পরিবারসহ মরে যেতে চাচ্ছে গার্গী ব্যানার্জি

পিবিএ ডেস্ক: জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানাল পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের এক পরিবার।বারাসাতের নবপল্লী এলাকার বাসিন্দা গার্গী ব্যানার্জি। তার বয়স পঞ্চাশের মতো হবে। সম্প্রতি জেলাশাসককে চিঠি লিখে জানান, তিনি এমএ’র পাশাপাশি পিএইচডি করেছেন। একসময় চাকরি করলেও বর্তমানে তার কোনো চাকরি নেই। তার বাবা কমল ব্যানার্জির বয়স প্রায় ৮২। মা গীতা ব্যানার্জির বয়সও প্রায় ৭৬ বছর। বাবার বুকে লাগানো পেসমেকার। পাশেই বসা স্ত্রীর কিডনির সমস্যায় ফুলে আছে দুই পা। প্রতিমা অ্যাপার্টমেন্টের তিনতলায় এক কামরার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তারা। তিন জনের পরিবার সম্পূর্ণ রোজগারহীন। অন্তত বিশ দিন ভাতের মুখে দেখেননি কেউ।

গার্গী দেবী বলেন, তার শরীর ভালো না থাকায় প্রায় পাঁচ-ছয় বছর চূড়ান্ত অভাব অনটনের মধ্যে বেঁচে আছেন তারা। একপ্রকার বিনা চিকিৎসায় অনাহারে দিন কাটছে তাদের। স্থানীয় কয়েকজন প্রায় তিন বছর তাদের নানাভাবে সাহায্য করলেও বর্তমানে তারাও আর পরিস্থিতির কারণে সেভাবে পাশে দাঁড়াতে পারছেন না। তাই বাধ্য হয়েই এখন স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন করেছেন তারা।

বিদ্যুতের বিল দিতে না পারায় আট মাস আলো-পাখা বন্ধ ছিল। গার্গীর কথায়, এক বার তো বারাসতের ১২ নম্বর রেলগেটে দাঁড়িয়ে ভেবেছিলাম, ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে নিজেকে শেষ করে দিই। কিন্তু পারিনি। বেঁচে থাকার আর কোনো উপায় না পেয়েই জেলাশাসকের কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছি ৩০ জুলাই।

চোখের জল সামলে বৃদ্ধ বাবা বলেন, আমাদের চাকরিতে পেনশন ছিল না। চাকরির শেষে যা টাকা-পয়সা পেয়েছিলাম, তা মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো আর বিয়ে দিতেই খরচ হয়ে গেছে। অল্প কিছু টাকা দিয়ে থাকার জন্য এই ফ্ল্যাটটা কিনেছিলাম। এখন একটা পয়সা নেই হাতে। বাধ্য হয়ে ভিক্ষে করতে হচ্ছে। প্রতিবেশী শ্যামল সরকারের সাহায্যের জন্য কোনো ভাবে বেঁচে আছি।

প্রতিবেশী শ্যামল বলেন, এক দিন দেখি, এক মহিলা সকালে বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে হাত পাতছেন। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, টানা কুড়ি দিন ভাত খাননি তারা। শুনে খুব কষ্ট হল। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু চাল-ডালের ব্যাবস্থা করি। কিন্তু একার পক্ষে সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। অথচ আমাদের সকলেরই উচিত এই অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানো।

ওই আবেদনে গার্গী দেবী লিখেছেন, যদি তাঁকে একটি কাজেরও ব্যবস্থা করে দেওয়া যায় তাহলে তারা নতুনভাবে বাঁচার আশা পেতে পারেন। একই পরিবারের তিনজনের স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদনকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বারাসতে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও একটি সমাজসেবী সংগঠনের কর্ণধার শ্যামল সরকার জানান, কোনো সহৃদয় ব্যক্তি ও প্রশাসন এই পরিবারের পাশে এসে দাঁড়ালে হয়তো এই পরিবারকে বাঁচানো সম্ভব হবে।

বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান সুনীল মুখোপাধ্যায় বিষয়টি শুনে অসহায় পরিবারটিকে পৌরসভায় গিয়ে দেখা করতে বলেছেন। সুনীল বলেন, বার্ধক্য ভাতার পাশাপাশি তাঁদের জন্য খাবারের ব্যাবস্থাও করে দেওয়া হবে।সূত্র: এই সময়

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...