সফল ব্যক্তিরা কারো সঙ্গে প্রথম বৈঠকে যে ৯ কাজ করেন

পিবিএ,ডেস্ক: কারো সঙ্গে প্রথম বৈঠক করাটা একটু কঠিনই বটে। হোক তা কোনো আভ্যন্তরীণ বা গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারের সঙ্গে চুক্তিসংক্রান্ত কোনো বৈঠক। যে কারো সঙ্গেই প্রথম বৈঠকের জন্য পূর্ব প্রস্তুতি নেওয়াটা কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আপনি কখনোই আগে থেকে বুঝতে পারবেন না আপনি নিজে এবং যার সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হতে যাচ্ছে তারা পরস্পরের জীবনে কী ভুমিকা রাখবেন। গবেষণায় দেখা গেছে আপনি ‘চোখের এক পলকেই’ প্রথম ছাপটি ফেলতে সক্ষম। আর মনে রাখবেন, এমন নয় যে শুধু লোকেই আপনাকে পর্যবেক্ষণ করছে বরং আপনিও নিজের অজান্তেই হয়তো তাদেরকে বিচার বিশ্লেষণ করছেন। এ ক্ষেত্রে দুই পক্ষ থেকেই ব্রিবতকর কিছু বা কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আবার যদি এমন হয় যে, যার সঙ্গে আপনার সাক্ষাৎ হলো তিনি ঠিকঠাক অবস্থাতেই আছেন, তিনি আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ভালোবাসার জন, ব্যবসায় অংশীদার, পৃষ্ঠপোষক বা কোনো অভিন্ন উদ্দেশ্যে মিত্র বনে গেলেন?

মানুষের ব্যক্তিগত উপলব্ধি ঠেকানো অসম্ভবই বটে। তবে, কী ঘটছে সে ব্যাপারে আপনাকে সব সময়ই সতর্ক থাকতে হবে। এবং কোনো বৈঠক আরো বেশি করে আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার সহায়ক হতে পারে এমন ৯টি পরামর্শ রইল এখানে :

বৈঠকের আগে গবেষণা করুন

অনেক সাক্ষাৎই হয়ত দৈবক্রমে ঘটে। কিন্তু বেশির ভাগই আগে থেকে নির্ধারিত থাকে। সূতরাং যার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছেন তার ব্যাপারে আগে থেকেই কী কী জানা সম্ভব সে ব্যাপারে গবেষণা করুন। আপনি তার পেশাগত অভিজ্ঞতা, অতীত জীবন বা ব্যক্তিগত আগ্রহ নিয়ে অনুসন্ধান চালাতে পারেন।

যেকোনো পরিপ্রেক্ষিতের জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিন

প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ, নতুন কোনো সরবরাহকারীর সঙ্গে আলোচনা বা চাকরির ইন্টারভিউ সংক্রান্ত বৈঠকগুলোর মধ্যে বিশাল পারস্পরিক ফারাক রয়েছে। কারো সঙ্গে বৈঠকের গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য বৈঠকটির পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় রাখুন আর মনে রাখবেন যে আপনি শুধু একটি সীমিত দৃশ্যই দেখছেন মাত্র।

মনে রাখবেন কেউই আরামদায়ক নয়

কিছু কিছু মানুষ আছে যারা অন্যদের সঙ্গে বৈঠকের ক্ষেত্রে সত্যিই খুব আরামদায়ক অনুভূতি ছড়িয়ে দেন। এ ক্ষেত্রে ভঙ্গুর ইগো এবং স্ব-ইমেজ সক্রিয় থাকে। আপনি যদি কারো সঙ্গে বৈঠকে অস্বস্তি বোধ করেন তাহলে বোঝার চেষ্টা করুন তিনিও হয়ত অস্বস্তিটুকু কাটিয়ে সহজ-সাবলীল হওয়ার চেষ্টা করছেন। এতে নিজের সমস্যাটুকুর কথা আর আপনার মাথায় থাকবে না।

