পিবিএ,ফেনী:পবিত্র ঈদুল আযহা’র দ্বিতীয় দিন শিক্ষা ও চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্যের সমৃদ্ধকরণ, বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের জীনপুল সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন এবং ইকোট্যুরিজমের মাধ্যমে ফেনীর কাজীরবাগে গড়ে তোলা দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্কটি উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ফেনীবাসীর মাঝে এই ঈদে বিনোদনের মাত্রা আরো এক ধাপ বাড়িয়ে দিল।
মঙ্গলবার দুপুরে ইকোপার্কটি উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধন উপলক্ষে পার্কের অভ্যন্তরে সামাজিক বন-বিভাগ ফেনীর আয়োজনে এক সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সুধী সমাবেশে জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজজামানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বিকম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- সামাজিক বনবিভাগ, ফেনীর নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম কায়চার।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন-জালানী মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পারভীন আক্তার, নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির সহধর্মীনি নুরজাহান বেগম নাসরিন, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জোসনা আরা জুসি, বনবিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা তপন দেবনাথ, কাজিরবাগ ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকে কাজী বুলবুল আহমেদ সোহাগ, আনন্দপুর ইউপি চেয়ারম্যান হারুন মজুমদার, পৌর কাউন্সিলর বাহার উদ্দিন বাহারসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।
জেলার সামাজিক বনবিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ফেনী শহরের অদূরে সদর উপজেলার কাজীরবাগে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে বনবিভাগের মালিকানাধীন তিন একর জমিতে এই ইকোপার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। এই ইকোপার্কে রয়েছে বিরল নাগেশ্বর, কালিমেন্দা, যজ্ঞ ডুমুর, হরতকি, হরিণা, আগর, অর্জুন, নাগলিঙ্গম, রক্ত চন্দন, রাধা চূড়া, মহুয়া, হিজল, লটকন, কদবেল, লং, করমচা, বেলম্বু ও দারুচিনিসহ বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় ১৭২ প্রজাতির বনজ, ফলজ ও ভেষজ বৃক্ষ।
হরিণ, বানর, খরগোশ, ময়ুর, টিয়া, তোতা সানকোনিয়র, ব্লু- এন্ড গোল্ড মেকাউ, স্কারনেট মেকাউ, আফ্রিকার গ্রে প্যারোট পাখি এবং বিলুপ্ত ও বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণের জন্য মিনি বোটানিক্যাল গার্ডেন, সুন্দরবনের গেওয়া ও গরানসহ ম্যানগ্রোভ প্রজাতির মডেল বনায়ন। এছাড়া চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে শোভাবর্ধক নানা বৃক্ষরাজি ও মনোরম ফুলের বাগান, নয়নাভিরাম পানির ফোয়ারা, শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন রাইডার। ট্রেন, প্যাডেল বোট ও নাগরদোলাসহ আরো কয়েকটি রাইড বসানোর চলছে প্রক্রিয়া।
পুকুরে রয়েছে একুরিয়ামজাত বাহারি নানা রঙ্গের মাছ ও জলজ উদ্ভিদ।প্রকৃতিপ্রেমী পরিবেশ বোদ্ধাদের মতে, নানান রকমের গাছগাছালি, পাখপাখালি ও মনোরম ফুলের বাগানের সমন্বয়ে নান্দনিকভাবে গড়ে ওঠা এই ইকোপার্ক এরইমধ্যে নজর কেড়েছে ফেনীবাসীর। বিশেষ করে অবসরে চিত্তবিনোদনের জন্য জেলা শহরে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় সরকারিভাবে শহরের অদূরে গড়ে ওঠা এই ইকোপার্কের অনন্য সৌন্দর্য এবং মনোমুগ্ধকর।
প্রাকৃতিক ও জীববৈচিত্রময় নান্দনিক পরিবেশ শহর ও শহরের বাইরের লোকজনদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করবে। পবিত্র ঈদুল আযহার দ্বিতীয় দিনে নান্দনিক ইকোপার্কটি উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ফেনীবাসীর ঈদ-আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ হল।
এছাড়া পর্যটক এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনে আসা লোকজনের থাকা-খাওয়ার জন্যও এখানে রয়েছে সুব্যবস্থা। চারদিকের দৃশ্য অবলোকনের জন্য রয়েছে একটি ওয়াচ-টাওয়ার।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ইকোপার্ক শিক্ষা ও চিত্তবিনোদনের পাশাপাশি উপকূলীয় এই জেলায় জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি, বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের জিনপুল সংরক্ষণ, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন, সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
পিবিএ/বাখ