মোবাইলে মিথ্যা কথা বলার কু-অভ্যাসে সমাজ পিছনে হাঁটছে!

পিবিএ ডেস্ক: উড়ো ফোন বা মোবাইলে মিথ্যাকথন আমাদের সমাজকে অগ্রসর হতে দিচ্ছে না।সমাজকে পিছন থেকে অন্ধকারের দিকে টানছে । সমাজকে পিছনে নিয়ে যাচ্ছে।

সামনাসামনি নয়, মোবাইল ফোনে মানুষ মিথ্যে বলে!

বাড়ি বানাচ্ছেন যারা বা ইতিমধ্যে বাড়ি বানিয়ে ফেলেছেন, তারা রাজমিস্ত্রি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, প্লাম্বিং মিস্ত্রিদের কাছ থেকে কত ধরনের যে মিথ্যা কথা মোবাইলে শুনেছেন, তা তারাই জানেন। রাজমিস্ত্রিদের বদ-অভ্যাস হল হঠাৎ-হঠাৎ কাজে আসা বন্ধ করে দেওয়া। বাড়ির মালিক হন্তদন্ত হয়ে মোবাইলে খবর নিলেই যে মিথ্যা কথাগুলো তারা বলেন, তার অন্যতম একটি হল, ‘আজ লেবার আসেনি’!

খারাপ লাগে, যখন মোবাইলে ভুয়ো খবর রটানো হয়। পাড়ার ছেলে পাড়ার ছেলেকে সন্ধেবেলায় পুকুর পাড় বা রাস্তার রকে বসে ইয়ার্কি মেরে যখন কারও সঙ্গে জরুরি দেখা করার কথা ফোনে বলে, তখন অবশ্যই খারাপ লাগে। মোবাইল ফোনে যখন কোনও পরিবারে হুমকি পাঠানো হয় বা কোনও মহিলাকে উত্ত্যক্ত করা হয়, তখন সেটা সাইবার ক্রাইমই! মোবাইলে মিথ্যা তখন রাতের ঘুম চুরি করে।

এ দেশে প্রশাসন, পত্রপত্রিকা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত মানুষজন মাত্রেই জানেন যে, সারাদিন কী সব বিচিত্র ভুয়ো খবর তাদের দফতরে আসে! খোজখবর না নিয়ে এবং যাচাই না করে সে সব খবর পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আশাও করা হয় যে, সে সব খবরকে গুরুত্ব দেওয়া হবে!

আমার এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী এক ভুয়ো ফোনে ভীষণ সমস্যায় পড়েছিলেন। বন্ধুটি গিয়েছিলেন তার মেয়ের জন্য পাত্র দেখতে। খোঁজখবর নিয়ে আমার বন্ধুটি ঘটক মারফত পাত্রটির খবর পান। পাত্র একজন সরকারি কর্মী। পাত্রের বাড়িতে দারুণ আপ্যায়ন করা হয় বন্ধুটিকে। পাত্রের বাড়ির লোকজন খুব ভদ্র ও মিশুকে। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পর গোলমাল বাধে। একটা উড়ো ফোন আসে পাত্রবাড়িতে। খবর আসে যে, ছেলেটি নাকি ভাল নয়। সেই উড়ো ফোন পেয়ে পাত্রের বাবাকে সব কথা খুলে বলেন আমার বন্ধুটি এবং বন্ধুটি ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’ ভেবে সেই মুহূর্তেই সম্বন্ধ ভেঙে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। পরে জানা যায়, পাত্রটি মোটেই খারাপ নয়। আসলে, হিংসার বশে পাত্রের বাবাকে জব্দ করতেই কেউ এই ঘটনা ঘটিয়েছিল!

এই উড়ো ফোন নিয়েই কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার মধ্যে দু’টো ঘটনা এখনও জ্বলজ্বল করছে। প্রথমটা তামিলনাড়ুর ঘটনা। গত ৫ মে উড়ো ফোনে বলা হয়, তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন উড়িয়ে দেওয়া হবে। হইচই পড়ে যায় সঙ্গে সঙ্গে। দ্বিতীয় ঘটনা আমাদেরা এই পশ্চিমবঙ্গে। ২০১৬-র ৪ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের প্রশাসনিক ভবনে বোমা রাখা আছে বলে উড়ো ফোন আসে। প্রশাসন অবশ্য এই উড়ো ফোন পাওয়া মাত্র গোটা বিষয়ে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছিল।

শেষে এই কথাটাই বলার যে, এই সব উড়ো ফোন বা মোবাইলে মিথ্যাকথন আমাদের সমাজকে অগ্রসর হতে দিচ্ছে না। তা পিছন থেকে অন্ধকারের দিকে টানছে সমাজকে। সমাজকে পিছনে নিয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি মোটেই সামান্য ব্যাপার নয়। এ বিষয়ে সকলের এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

পিবিএ/সজ

আরও পড়ুন...