচার্য।
মহাজোটে আওয়ামী লীগের বড় শরিক জাতীয় পার্টি এবার সরকারে না এসে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রিসভার নাম ঘোষণার পর দেখা গেল, ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, এবং জাতীয় পার্টি আনোয়ার হোসেন (জেপি) মঞ্জুও এবার সরকারের বাইরে থাকছেন।

মেননের জায়গায় নতুন সরকারে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হয়েছেন নুরুজ্জামান আহমেদ। ময়মনসিংহ-২ আসনের সংসদ সদস্য শরীফ আহমেদ হয়েছেন নতুন প্রতিমন্ত্রী।

নতুন তথ্যমন্ত্রী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে নতুন কাউকে মন্ত্রী করেননি শেখ হাসিনা। সাবেক সেনা কর্মকর্তা জাহিদ ফারুককে এ দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীমকে উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন তিনি। আনিসুল ইসলাম মাহমুদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ে এবার মন্ত্রী হয়েছেন মৌলভীবাজারের আওয়ামী লীগ নেতা শাহাব উদ্দিন। তার সঙ্গে উপমন্ত্রী খুলনার মেয়র তালুকদার খালেকের স্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে এনেছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচাতো বোনোর স্বামী মেহেরপুরের এমপি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনকে। নৌ মন্ত্রণালয়ে এবার প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী; নতুন কোনো মন্ত্রী এ দপ্তরে দেওয়া হয়নি।

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকেও এবার সরকারে রাখা হয়নি। নতুন সরকারে ওই দায়িত্ব পেয়েছেন নওগাঁ-১ আসনের এমপি সাধন চন্দ্র মজুমদার।

জরুরি অবস্থার সময় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতি আসাদুজ্জামান নূরকে আওয়ামী লীগের গত সরকারে সংস্কৃতিমন্ত্রী করেছিলেন শেখ হাসিনা। দেশ টেলিভিশনের অন্যতম মালিক নূর এবার সরকারের বাইরে থাকছেন। নতুন কাউকে মন্ত্রী না করে শেখ হাসিনা ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কে এম খালিদকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন।

গাজীপুরের প্রয়াত নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছেলে জাহিদ আহসান রাসেলকে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। এ দপ্তরে গত সরকারের প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এবার বাদ পড়েছেন।

আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ টেকনোক্র্যাট হিসাবে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন এবার। শেখ হাসিনার গত সরকারে এ দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ নেতা মতিউর রহমান। তিনিও ছিলেন টেকনোক্র্যাট।

গত সরকারের জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আযম, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ এবার সরকারে জায়গা পাননি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালেয়ের উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়কেও কাফেলায় রাখেননি শেখ হাসিনা।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামি এক সাবেক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে আলোচনায় থাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জায়গায় মন্ত্রী হিসেবে আসছেন সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মালিক ডা. এনামুর রহমান।

ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের বদলে গাজী গ্রুপের মালিক নারায়ণগঞ্জের সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজী বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। পঞ্চগড়ের সাংসদ সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নুরুল ইসলাম সুজনকে এবার মুজিবুল হকের জায়গায় রেলমন্ত্রীর দায়িত্বে আনা হচ্ছে।

শিক্ষামন্ত্রীর মত প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারও বাদ পড়েছেন। কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাংসদ জাকির হোসেনকে এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

পুরনো মন্ত্রীদের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নারায়ণ চন্দ্র চন্দও থাকছেন না। এ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হয়ে আসছেন নেত্রকোণা-২ এর সাংসদ আশরাফ আলী খান খসরু।

এ কে এম শাহজাহান কামালের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে নতুন মন্ত্রী না দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত মাওলানা আসাদ আলীর ছেলে মাহবুব আলীকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।

অন্যদিকে গত সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং এবার পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণ মন্ত্রী হয়েছেন।
যোগ বিয়োগের অংকে শেখ হাসিনার এবারের মন্ত্রিসভায় নতুন মন্ত্রী হয়েছেন ১২ জন, পুরনোদের মধ্যে ২১ জন বাদ পড়েছেন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া ১৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই মন্ত্রিসভায় এসেছেন প্রথমবার।

পুরনোদের মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে আগের দায়িত্বেই রেখেছেন শেখ হাসিনা।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া খুলনার মুন্নুজান সুফিয়ান ২০০৯ সালের সরকারেও একই দায়িত্বে ছিলেন। গত সরকারে শ্রম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু।

নতুন প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে সিলেটের সাংসদ ইমরান আহমাদ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। গত সরকারে এ দপ্তরের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ছিলেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। নির্বাচনের আগে টেকনোক্র্যাট চার মন্ত্রী পদত্যাগ করলে খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...