রজনীকান্ত: বাস কন্ডাক্টর থেকে যেভাবে সুপারস্টার

পিবিএ ডেস্ক: কথিত আছে- রজনীকান্তের জন্ম ১০০ বছর আগে যদি হত, তবে ইংরেজরা ভারতের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য কোমর বেঁধে মাঠে নামত। এমনকি ভুলোমনা গজনিও মনে রেখেছেন রজনীকে। এমন আরো হাজারো ছোট ছোট এক লাইনের কৌতুকে ভরপুর বলিউড ইন্ডাস্ট্রি এবং এসব কৌতুকের মূল আকর্ষণ হচ্ছেন সুপারস্টার রজনীকান্ত বা তামিল ইন্ডাস্ট্রির থালাইভা। রজনীকান্ত এমন একজন সুপারস্টার, যিনি টলিউড দিয়ে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করলেও, বলিউডেও সারা জাগিয়েছেন সমান ভাবে। পুরো ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিই রজনীকান্তের অভিনয়ের ছোঁয়া পেয়েছে কম-বেশী।

শিবাজি রাও গায়কাদ ওরফে রজনীকান্ত ওরফে থালাইভা, একজন বাস কন্ডাক্টর থেকে সুপারস্টার হওয়ার যাত্রাটা খুব একটা মসৃন ছিল না তার। ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর ব্যাঙ্গালুরুর মধ্যবিত্ত মারাঠি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রজনীকান্ত। বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলে, বাবা পুলিশ কনস্টেবল, মা ছিলেন গৃহিনী, সাথে দুই ভাই ও এক বোন। গভিপুরম গভর্নমেন্ট কান্নাডা মডেল প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন তিনি। স্কুলের পাশাপাশি তাকে রামকৃষ্ণ মঠে পাঠালেন তার বড় ভাইয়েরা।

এই মঠেই প্রথম অভিনয় জীবনের হাতেখড়ি হয় তার। “মহাভারত” এর চরিত্র “একলভ্য” এর বন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব আসলো মঠের থিয়েটার থেকে। প্রথম অভিনয়েই রজনীকান্তের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সকলে। এমনকি কান্নাডা’র বিখ্যাত কবি ডি আর বেন্দ্রে তার অভিনয়ের প্রশংসা করেন। এরপরে বিভিন্নভাবে অভিনয় চালিয়ে গেলেন এভাবেই। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে নয় বছরের রজনীকে ছেড়ে তার মা পাড়ি জমালেন ওপারে। মায়ের মৃত্যুর পরেই সংগ্রামী জীবনের শুরু হয়।

বিভিন্ন চড়াই- উৎরাই পার করলেন ছোট বয়সেই। কারপেন্টার, কুলি এবং সবশেষে হলেন ব্যাঙ্গালুরুর বিটিএস বাস কোম্পানির বাস কন্ডাক্টর। এই পেশাতে এসেই রজনীকান্ত তার নিজস্ব স্টাইলে শিষ বাজিয়ে টিকেট বিক্রি করতেন এবং সে সাথেই সাধারণ জনগনের মাঝে পরিচিতি পেয়ে গেলেন। কিন্তু ভাগ্যদেবতা যে রজনীর ভাগ্যে শুধু এই ছোট পরিসরের পরিচিতি লিখে রাখেননি, এটা তখনো রজনীর জানা ছিল না। ফ্রি এক্টিং কোর্সের এক বিজ্ঞাপন চোখে পরে একদিন। অভিনয় পাগল রজনী বাস কন্ডেক্টরের চাকরি ছেড়ে পরিবারের সকলের অমতে ১৯৭৩ সালে চেন্নাইয়ের এম.জি.আর গভর্নমেন্ট ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের এক্টিং কোর্সে ভর্তি হয়ে যান। তার এই কাজে সহযোগিতা করেন তখনকার বন্ধু রাজ বাহাদুর।

