সামাজিক নিপীড়ন থেকে বাঁচতে মার্শাল আর্ট শিখছে গ্রামাঞ্চলের স্কুলছাত্রীরা

পিবিএ,ঢাকা: যৌন হয়রানীসহ নানা সামাজিক নিপীড়ন থেকে বাঁচতে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে কুষ্টিয়ার গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। পাশাপাশি এসব সামাজিক ব্যাধী রুখতে তারা শ্রেণী কক্ষে বিশেষ পাঠ গ্রহণ করছে। এই প্রশিক্ষণ নিয়ে মেয়েদের মনোবল আর আত্মবিশ্বাস অনেকটায় বেড়েছে।

এতে খুশী অভিভাবক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, তারা মানষিক সমর্থন দিচ্ছে এই ছাত্রীদের। একটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই উদ্যোগে সহায়তা দিচ্ছে। ইভটিজিং, যৌন হয়রানী, ধর্ষণসহ পদে পদে নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয় আমাদের সমাজের নারীদের। নতুন নতুন আইন, প্রশাসনের তৎপরতা কোন কিছুই যেন রুখতে পারছে না এই সামাজিক ব্যাধী।

এমন প্রেক্ষাপটে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা নিজেদের আত্বরক্ষায় মাশাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের পাশাপাশি শ্রেণী কক্ষে বিশেষ পাঠ্য পুস্তক পড়ানোর মাধ্যমে ছাত্রীদের হয়রানী ও নির্যাতনসহ নানা মুখি সামাজিক নিপীড়ন সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হচ্ছে। এতে নিজেদের সামাজিক মর্যাদা ও আত্মসম্মান রক্ষায় আত্মবিশ্বাস ও মনোবল বেড়েছে মেয়ে শিক্ষার্থীদের।

প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া মিরপুর উপজেলার পাহাড়পুর-লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী বিলকিস বানু বলেন, এই প্রশিক্ষণ নিয়ে তার মনোবল বেড়েছে। আগে স্কুলে যাতায়াতের সময় সে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত থাকতো। এখন সেই শঙ্কা বা ভয় আর নেই।

একই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী আরজিনা খাতুন বলেন, ‘আগে নিজেকে খুব দুর্বল মনে হতো। আগে নিজেকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতাম। তবে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন আমার ভেতরে এক দারুণ আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। বিলকিস আর আরজিনাদের এই আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্জাদাবোধ তাদের সহপাঠিতের মধ্যে আশা জাগিয়েছে।

সদর উপজেলার কবুরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী আয়েশা বেগম বলেন, তার কয়েকজন সহপাঠি মার্শাল আর্ট শিখছে। এটা দেখে তার মনে জমে থাকা ভয়ও দুর হয়েছে গেছে। সে এখন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। অভিভাবকরাও এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে।

মিরপুর উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামের বাসিন্দা হারুন শেখ বলেন, ‘আগে মেয়ে স্কুলে গেলে ভয়ে ভয়ে থাকতাম, মেয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরবে তো, -এমন আশঙ্কা বুকে বাজতো সব সময়। তবে মেয়ে কারাতে শেখায় এখন সেই ভয় অনেকটায় কেটে গেছে।’

পাহাড়পুর-লক্ষ্মীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিহাদ আলী খান বলেন, এই উদ্যোগ সব স্কুল গ্রহণ করলে নারী নির্যাতন বিশেষ করে স্কুলগামী মেয়েদের ওপর নিপীড়ন বহুলাংশেই কমবে। এতে স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতির হারও বাড়বে বলেন জানান তিনি।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ নামের একটি বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা ছাত্রীদের এই প্রশিক্ষণ ও পাঠদানে আর্থিক ও কারিগরি সাহায্য দিচ্ছে। সংস্থাটির জেলা সমন্বয়কারী হাসান ইকবাল রাসেল বলেন, মেয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে অবাধে ও নির্ভয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারে এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে তাদের যাতে কম বয়সে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে না হয়, সেই লক্ষ সামনে রেখে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

পিবিএ/ইকে

আরও পড়ুন...