টেস্ট ক্রিকেটের প্রথম পরিবর্তীত ক্রিকেটার লাবুসানে

পিবিএ,স্পোর্টস ডেস্কঃ লর্ডস টেস্টের শেষদিন মাঠে নামতে পারলেন না স্টিভ স্মিথ। ইংল্যান্ডের পেসার জোফ্রা আর্চারের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে শনিবার মাঠেই লুটিয়ে পড়েছিলেন তিনি। এরপর মাঠের বাইরে খানিক বিশ্রাম নিয়ে ফের ব্যাট করতে নামেন অজি তারকা। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে মাত্র রান দূরে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্মিথ। কিন্তু চোটের গুরুত্ব বিচার করে চিকিৎসকদের পরামর্শেই লর্ডস টেস্টের পঞ্চম দিন মাঠে না নামার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

নতুন প্রচলিত ‘কনকাশন’ নিয়মে স্মিথের পরিবর্ত হিসেবে দলে ঢোকেন মারনাস লাবুসানে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং- সবকিছুই করতে পারবেন তিনি। আইসিসি’র নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ‘কনকাশন’ ক্রিকেটারের পরিবর্তে নতুন ক্রিকেটার নিতে পারবে সংশ্লিষ্ট দল। কোনও ক্রিকেটারের মাথায় আঘাত লাগলে তাঁর বদলি যাতে পাওয়া যায়, তা নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত আইসিসি তা মেনে নেয়। গত ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে এই নিয়ম। সেই সুবাদে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম পরিবর্ত ক্রিকেটার হয়ে গেলেন মারনাস লাবুসানে।

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া সূত্রে জানা যায়, হেডিংলেতে অ্যাসেজ সিরিজের তৃতীয় টেস্টে স্মিথের খেলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট। তার আগে আগামী কয়েকদিন তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

শনিবার মধ্যাহ্নভোজের পরে জোফ্রা আর্চারের একটি বাউন্সার স্মিথের মাথার পিছন দিকে আছড়ে পড়ে। তৎক্ষনাৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন অজি ব্যাটসম্যানটি। মুহূর্তে ফিরে এসেছিল ফিল হিউজেসের স্মৃতি। অস্ট্রেলিয়া দলের ফিজিও দ্রুত দৌড়ে এসে স্মিথের শুশ্রুষা করেন। বেশ কিছুক্ষণ মাটিতে শুয়ে থাকার পর ফিজিওর কাঁধে ভর দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন স্মিথ। গুরুতর চোট পেয়েও দলের স্বার্থে মাত্র ৪৫ মিনিট পর ফের ব্যাট করতে নেমে আরও ১২ রান যোগ করেন তিনি। তবে মাত্র আট রানের জন্য হাতছাড়া হয় সেঞ্চুরি। ব্যক্তিগত ৯২ রানের মাথায় ক্রিস ওকসের বলে এলবিডব্লু হন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন এই অধিনায়ক। শনিবার ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে আর ফিল্ডিং করতে নামেননি স্মিথ। তাঁর বদলে ফিল্ডিং করছিলেন ল্যাবুশেন। রাতে স্মিথকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। রবিবার ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তরফে স্মিথের ‘লেট কনকাশন’ এর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এদিকে, স্টিভ স্মিথ মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পরও বোলার জোফ্রা আর্চারের পরোয়াহীন মানসিকতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে ক্রিকেট মহলে। অজি তারকার দুর্বিসহ অবস্থা দেখেও তাঁর পাশে দাঁড়াননি ইংল্যান্ডের তারকা পেসারটি। এই প্রসঙ্গে পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার শোয়েব আখতার টুইটারে লেখেন, ‘বাউন্সার ক্রিকেট খেলার একটি অংশ। কিন্তু যখনই কোনও বাউন্সারে ব্যাটসম্যান আঘাত পান, তখন সৌজন্যের খাতিরে হলেও বোলারের উচিত ব্যাটসম্যানের পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। এমন পরিস্থিতে আমি সবসময় ব্যাটসম্যানের কাছে সবার আগে দৌড়ে যেতাম। কিন্তু শনিবার দেখলাম স্মিথ আঘাত পাওয়ার পর বোলার জোফ্রা আর্চার তাঁর কাছে না গিয়ে দূরে চলে গেল! ওর এমন অখেলোয়াড়োচিত আচরণ আমাকে অবাক করেছে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় সাধারণ ক্রিকেট অনুরাগীরাও নিন্দায় সরব হয়েছেন জোফ্রা আর্চারের। ঘাড়ে আঘাত লাগার আগে ওই ওভারের আরও দুটি বাউন্সার স্মিথের কপালে ও গ্লাভসে লাগে। বোঝাই যাচ্ছিল দুরন্ত ফর্মে থাকা অজি তারকাকে থামাতে শর্ট বলকেই প্রধান অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন আর্চার। বিস্ময়কর হল, তাঁর বাউন্সারে স্মিথ যতবার আঘাত পেয়েছেন, ততবারই মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো হাসছিলেন তিনি।’ স্মিথ আঘাত পাওয়ার পরও আর্চারের হাসি বড়ই দৃষ্টিকটু লাগছিল। তাহলে কী খেলার মাঠের স্পিরিটটাই উঠে যাচ্ছে? স্পোর্টসম্যানশিপের জন্য এটা বড়ই লজ্জার বিষয়।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...