বাহাদুরের সাথে রজনীকান্তের বন্ধুত্ব এখনো ঠিক আগের মতই। তার বিভিন্ন সিনেমায় ছোটখাট রোলে রাজ বাহাদুরকে দেখা যায়। রজনীর ৬৭তম জন্মদিনের কিছুদিন পরেই দেখা হয় দু’জনের। দুই বন্ধুর গল্পের এক পর্যায়ে নিছক মজার ছলেই বাহাদুর বলে উঠেন, “তোমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে, থালাইভা”। এক মূহুর্ত দেরী না করেই তাকে ঘরে টেনে নিয়ে গেলেন রজনীকান্ত, শার্ট তুলে তার স্লিম বডি দেখিয়ে বললেন, “এবার বল”? বাহাদুরের উত্তর কী ছিল, এই নিয়ে আর আলোচনা করলো না বাহাদুর নিজেই।

বন্ধু রাজ বাহাদুরের সহযোগিতায় সিনেমা জগতে প্রবেশ করেন সুপারস্টার রজনীকান্ত। তামিল ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর, কে.বালাচান্দারের নজরে আসেন এই ইন্সটিটিউটের এক থিয়েটারের অভিনয় দিয়েই। বালাচান্দার সে সময়ের বিখ্যাত ডিরেক্টর। ১৯৭৪ সালের ক্লাসিক তামিল সিনেমা “আভাল অরু থোদারকাতাই” এর জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে পেয়েছিলেন ফিল্মফেয়ার এওয়ার্ড। এই বালাচান্দারকে আজও নিজের গুরু বলে স্বীকার করেন রজনীকান্ত। এই দুজনের প্রথম সাক্ষাতে, বালাচান্দার, রজনীকে তামিল ভাষা শেখার এবং অভিনয়ে নিজস্ব স্টাইল আনার পরামর্শ দিলেন।

রজনীকান্ত ছিলেন মারাঠি। কিন্তু পরবর্তী সাক্ষাতেই রজনীর তামিল ভাষায় পারদর্শীতা আর অভিনয় কৌশলে অভিভুত হয়ে গেলেন বালাচান্দার। কিছুদিন পরেই ১৯৭৫ সালে বালাচান্দারের “অপুর্ব রাগাঙাল” দিয়েই সিনেমাজগতে প্রথমবারের মতো পা রাখেন রজনীকান্ত। এই সিনেমার মাধ্যমেই শিবাজি নামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছোট ছেলেটি হয়ে গেল সিনেমাজগতের রজনীকান্ত। তার নামকরণ করেন বালাচান্দার নিজেই। শ্রীদেবীর বিপরীতে সাপোর্টিং এক্টর রোলে, একজন ভিলেনের চরিত্র পেলেন। নির্যাতনকারী স্বামীর এই চরিত্র করেই অভিনেতা হিসেবে প্রথমবারের মতো সকলের নজরে এলেন। ঠিক তার পরবর্তী বছরেই বালাচান্দারের সাথে দুটি এবং অন্যান্য ডিরেক্টেরের সাথে আরো দুটি সিনেমায় দেখা গেল রজনীকান্তকে।

১৯৭৭ সালে রজনীর ১৪টি সিনেমা মুক্তি পায় এবং ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় ২০টি সিনেমা। ১৯৭৮ এর সিনেমা “বৈরাভি” ছিল প্রথম তামিল সিনেমা, যাতে রজনীকান্ত পেয়েছিলেন প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ। এই সিনেমাই তাকে “সুপারস্টার” উপাধি এনে দেয়। ১৯৭৯ সালে তার ঝুলিতে আসলো ১২টি সিনেমা, যার মধ্যে একটি হলো মুথুরামানের মেলোড্রামা সিনেমা “আরিলিরুন্থু অরুবথু ভারই”। এই সিনেমার হিরো, যে সব কিছু ত্যাগ করে তার ভাই-বোনের জন্য। এই সিনেমাই হয়ে গেল রজনীকান্থের জীবনের মোর ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। হাজারো মানুষের চোখের পানি রজনীকান্তকে একজন অভিনেতা থেকে শিল্পীতে পরিণত করলো।

