পিবিএ ডেস্ক: সর্বপ্রথম ভাবতে হবে যে আমরা ‘আদর্শ’ কার কাছ থেকে গ্রহণ করবো। আদর্শ যদি কার্লমার্কস, লেনিন বা মুজিব-জিয়া হন তবে কোন কথাই নাই। আপনি যা ইচ্ছে ফতোয়া ঝাড়তে থাকেন। পক্ষান্তরে আদর্শ যদি হন হযরত মুহাম্মদ (সা.) তবে আপনার জিহ্বার লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে।
মসজিদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের বক্তব্য হচ্ছে-
‘নিশ্চয় আল্লাহর (ঘর) মসজিদসমূহকে আবাদ করে সেই ব্যক্তি, যে বিশ্বাস করে আল্লাহ্ ও পরকালে এবং নামাজ কায়েম করে ও যাকাত আদায় করে।'(সূরা তওবা, আয়াত-১৮।
মসজিদের আবাদ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদেরকে রাসূল (সা) এর জামানায় ফিরে যেতে হবে। অহেতুক বিতর্ক মূর্খতার শামিল। সেই স্বর্ণালি যুগে সমাজ পরিবর্তনে মসজিদের ভুমিকাই ছিল প্রধান। মসজিদ ছিল একই সাথে দাওয়াতী কাজের প্রাণকেন্দ্র এবং রাষ্ট্রীয় ভবন। দাওয়াতী কার্যক্রম এখান থেকেই পরিচালনা করা হতো। বিভিন্ন বিষয়ের পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এখানেই সম্পাদন করা হতো। বিভিন্ন দেশ ও এলাকা থেকে আগত প্রতিনিধি ও মেহমানদের রাসূল (সা) মসজিদেই স্বাগত জানাতেন। সাহাবায়ে কিরামের সাথে মসজিদেই তিনি মিলিত হতেন এবং তাদের শিক্ষাদান করতেন। এক কথায় একটি দেশ ও সমাজ পরিবর্তন করতে যত ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া দরকার সব তিনি মসজিদে বসেই নিতেন।
এবার আসি বর্তমানে। মসজিদে বসে দুনিয়াবি কথা বলা যাবে না এ শ্লোগান যারা দেন আমার মতে না জেনে বুঝেই তারা এমনটি করে থাকেন। তারা নিজেদের অজান্তে ইসলাম বিরোধীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছেন। মূলত এই ধারণার জন্ম হয় ইউরোপ থেকে। সেটি ১৫-১৬ শতকের কথা। ইউরোপে ক্যাথলিক চার্জ ও শাসক শ্রেণির মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একাধিক ধর্ম যুদ্ধ সংগঠিত হয়। চূড়ান্ত পরিণতিতে ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে পৃথক করে ফেলা হয়। এ মতবাদটি ধীরে ধীরে সেক্যুলারিজম নামে দুনিয়াতে জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর এই মতবাদের প্রবক্তারাই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে শুধু রাষ্ট্র, সংবিধান, পার্লামেন্ট নয় মসজিদ থেকেও ধর্মকে বিদায় করার এজেন্ডা হাতে নেয়। যাতে মসজিদকে ‘আনুষ্ঠানিক’ ইবাদতের জন্য নির্ধারিত করে অন্যান্য সব কাজকে মসজিদের শিক্ষা অর্থাৎ ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখা সম্ভব হয়। এই কয়েকশো বছরের মধ্যে তারা সফলতার স্বর্ণ শিখরে আরোহন করেছেন। আর আলেম সমাজের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ না জেনে-বুঝেই তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে যাচ্ছেন। হায় আফসোস।
মসজিদকে বহুমাত্রিক ব্যবহার করার শিক্ষা ইসলাম আমাদের দিয়ে যায়।
১. সামাজিক সকল সমস্যার সমাধান মসজিদ কেন্দ্রিক হতে পারে।
২. বিয়ে শাদিসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো মসজিদে হতে পারে।
৩. বিচার সালিশ, সামাজিক অবিচার অনাচার, দূর্নীতি ইত্যাদি নিয়ে বিস্তার আলোচনা ও সমাধান মসজিদ কেন্দ্রিক হবে।
৪. শুভ কাজের সূচনা, অশুভ কাজের জন্য অনুশোচনা ইত্যাদিও মসজিদ থেকে হতে পারে।
এককথায় মানুষের জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয় আপনি মসজিদে বসে আলোচনা ও সমাধান করতে পারেন। কিন্তু যারা বেনামাজি, দুর্নীতিগ্রস্থ, সুদখোর, ঘুষখোর তারা চিন্তা করলো- সব বিষয় যদি মসজিদে বসে আলোচনা ও সমাধান করা হয় তবে তো তাদের জন্য বেকায়দা। নিজেদের অশুভ মতলব হাসিলের জন্য তারা শ্লোগান তুললো মসজিদে দুনিয়াবি কথা বলা হারাম। তাদের এই কুমতলব কুমতি না বুঝে এক শ্রেণির জ্ঞানপাপী, অন্ধ অনুসারী, কুরআন হাদিসের মূল জ্ঞান থেকে অযুত নিযুত মাইল দূরে অবস্থানকারী কিছু মানুষ ইসলাম বিরোধী এই ধারণার সাথে মিশে গেলো।
গভীর মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করুন, মুমিনের প্রতিটি কাজকে ইবাদত বলা হয়েছে। অর্থাৎ একজন খাঁটি মুমিন এমন কোন কাজ করতেই পারে না যা কিনা ইবাদতের বাহিরে। সুতরাং মুনিনের মসজিদ এবং মসজিদের বাহিরের দুনিয়ায় কোন তফাত করার সুযোগ নাই। মসজিদেও ভালো কাজ বাহিরেও ভালো কাজ।
অতএব আমরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলাম যে, একজন ঈমানদার নামাজি ব্যক্তি মসজিদে সকল কথাই বলিতে ও আলোচনা করিতে পারিবেন। ইহাতে ইসলামের কোন বাঁধা নাই।
লেখক: আহমদ ইয়াসিন/বিএইচ