পিবিএ ডেস্কঃ ছুলি বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মুখের মধ্যে লালচে, বাদামী, সাদা রঙের বিচ্ছিরি দাগ। এটি একধরণের চর্মরোগ, যা নানা কারনে হতে পারে। অনেকের কিছু দিনেই ঠিক হয়ে যায় অনেকের জন্য এই ছুলি সারতেই চায় না!
স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হলেও মুখে এরকম বিচ্ছিরি দাগ বয়ে নিয়ে চলা মানসিক ভাবে অসুসস্থ্য করে তোলে। তাই সময় নষ্ট না করে আজকের এই লেখাটি মন দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। সমাধান রয়েছে এর মধ্যেই।
ছুলি কিঃ এতক্ষণে নিশ্চয়ই ধরে নিয়েছেন ছুলি কি? হ্যাঁ ঠিকই বুঝেছেন। চর্মরোগ, যা ত্বকে পুড়ে যাওয়ার মত বিচ্ছিরি দাগের জন্ম দেয়। আরও সহজ করে বললে একধনের ছত্রাকের সংক্রমণ। যা ত্বকের স্বাভাবিক পিগমেন্টেশনে হস্তক্ষেপ করে ছোট, বড় নানা দাগের জন্ম দেয়।
ছুলি কেন হয়ঃ প্রতিটি জিনিস ঘটার পিছনে থাকে কোন না কোন কারন।
ছুলি হওয়ার কারন কিঃ সাধারণত অ্যালার্জি থেকে অনেকের ছুলি দেখা দেয়। যা টেস্ট না করে বলা সম্ভব না। এক্ষেত্রে অ্যালার্জি টেস্ট করিয়ে কারন নির্ণয় করা সবচেয়ে জরুরি।
মূলত ছুলি হয় শরীরে যখন ফাঙ্গাস অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় যা টিনিয়া ভার্সিকালার নষ্ট করে দেয় স্বাস্থ্যকর ত্বকের।
উত্তপ্ত, আর্দ্র আবহাওয়া, তৈলাক্ত ত্বক,হরমোন পরিবর্তন ইত্যাদি ছুলির কারন হিসেবে দেখা যায় অনেক সময়।
মানব দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে ছুলি অনেকসময় দেখা দিতে পারে।
ছুলি হওয়ার লক্ষণ
আচমকা হলেও যেকোনো বাদামী দাগ মানেই ছুলি না। কয়েকটি লক্ষণ দেখে বোঝা যায় যে ছুলি হয়েছে কিনা। যেমন-
সাধারণত মুখে, পিঠে, বুকে, ঘাড়ে এবং উপরের হাতে ত্বকের বর্ণহীনতার প্যাচ বা দাগ, যা স্বাভাবিকের স্কিন কালারের চেয়ে হালকা বা ডার্ক কালারের হয়।
চুলকানির প্রবণতা বেড়ে যাওয়া।
দাগ ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়া। ত্বকের রঙের বদল ঘটা।
ছুলি সরানোর ঘরোয়া উপায়ঃ ছুলি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ও ট্রিটমেন্ট ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কিন্তু যদি আবহাওয়ার বদল, স্যাঁতস্যাঁতে জায়গায় থাকার দরুন কিম্বা ত্বকের অতিরিক্ত অয়েলি ভাবের জন্য দেখা দিচ্ছে, সেক্ষেত্রে এই সহজ ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপায় অবশ্যই ট্রাই করে দেখতে পারেন।
অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যান্টি-ফাঙ্গাল আর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ অ্যালোভেরা জেল বা ঘৃতকুমারী। যা ছুলির সমস্যা দূর করতে ধন্বন্তরির মত কাজ করে।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী উপায় এটি। ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল নিয়ে ছুলির উপরে লাগিয়ে রাখতে হবে।
শুকিয়ে যাওয়ার পর মুখ ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে ঠাণ্ডা জল দিয়ে।
রোজ ২ থেকে ৩ বার কমপক্ষে এটি নিয়মিত একমাস ব্যবহার করতে হবে।
ছুলির দাগ আসতে আসতে দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের হারানো জেল্লা ফিরে পাবেন খুব জলদি।
টি ট্রি অয়েলঃ অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান রয়েছে টি ট্রি অয়েলে। যা ফাঙ্গাসের বেড়ে যাওয়া আটকানোর সাথে সাথে ইচিং’এর মত সমস্যা কমিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ একটি কাঁচের পাত্রে ৫ থেকে ৬ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল, এক চা চামচ অলিভ অয়েল ও এক চা চামচ নারকেল তেল ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে প্রথমে।
এবার তুলো দিয়ে এই মিশ্রণটি ছুলি হওয়া স্থানে লাগিয়ে রাখুন যতক্ষণ না শুকিয়ে যাচ্ছে।
শুকিয়ে যাওয়ার পর হালকা উষ্ণ গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
রোজ দুবার করে কয়েক সপ্তাহ করতে হবে নিয়মিত।
পেঁয়াজের রসঃ পেঁয়াজের রসে থাকা উপাদান স্কিন এক্সফলিয়েট করে ছুলির দাগ দ্রুত দূর করতে সাহায্য করে।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ লাল রঙের পেঁয়াজ এক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। একটি পেঁয়াজ বেটে তার রস বের করে একটি কাঁচের পাত্রে রাখুন।
হাফ চা চামচ বিশুদ্ধ মধু পেঁয়াজের রসের সাথে মিশিয়ে নিন।
তুলো দিয়ে এই মিশ্রণটি ছুলির উপর লাগিয়ে হালকা করে ৫ মিনিট ম্যাসাজ করুন।
মুখে ১০ মিনিট মত এটি রেখে ঠাণ্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন।
পেঁয়াজে রস ঠিক এই ভাবে দিনে দুবার করে নিয়মিত ব্যবহার করুন।
দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যে ছুলির দাগ হালকা হতে শুরু করে দিয়েছে।
লেবুর রসঃ লেবুর রসে থাকা নানান উপাদান দাগ দূর করতে সাহায্য করে খুব সহজেই। ছুলির দাগ হালকা ধরনের হলে এই উপায়টি অবশ্যই ব্যবহার করে একেবারের মত দাগ দূর করতে পারেন।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ একটি পাতিলেবু নিয়ে তা হাফ করে কেটে নিন। একফালি অংশ ছুলির উপরে লাগিয়ে হালকা হাতের চাপে লেবুর রস বের করে লাগান।
আর তা না হলে একটি পাত্রে লেবুর রস বের করে নিয়ে তুলো দিয়ে লাগাতে পারেন ছুলি হওয়া স্থানে।
লেবুর রস লাগানোর পর ১৫ মিনিট টানা ম্যাসাজ করুন। তারপর হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।
পিবিএ/এমআর