১৯৮৩ সালে বিগ বি, অমিতাভ বচ্চনের সাথে রজনীকান্তের হিন্দি সিনেমা “আন্ধা কানুন” মুক্তি পেল। এই সিনেমা দিয়েই বলিউডের পর্দায় প্রথমবারের মতো রজনীকে দেখা যায়। যদিও সিনেমায় রজনীকান্ত ছিলেন প্রধান চরিত্রে, আর বিগ বি এসেছিলেন অতিথি চরিত্রে। একই বছরে বিগ বি’র ব্লকবাস্টার সিনেমা “কুলি” তে অতিথি চরিত্রে দেখা গিয়েছিল রজনীকান্তকে। ১৯৮৫ সালে “গেরাফতার” সিনেমাতে বিগ বি’র বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি এবং সিনেমাটি হয় বক্স অফিস হিট। এরপরে ১৯৯১ সালে “হাম” সিনেমার পরে এই যুগলকে পর্দায় আর একসাথে দেখা যায়নি।

সাফল্যের ছোঁয়ায় বড় হতে লাগলো রজনীর ক্যারিয়ার। আশি এবং নব্বইয়ের দশকে একের পর এক বানিজ্যিক ভাবে সফল সিনেমা উপহার দিয়ে যাচ্ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিকে। সাউথ ইন্ডিয়াতে উপাধি পেয়ে গেলেন “থালাইভা”। তামিল এই শব্দের অর্থ বস, লিডার বা স্যার। তামিল রাজ্যগুলোতে মোটামুটি একটা বিশাল পরিচিতি লাভ করে ফেলেছেন ততদিনে। টলিউড ছাড়িয়ে নামডাক তখন বলিউডেও ছড়িয়ে পরেছিল। একটা সময় এই সাফল্যের খারাপ দিকটা থেকে বাকি সকল অভিনেতার মতো, রজনীকান্তও নিস্তার পাননি। অনেকবার মদ্যপান করে সিনেমার সেটে পৌছেছেন এই অভিনেতা। সিল্ক স্মিতার সাথে প্রেমে জড়িয়ে জীবনে প্রথম কন্ট্রোভার্সির স্বীকার হন।

রজনীকান্তের অভিনয় জীবনের পথটাও ছিল বন্ধুর। নিজের লেখা প্রথম চিত্রনাট্য “ভালি”, যা বক্স অফিসে তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। তার পরেই “বাবা” সিনেমার অসফলতা রজনীকান্তের মন ভেঙ্গে দিয়েছিল। বলে রাখা ভাল, যেকোনো সিনেমা বক্স অফিসে অসফল হওয়ার সকল দায়ভার নিজের কাঁধে নেন এই অভিনেতা। শুধু তাই নয়, ডিস্ট্রিবিউটরদের টাকা ফেরত দেন নিজের পকেট থেকে। বারবার এই অসফলতার ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে অভিনয় জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নেন এই সুপারস্টার।

তামিল সিনেমা “বিল্লা”, যা হিন্দি সিনেমা ডন (১৯৭৮) এর রিমেক, এটি দিয়ে ডিরেক্টর আর কৃষ্ণমূর্তির হাত ধরেই আবারো তামিল সিনেমায় সাড়া জাগান রজনীকান্ত। ৮০’র দশকে তখন বিগ বি’র পাশাপাশি রজনীকান্তের নাম জপছেন ডিরেক্টরেরা। এরপরেও আরো বেশকবার অভিনয় থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে চেয়েছেন রজনী, কিন্তু ওই যে, ভাগ্যদেবতার খেলা যে এখনো শেষ হয়নি! সে সাথে অভিনয়ের প্রতি গভীর আসক্তি থেকে বের হয়ে আসতে পারছিলেন না তিনি নিজেই। থেমে থাকেনি অভিনয় যাত্রা কখনোই।

