রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব: রিজভী

পিবিএ,ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিভিন্ন সময় এক হাজার ২০৯ জন গুম হয়েছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানিয়েছেন, একদিন না একদিন তদন্ত করে এসব খুনের বিচার অবশ্যই হবে। শুক্রবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এসব কথা বলেন। ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী দাবি করেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৭৮১ জনকে গুম করে। এর মধ্যে বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর চৌধুরী আলম, লাকসাম বিএনপি নেতা হুমায়ুনর কবির পারভেজ, ছাত্রদল নেতা জাকির, নিজাম উদ্দিন মুন্না, তারিকুল ইসলাম ঝন্টু, আদনান চৌধুরী, মো. সোহেল, খালিদ হোসেন সোহেল, সম্রাট মোল্লা, মাহবুব সুমনসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর শত শত নেতাকর্মী রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

রিজভী বলেন, ‘দেশে বর্তমান গুমের ধারাবাহিকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যা শুরু হয়েছিল ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালে। গণতন্ত্রের অকাল প্রয়াণ ঘটানোর জন্যই গুমের মতো অমানবিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। গণতন্ত্র হত্যায় রাষ্ট্রের এই নিষ্ঠুর চেহারা দেখে জনগণ শোক জানাতেও ভয় পায়।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে, বিরোধী দল ও মতকে নির্মূল করে রাষ্ট্র-সমাজে একমাত্রিকতা, কর্তৃত্ববাদী ও একদলীয় শাসনব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করাই এর মূল লক্ষ্য।’ সরকার গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে গুমের ইতিহাস সৃষ্টি করেছে আওয়ামী সরকার। রাষ্ট্রীয় মদদ ছাড়া কাউকে গুম করা অসম্ভব। গুম ও ক্রসফায়ারের মতো গুরুতর অপরাধের ঘটনাগুলো সমাজে, সংবাদ মাধ্যমে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও তাতে সরকারের টনক নড়ে নাই।’ গুমের শিকার প্রতিটি পরিবারে কান্না-আহজারি আর প্রতীক্ষার দিবানিশি শেষ হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘২২ জুন আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছরে যেসব মানুষ নিখোঁজ হয়েছে তার বেশিরভাগই বিরোধী দল বাংলাদেশ বিএনপির সদস্য। এদের মধ্যে আরও আছেন মানবাধিকারকর্মী, যারা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনায় সোচ্চার ছিলেন।’

‘ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৯ সালের শুরু থেকে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ৫০৭টি জোরপূর্বক গুম প্রামাণ্য দলিল হিসেবে উপস্থাপন করেছে নাগরিক সমাজবিষয়ক গ্রুপগুলো। গুম হয়ে যাওয়া মানুষের মধ্যে ২৮৬ জন জীবিত ফিরেছেন ঘরে। ৬২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে মৃত অবস্থায়। বাকি ১৫৯ জন মানুষ আজও নিখোঁজ।’

রিজভী বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্যমতে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ (জুলাই) পর্যন্ত ৩৪৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে ৪৪ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে, ৬০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং ৩৫ জন ফেরত এসেছে। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবার, স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীরা দাবি করেছেন যে, বিশেষ বাহিনী-র‌্যাব, ডিবি পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের পরিচয়ে সাদা পোশাকে ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তুলে নেয়া হচ্ছে।’

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘জোরপূর্বক বা যেকোনো ধরনের গুম বন্ধ করতে সরকারের প্রতি জাতিসংঘ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংস্থা আহ্বান জানিয়েছে। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়-আওয়ামী লীগ সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে প্রথম সারির মন্ত্রীরা পর্যন্ত সেই আহ্বানকে উড়িয়ে দিয়েছে। তারা সবসময়ই গুমের তথ্যপ্রমাণসমূহকে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা বলে এড়িয়ে চলে।’

মৌলভীবাজার কলেজের ‘শহীদ জিয়া অডিটোরিয়ামের’ নামফলক ছাত্রলীগ কর্মীরা ভেঙে ফেলেছে অভিযোগ করে এর নিন্দা জানান রিজভী। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করিম শাহিন, আবেদ রাজা, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...