ক্রোনস ডিজিজ কী? লক্ষণ ও প্রতিরোধের উপায়

পিবিএ ডেস্কঃ শরীর আছে মানেই তা খারাপ হবে। এমন কেউ নেই, যে পুরোপুরি সুস্থ থাকে সবসময়। সবারই খুঁটিনাটি কিছু না কিছু শারীরিক সমস্যা লেগেই থাকে। কারোর কম, কারোর বেশি। আর শরীরে যে কোনও সমস্যা দেখা দিলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়, তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সবসময় নিজের শরীরের দিকে নজর রাখা উচিত। ঠিক সেরকমই, আপনার অন্ত্রের কোনও সমস্যা দেখা দিচ্ছে কী না সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত। ‘পরে ঠিক হয়ে যাবে’ এই ভেবে এড়িয়ে যাওয়া কখনই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। কারণ, এর সাথে আমাদের শরীরের অনেককিছু জড়িয়ে থাকে।

আমাদের অন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে একরকম সমস্যাকে ক্রোনস ডিজিজ বলে। এক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির পাচন তন্ত্রের নালীতে তীব্র জ্বালা বা প্রদাহ দেখা যায়। এটি মূলত ইনফ্ল্যামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD) নামেই বেশি পরিচিত। এক্ষেত্রে হজম করার পথে অনেক সমস্যা দেখা দেয়। আর সঠিকভাবে হজম না হলে বিভিন্ন সমস্যা তো থাকেই। জীবনের ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে। তাই, এক্ষেত্রে সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে কোনও লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

আমাদের অন্ত্রের চারিদিকে পাতলা কোশ আবরণী থাকে, যা অন্ত্রকে দেহের অন্যান্য অংশ থেকে আলাদা করে রাখে। কোনও কারণে এই আবরণী ক্ষতিগ্রস্ত হলে, অন্ত্রে উপস্থিত বিভিন্ন ক্ষতিকারক পদার্থগুলি আমাদের দেহের সাথে মিশতে শুরু করে। তার ফলে, শরীরের বিভিন্ন অংশে প্রদাহ জনিত সমস্যাগুলির সৃষ্টি হয়। তবে, ক্রোনস ডিজিজ কী কারণে হয় তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে। তবে যে যে বিষয়গুলিকে এই রোগের কারণ বলে মনে করা হয়, সেগুলি হল- শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা, জিনগত সমস্যা ও আশেপাশের পরিবেশগত সমস্যার কারণেও হতে পারে।

ক্রোনস ডিজিজের লক্ষণঃ এক্ষেত্রে সাধারণত যে লক্ষণগুলি দেখা দেয়, সেগুলি হল-

ক) যখন তখন পেট ব্যাথা

খ) ডায়রিয়া গ) খিদে কমে যাওয়া ঘ) হজম না হওয়া

ঙ) ওজন কমে যাওয়া

চ) অবসাদ, শরীরে ক্লান্তি

ছ) কোনও কিছু করতে ভালো না লাগা

জ) জ্বর হওয়া

ঝ) মলত্যাগের সাথে রক্ত পড়া, ইত্যাদি।

রোগ নির্ণয়ঃ এই রোগ সাধারণত এন্ডোস্কোপি বা কোলোনোস্কোপি এবং ইমেজিং স্টাডিজের ( এম.আর.আই, সিটি স্ক্যান, কনট্রাস্ট রেডিওগ্রাফি) মাধ্যমে নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও, রক্ত পরীক্ষা ও মল পরীক্ষার মাধ্যমেও এই রোগ নির্ণয় করা হয়। রোগ নির্ণয়ের পর তার চিকিৎসা শুরু হয়। এই রোগের চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য হল অন্ত্রের জ্বালা থেকে মুক্তি দেওয়া এবং উপসর্গগুলি কমানো। এরজন্য সময় মতো ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে রোগের বাড়াবাড়ি আটকানো যায়। আর এই সমস্যা যদি তীব্রতর হয় তাহলে সেক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজন হয়।

রোগ প্রতিরোধ করবেন কীভাবেঃ ক্রোনস ডিজিজ প্রতিরোধ করার জন্য যেগুলি করা দরকার –

ক) ধূমপান থেকে দূরে থাকুন। চেষ্টা করুন ধূমপানের অভ্যাস পরিত্যাগ করার। তাহলে এই রোগ থেকে কিছুটা হলেও দূরে থাকতে পারবেন।

খ) আমাদের শরীরে বাইরে থেকে কোনও জীবাণু প্রবেশ করলে সেক্ষেত্রে আমাদের শরীরে বিভিন্নরকম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ক্রোন ডিজিজের ক্ষেত্রেও এই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতার ঘাটতি দেখা যায়। তাই শরীরের এই রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলা দরকার।

গ) গবেষণায় দেখা গেছে, শিল্প,কারখানা আছে এরকম জায়গার আশেপাশে বাস করলে ক্রোন ডিজিজের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকা দরকার। আর, পরিবেশ সম্পর্কে একটু বেশি সচেতন থাকা প্রয়োজন।

ঘ) আপনার পরিবারে যদি এর আগে কারো এই ধরনের রোগ থেকে থাকে তাহলে কোনওরকম ঝুঁকি না নিয়ে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করান।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...