২০০৫ সালে তার তামিল সিনেমা “চন্দ্রমুখী” দিয়ে সকল নিন্দুকের মুখ বন্ধ করে দিয়েছিলেন রজনীকান্ত। “চন্দ্রমুখী” তামিল ইন্ডাস্ট্রি, ২০০৭ সাল পর্যন্ত দাপিয়ে গেছে এবং বলা হয় লংগেস্ট রানিং ফিল্ম অফ তামিল ইন্ডাস্ট্রি। এরপরেই জুন ১৫, ২০০৭ এ আসে “শিবাজিঃ দ্যা বস”। দুই বছর ধরে নির্মান করা “শিবাজিঃ দ্যা বস” রজনীকান্তের সকল বক্স অফিস রেকর্ড ভেঙ্গে দিল। যদিও রেকর্ড তৈরী রজনীকান্তের জন্য নতুন কিছু না। শিবাজি সিনেমার মাধ্যমে তিনি হয়ে গেলেন বিশ্বের দ্বিতীয় এবং এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত অভিনেতা। প্রথমজন হলেন জ্যাকি চ্যান। ৫৯ কোটি রুপি পারিশ্রমিক নিয়ে এই স্থান নিয়ে নেন সুপারস্ট্যার রজনীকান্ত।

বিশ্বসুন্দরী ঐশ্বরিয়ার বিপরীতে ২০১০ সালে ৬০ বছর বয়সে বলিউডের সবচেয়ে বড় বাজেটের সিনেমায় অভিনয় করে আবারো জানান দিলেন, বয়স? সে তো কেবল দুটি সংখ্যা মাত্র। বলিউডের কিং শাহরুখ খানের চেন্নাই এক্সপ্রেস সিনেমার “ লুংগি ড্যান্স” শোনেনি এমন মানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। শাহরুখ তার সিনেমা চেন্নাই এক্সপ্রেসের এক প্রমোশনে এই গান সম্পর্কে বলেছেন। চেন্নাই নিয়ে সিনেমা হবে আর তাতে সুপারস্টার রজনীকান্তের উল্লেখ থাকবে না, তাতে সিনেমা অনেকটা অসম্পূর্ন বলেই মনে করেছিলেন শাহরুখ। তাই হানি সিং যখন এই গান নিয়ে শাহরুখের কাছে আসেন, তখনি শাহরুখ ফোন করেন সৌন্দরিয়া, রজনীকান্তের কন্যাকে। তাকে ফোনে এই সম্পর্কে জানান এবং রজনীকান্তসহ পরিবারের সকলের অনুমতি নিয়ে এই গান রেকর্ড করান। হানি সিং তার এই গানের জন্য কোনো পারিশ্রমিক নেননি বলেও জানা যায়।

পুরষ্কারের তালিকা? সে তো বিশাল! ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ উপাধি পদ্মভূষন প্রাপ্ত অভিনেতা রজনীকান্থ। এনডিটিভি দিয়েছে লিভিং লেজেন্ড উপাধি। শুধু পুরষ্কার নয় তার প্রাপ্তির খাতায় আছে অনেক কিছুই। রজনীকান্থের জীবনকাহিনী সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন এর কোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। “ফ্রম বাস কন্ডাক্টর টু সুপারস্টার” শিরোনামে অধ্যায়টি রয়েছে কাজের মর্যাদা বিভাগের মধ্যে। এক ইন্টারভিউতে তিনি বলেছেন- প্রতি সিনেমা শেষেই তিনি কিছু দিনের জন্য হিমালয়ের গ্রামে থাকতে চলে যান। ব্যাপারটা অনেকটা মেডিটেশনের মতোই।

শুধুমাত্র সিনেমা জগতে নন, রজনীকান্ত বাস্তব জীবনের হিরো হিসেবেও নাম্বার ওয়ান। চেন্নাইয়ের বন্যার সময় তিনি তার ভক্তদের কাছে অনুরোধ করে তার জন্মদিন পালন না করে তার সমস্ত টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিতরন করতে। একজন সুপারস্টার হওয়া সত্ত্বেও তার জন্য সিনেমার শ্যুটিং কখনোই আটকে থাকেনি। “ফ্যাশনেবলি লেইট” ব্যাপারটার একদমই বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি।

