নিহত স্কুল ছাত্রের বাড়িতে আগুন দিয়ে সবাইকে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা

পিবিএ,পাবনা: পাবনায় চাঞ্চল্যকর স্কুল ছাত্র অনি বাবু(১৪) হত্যা মামলার বাদি ও অনি বাবুর পিতা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে বাড়িতে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে সপরিবারের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে। পাবনা সদর উপজেলার দুবলিয়া গ্রামে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে। দুর্বৃত্তরা নিহত স্কুল ছাত্র অনি বাবুর পিতা ব্যবসায়ি রবিউল ইসলাম প্রামানিকের বাড়ির দরজা বাইরে থেকে সিটকিনি লাগিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়। ঘরের বারান্দায় রাখা ৪টি মোটর সাইকেলও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে বাড়ির সবাই ভাগ্যক্রমে প্রাণে বেঁচে গেছেন।

গত বছরের ৩০ নভেম্বর ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম প্রামানিকের ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী অনিবাবু(১৪) দুবৃর্ত্তদের হাতে খুন হয়। ওই হত্যা মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। এ হত্যাকান্ডর রহস্য উদঘাটনের জন্য নিহতের পরিবার মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আবেদন নিবেদন করে আসছিলেন। এর জের ধরেই এ ঘটনা ঘটেছে বলে রবিউল ইসলামের পরিবার আশংকা করছেন। পুলিশও বলছে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে।
নিহত অনি বাবুর বড় ভাই আশিক মাহমুদ অভি জানান, বৃহস্পতিবার রাতে রাতের খাবার শেষে তিনি এবং বাবা-মা ও আরেক ভাই তাদের সেমি পাকা ঘরে যে যার কক্ষে ঘুমিয়ে যান। রাত দেড়টার দিকে তিনি প্রথমে আগুনের তাপ অনুভব করেন। এ সময় তিনি দেখেন তাদের ঘরের চারদিকে ও ঘরের চালায় আগুন ধরে গেছে। এ সময় তিনি চিৎকার করে তার বাব-মা ও ছোট ভাইকে ডেকে তোলেন। কিন্তু তারা ঘরের দরজা খুলতে গিয়ে দেখেন বাইরে থেকে কড়া আটকানো। তবে ভাগ্যক্রমে মাঝের রুমে কড়া না থাকায় সেটি দিয়ে তারা বাইরে আসতে সক্ষম হন এবং প্রাণে বেঁচে যান।

আশিক মাহমুদ অভি আরো জানান, বাইরে এসে তারা দেখেন বারান্দায় রাখা তাদের পরিবারের ৪টি মোটর সাইকেলেও দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। এ সময় তাদের চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসেন। তারা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তার আগেই ঘরে কিছু অংশ এবং আসবাবপত্র পুড়ে যায়। এ সময় ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলেও তারা ঘটনাস্থলে আসেনি বলে অভি অভিযোগ করেন।দুবলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মনোরঞ্জন শীল জানান, তিনি খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আতাইকুলা থানার ওসি(তদন্ত) কামরুজ্জামান জানান, এটি পূর্বশত্রুতার জের ধরে বা রবিউল ইসলাম প্রামানিক এর ছেলে অনি বাবু হত্যা মামলার সাথে জড়িত কারো দ্বারাও সংঘটিত হতে পারে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে তিনি জানান।

নিহত স্কুল ছাত্র অনিবাবুর বাবা ব্যবসায়ি রবিউল ইসলাম প্রামানিক জানান, তার ছেলে অনিবাবু হত্যা মামলার তদন্ত রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করে মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। অনির সহপাঠী ও এলাকাবাসীও মামলা ধামাচাপা চেষ্টার প্রতিবাদে এবং এ হত্যা মামলা পিবিআই ( পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)তে স্থানান্তর করে পূণ:তদন্ত দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তারা এ দাবিতে একাধিকবার মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন।ব্যবসায়ি রবিউল ইসলাম প্রামানিক জানান, পুলিশ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শুধু ১৪ বছর বয়সী জয়কে আসামি দেখিয়ে চার্জশীট দিয়েছে। তিনি বলেন, এ হত্যাকান্ডের সাথে জয়ের পরিবারের বড় সদস্যরাও কোনভাবে জড়িত। কিন্তু পুলিশ এ ব্যাপারে খোঁজ নেয়নি।

তিনি মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের জন্য পাবনা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনও করেন বলে জানান। তিনি জানান, ঢাকায় লেখাপড়া করা তার বড় ছেলে আশিক মাহমুদ অভি সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে যাওয়ার এবং পুলিশের আইজিপি এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করার কথা জানান। অভি মাত্র দু’দিন আগে বাড়ি এসেছে। সে বাড়ি আসার পরদিনই তাদের সপরিবারে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হল। ছেলে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করাই তার জীবনের জন্য কাল হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি জানান, এ ঘটনা ছাড়া তার এমন কোন শত্রু নেই যারা তাকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করবে। তিনি বলেন- সন্তানহারা পিতা হিসেবে সঠিক বিচার চাওয়াই কি আমার অপরাধ? এজন্য আমাকে সপরিবারে পুড়িয়ে মারা হবে? অনিবাবু হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হলে যারা ফেঁসে যাবে তারাই এমন কাজ করেছে বলে তিনি দাবি করেন।

প্রসঙ্গত: ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর নিখোঁজের চারদিন পর পাবনার দুবলিয়া গ্রামের একটি হলুদ ক্ষেতে মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় জেএসসি পরীক্ষার্থী অনি বাবুর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত অনিবাবু (১৪) দুবলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী রবিউল প্রামানিকের ছেলে ও দুবলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্র ছিল।ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে মরদেহ উদ্ধারের দিনই অনি বাবুর দুই সহপাঠীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ আটক করেছিল। এরা হলো ফারাতপুর গ্রামের জিয়াউর রহমানের ছেলে জয় (১৪)এবং একই গ্রামের মুকুল হোসেনের ছেলে সাব্বির(২০)। পরে শুধুমাত্র জয়কে আসামি করে পুলিশ চার্জশিট প্রদান করে। অনিবাবুর বাবা ও গ্রামবাসী ও তার সহপাঠীরা এ চার্জশীট প্রত্যাখ্যান করে মামলা পিবিআইতে স্থানান্তরের দাবি জানিয়ে আসছেন।

পিবিএ/মাসুদ রানা/বিএইচ

আরও পড়ুন...