পেটে সন্তান, সন্তানকে দুধ খাওয়ান? ডেঙ্গু হলে কি করবেন?

পিবিএ ডেস্ক: বর্ষাকাল ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসের মতো মশা বাহিত বেশ কয়েকটি রোগ নিয়ে আসে। বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধ স্থানগুলো মশার প্রজনন ভূমিতে পরিণত হয়। সেখানে জন্ম নেওয়া মশা অতি সহজে মানুষের মধ্যে ওই রোগগুলো ঢুকিয়ে দেয়। শিশু, প্রবীণ, গর্ভবতী নারীসহ স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন লোকদের বর্ষার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ তারা এই রোগগুলোর ঝুঁকিতে থাকে এবং অতি সহজে ওই রোগগুলোতে আক্রান্ত হয়।

ডেঙ্গু অন্যতম মারাত্মক একটি বর্ষাকালীন রোগ। এডিস এজপিটি মশার কামড়ের কারণে এ জ্বর হয়। গর্ভবতী নারীরা অবশ্যই ডেঙ্গু রোগ সম্পর্কে সাবধান হওয়া উচিত। কারণ এ রোগে সংক্রামিত ব্যক্তির প্লাটিলেট খুব দ্রুত নেমে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দুর্বল করে ফেলে। অতি দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যেকোনো সময় রোগীর মারা যেতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ১৯০ মিলিয়ন মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ৯৯ মিলিয়ন মানুষের ক্ষেত্রে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। প্রতিবছর ২৫ শতাংশ ডেঙ্গু রোগের বৃদ্ধি হয় মূলত সচেতনতার অভাব এবং মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করার প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের কারণে।

যদি কোনো গর্ভবতী নারী ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত হন, তাহলে অবিলম্বে তরল গ্রহণের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ ভ্রূণের তরল স্তর বজায় রাখার জন্য হাইড্রেশন জরুরি। জ্বর ছাড়াও ডেঙ্গুর অন্যান্য লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গুরুতর মাথাব্যথা, রেট্রো-অরবিটাল ব্যথা, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাবসহ প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে যাওয়া। ডেঙ্গু জ্বর যদি মারাত্মক আকার ধারাণ করে তাহলে প্লাজমা ফুটো, রক্তক্ষরণ বা যেকোনো অঙ্গ কাজ নাও করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগীকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বেশি পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। এছাড়াও সব সময়ে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। এই রোগে আক্রান্ত হলে সময় হওয়ার আগেই ডেলিভারি করিয়ে নেওয়া হতে পারে। তাছাড়া শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা: কোনো গর্ভবতী নারী ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরমার্শ করে ছয় ঘণ্টা পর পর একটি করে প্যারাসিটামল নিতে হবে। এই ডোজটি ২৪ ঘণ্টায় ৪ গ্রামের বেশি নেওয়া যাবে না। আইবুপ্রোফেন, অ্যাসপিরিন এবং ডাইক্লোফেনাক সোডিয়ামের মতো কোনো ধরনের ওষুদ নিতে পারবে না। নারকেলের পানি, ওআরএস, জুস এবং বাড়িতে তৈরি করা খাবারের সঙ্গে তরল খাবার খাওয়াতে হবে। সারা দিনে কমপক্ষে তিন লিটার পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে।

এই রোগ যতো দ্রুত ধরা পড়বে ততো দ্রুত রোগী ভালো হয়ে যাবে। রোগী যদি ভালো চিকিৎসা পায় তাহলে মৃত্যুর ঝুঁকি ১ শতাংশে নেমে আসে। যে গর্ভবতী নারীরা ডেলিভারির কয়েক দিন পূর্বে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের ওপর বেশি খেয়াল রাখতে হবে।

ডেঙ্গুর সময় বুকের দুধ খাওয়াবেন?

বিশেষজ্ঞদের মতে, মা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে বুকের দুধ খাওয়ানো নিরাপদ। বুকের দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুর শরীরে ডেঙ্গু ছড়ায় না। কলস্ট্রাম, প্রথম বার মায়ের বুকের দুধ এবং মায়ের দুধে অ্যান্টি-ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি থাকে যা বাচ্চাকে ডেঙ্গুর রোগের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের নির্দেশিকা অনুসারে, মা ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও মায়ের বুকের দুধ পান করানো উচিত। কারণ মায়ের দুধে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি ও অ্যান্টিবডি রয়েছে যা শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে, ডিহাইড্রেশন রোধ করে এবং শিশুর মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।

যেভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন

ডেঙ্গুর সময় বা তাৎক্ষণিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো নিরাপদ কিনা তা জানতে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে চিকিৎসকের কাছে। তার কাছ থেকে পরামর্শ নিন। যদি কোনো মা বেশি জ্বরে আক্রান্ত এবং শারীরিকভাবে ভালো না হন তাহলে নবজাতককে দুধ খাওয়ানো উচিত না। বুকের দুধের বিকল্প ফর্মুলা ফিডের বিষয়ে আলোচনা করা উচিত। বুকে দুধের সঞ্চয় নিয়েও ডাক্তার এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা উচিত।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর শরীর যদি ভালো না থাকে তহলে দুধ খাওয়ানো বন্ধ করতে হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য মায়ের বুকের দুধ নবজাতককে খাওয়ানো চেষ্টা করতে হবে। কারণ নবজাতকের স্বাস্থ্যের জন্য বুকের দুধ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

ডেঙ্গু মাশার হাত থেকে অতি সহজে রক্ষা পাওয়া যায়। এর জন্য আপনাকে বাড়ির আশেপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। জলাবদ্ধতা দূর করেতে হবে। এই কাজগুলো করলে নিজেকে, গর্ভবতী নারীদের এবং নবজাতকদের মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে পারবেন। সেই সঙ্গে ডেঙ্গুর হাত থেকে ভালো রাখতে পারবেন সবাইকে।

পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...