স্বস্তিদায়ক ভঙ্গিতে মুচকি হাসুন

কারো সঙ্গে সাক্ষাতে মুচকি হাসি দেওয়া বহু পুরোনো একটি পরামর্শ। তবে সব হাসিই একরকম নয়। আপনার হয়তো এমন কারো সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়ে থাকতে পারে যিনি প্রথম দেখাতেই দাঁতকেলিয়ে হেসে দেন। ধরুণ আপনি একটি পুরনো গাড়ি বিক্রি করতে খদ্দেরের সঙ্গে সাক্ষাতে এমন হাসি দিলেন। এতে ওই খদ্দের খুবই বিরক্ত হবেন। সুতরাং খুবই সতর্কতার সঙ্গে মনভোলানো একটি মুচকি হাসি দেওয়ার এবং নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করুন। এতে আপনি তাকে স্বস্তিদায়কভাবে বিস্মিত করতে পারবেন। যার ফলে হয়তো তার সঙ্গে আপনার এমন একটি সম্পর্ক গড়ে উঠবে যা ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

সরাসরি চোখের দিকে তাকান, তবে তা যেন পাগলের দৃষ্টি না হয়

মুচকি হাসির মতো সরাসরি চোখের দিকে তাকানোও একটি আপ্ত পরামর্শ। তবে এতে যেন এমন কোনো অনুভূতি প্রকাশ না পায় যে এর মাধ্যমে আপনি অসাবধানী কোনো প্রতিযোগিতা বা কর্তৃত্ব ফলানোর চেষ্টায় লিপ্ত হচ্ছেন। আর এও মনে রাখবেন বিভিন্ন সংস্কৃতিতে চোখাচোখি করার বিষয়টি একটু ভিন্নভাবেই বিবেচনা করা হয়। সরাসরি চোখের দিকে তাকালে কেউ কেউ সেটাকে অভদ্রতা এবং আক্রমণাত্মক আচরণ হিসেবেও বিবেচনা করতে পারেন। সূতরাং যার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবেন তার মনোভাব সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন। আর সেটা যদি সম্ভব না হয় তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা দেহভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করে বুঝার চেষ্টা করুন।

সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য অভিবাদন করুন

এক সংস্কৃতির অভিবাদন পদ্ধতি অন্য সংস্কৃতিতে অভদ্রতা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সূতরাং সতর্ক থাকুন।

কারো সম্পর্কে তার চারপাশ থেকে ধারণা নিন

আপনি যদি কারো সঙ্গে তার অফিস, বাসা বা অন্য কোনো জায়গায় সাক্ষাৎ করেন তাহলে চারপাশে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করুন। সেখানে পারিবারিক কোনো ছবি আছে? তারা কী ধরনের শিল্পকর্ম বা বই পছন্দ করেন? ফার্নিচারগুলো কী পুরনো ধাঁচের নাকি নতুন এবং অভিনব কোনো রুচিবোধের প্রকাশ ঘটায়? পুরো মনোযোগ ঢেলে দিয়ে তা বুঝার চেষ্টা করুন।

অপর ব্যক্তিটির ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করুন

অপরের প্রয়োজন, আগ্রহ এবং আরামের ব্যাপারে মনোযোগ দিন। তার মানে এই নয় যে আপনার নিজের আগ্রহটুকুকে আপনি উপেক্ষা করবেন। বৈঠকটি নিশ্চয় বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যেই করা হচ্ছে। তবে এর পাশাপাশি অপর ব্যক্তিটির স্বকীয় উপস্থিতি বা অস্তিত্বও স্বীকার করে নিন। এতে একটি সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হবে।

বেশিক্ষণ ধরে অভিবাদন জানাতে যাবেন না

প্রথম সাক্ষাৎ একটু অস্বাভাবিক হতেই পারে। ফলে অপরজন ভিন্ন কোনো আগ্রহ বা বাধ্যবধকতা প্রকাশ করতে চান কিনা সে-সংক্রান্ত লক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। তাদেরকে আরো বেশি কথা বলার বা বেশি কিছু জিজ্ঞেস করা সুযোগ দিন। এতে তারা হয়ত এটি ব্যর্থ হলেও আরেকটি বৈঠকের আহ্বান জানাতে পারেন।

পিবিএ/ইকে

আরও পড়ুন...