রজনীকান্তের ফ্যান-ফলোয়ার্স এর বিস্তৃতি পুরো ভারত জুড়েই। পুরো সাউথ ইন্ডিয়াতে যাকে মোটামুটি দেবতারূপে পূজা করা হয়, তার ফ্যানবেসের পাগলামি ঠিক কতটা হতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ আশা করি কারোরই নেই। ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো অভিনেতার জন্য এমন ফ্যান ক্রেজ দেখা যায়নি। “কাবালি” সিনেমা রিলিজের দিন চেন্নাই ও ব্যাঙ্গালুরুর কিছু কোম্পানিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়, যাতে সিনেমার প্রিমিয়ার মিস না হয় কোনো কর্মচারিরই। ২০১১ সালে যখন রজনীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে, তাকে সিংগাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। সে সময়ে এক ভক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে যায়, যাতে তার কিডনি নিয়ে রজনীকান্তের চিকিৎসা চালানো যায়।

“লিঙ্গ” সিনেমার শুট্যিং এর জন্য হংকং যাচ্ছিলেন রজনী। এই খবর জানা মাত্র দেড় লক্ষ রুপি খরচ করে সেই একই প্লেইনে হং কং এর এয়ার টিকেট কিনে নেয় নিজের এবং পরিবারের জন্য, জয়স্লিন নামের এক রজনী ভক্ত। শুধুমাত্র একই বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া হবে যেখানে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন সুপারস্টার রজনীকান্ত, এই লক্ষ্যে এমন ব্যয়বহুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলে জানিয়েছিল জয়স্লিন। এই খবর রজনীকান্তের কানে পৌছানোর পরে তিনি নিজেই এই ভক্তের সাথে যাত্রাপথে কথা বলেন এবং যাত্রাশেষে ছবি তুলেন পুরো পরিবারের সাথেই। জয়স্লিনের স্ত্রীর অনুরোধে সানগ্লাস দিয়ে রজনী তার সিগন্যেচার স্টাইলও দেখিয়েছিলেন। সেই সানগ্লাস এখনো জয়স্লিন যত্নের সাথে রেখেছেন এবং ব্যবহার দূরে থাক, সানগ্লাস ছুঁয়ে দেখার অনুমতিও কাওকে দেননি তিনি। এমন আরো শত শত ভক্তদের পাগলামীর গল্প রয়েছে, যা বলে বা লিখে শেষ করা যাবেনা কখনোই। সুপারস্টার হয়তো আছে অনেকেই, আছে তাদের বিশাল ফ্যানবেস। কিন্তু এমন পাগল ফ্যানবেস মনে হয় কেবল রজনীকান্তেরই আছে।

অন্যান্য অনেক অভিনেতার মতোই ধূমপান, মদ্যপানের অভ্যাসে অভ্যস্থ ছিলেন রজনীও। একটা সময়ে শরীরে ঘর বাঁধল ক্যান্সারের জীবাণু। কিন্তু মানুষটা তো যেনো-তেনো কেউ নন। রজনীকান্ত বলে কথা। ক্যান্সারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একের পর এক হিট দিয়ে যাচ্ছেন; তাও আবার এই বয়সে হিরোর রোলেই।

৭৫০ রুপি প্রতি মাসে, সেখান থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক প্রাপ্ত, ১৬০ এর বেশী সিনেমায় অভিনয় করা সুপারস্টার রজনীকান্ত জীবনযাপন করেন খুবই সাধারণ ভাবে। হয়ত এই সাধারণ জীবনযাপনের জন্যই আর তার অসাধারণ অবদান, সিনেমা জগত এবং বাইরের জগতে, তাকে মানুষের কাছে পূজনীয় করে তুলেছে। নিজের প্যাশনকে আঁকড়ে ধরে কীভাবে শিখরে পৌছানো যায়, তার উদাহরণ হচ্ছেন রজনীকান্ত।

শেষটা আরেকটা রজনীকান্ত স্পেশাল কৌতুক দিয়েই করি। একবার রজনীকান্ত হেলিকপ্টারে করে সুইজারল্যান্ড যাচ্ছিলেন। সুইজারল্যান্ডে গিয়ে ল্যান্ডিং এর আগে ভুলবশত তার ওয়ালেটটা নিচে পরে যায়। যায়গাটি এখন সুইস ব্যাংক নামে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত।

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...