‘বড় ভাই’ সিন্ডিকেটের শঙ্কায় ছাত্রদলের কাউন্সিল

পিবিএ ডেস্ক: চারদিন পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ছাত্রদলের ষষ্ঠ কাউন্সিল। কিন্তু বিএনপির হাইকমান্ড শত চেষ্টা করেও সিন্ডিকেটের বাইরে আনতে পারছে না নেতৃত্ব বাছাইয়ের এ নির্বাচন। আগামীর নেতৃত্বও ‘বড় ভাই’ বা ‘সিন্ডিকেট’ নিয়ন্ত্রণে থাকারই শঙ্কা খোদ ছাত্রদলের নেতাদের।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ড বিশেষ করে লন্ডনে নির্বাসিত দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আপ্রাণ চেষ্টার পরও নেতৃত্ব নির্বাচনে তথাকথিত সিন্ডিকেটের বাইরে যেতে পারছে না ছাত্রদল। দীর্ঘ ২৭ বছর পর আন্দোলন-সংগ্রামে এক সময়ে বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উদ্যোগ নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি প্রশ্নে আন্দোলনে ব্যর্থতার পর হঠাৎ এক সময়ের অত্যন্ত শক্তিশালী এ সংগঠনটির দিকে নজর দেয় দলটির হাইকমান্ড।

সেই কারণে এবারই প্রথম কাউন্সিল ও নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচনে এ উদ্যোগ। ছাত্রদলের নেতৃত্ব নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সংগঠনের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সমন্বয়ে কয়েকটি কমিটিও গঠন করে দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক ও ভোটের মধ্যদিয়ে সংগঠনটির আগামীর নেতৃত্ব বের করে আনা।

বিএনপি ও ছাত্রদলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদলের কাউন্সিল স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করতে তারেক রহমানের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। যেকোনো মূল্যে বিতর্কের ঊর্ধ্বে একটি কাউন্সিল দেখতে চান তিনি। যে কারণে দলের দায়িত্বপ্রাপ্তরা অনেকটা সর্তক অবস্থানে। তবে নেপথ্যে থেকে ‘বড় ভাই’ এবং ‘সিন্ডিকেট’ সদস্যরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নেতা বানাতে মরিয়া।

আলোচনায় আছে, সভাপতি পদে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি বর্তমানে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু সমর্থিত প্রার্থী। হাফিজুর রহমান হাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সমর্থিত। মো. ফজলুর রহমান খোকন বিতর্কিত ‘হাওয়াভবন’র অন্যতম সহযোগী বগুড়ার আতিকুর রহমান রুম্মন ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির নতুন সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সমর্থিত প্রার্থী। মো. এরশাদ খান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সমর্থিত প্রার্থী। এছাড়াও বাকি প্রার্থীরাও কেউ না কেউ বিভিন্ন নেতার আশীর্বাদপুষ্ট বলে আলোচনা রয়েছে।

এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থীদের মধ্যে জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল) ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বর্তমানে যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন সমর্থিত প্রার্থী। তানজিল হাসান ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি হাসান মামুন সমর্থিত। শাহ নেওয়াজ বৃহত্তর নোয়াখালী বিশেষ করে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু সমর্থিত প্রার্থী বলে আলোচিত।

মো. ইকবাল হোসেন শ্যামল ছাত্রদলে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টুর আশীর্বাদপুষ্ট বলে জানা যায়। মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম) ছাত্রদলের বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন সমর্থিত প্রার্থী। আমিনুর রহমান আমিন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ সমর্থিত প্রার্থী।

উল্লিখিত প্রার্থী ছাড়াও বাকি সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীরাও কেউ কেউ বিএনপির হেভিওয়েট কোনো নেতার আশীর্বাদপুষ্ট বলে ছাত্রদলে আলোচনা রয়েছে। ছাত্রদলের কাউন্সিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘জাতীয়-উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি পেশাজীবীদের নির্বাচনও সুষ্ঠু ও অবাধ হচ্ছে না। আসলে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন নেই। আমরা ছাত্রদলের নেতৃত্ব বাছাইয়ের নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই।

‘ছাত্রদলের আগামী কমিটিও সিন্ডিকেটের কবলে কী না’ এমন প্রসঙ্গ ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন বলেন, ‘আমরা এই নির্বাচনটা বির্তকের ঊর্ধ্বে রাখতে চাই। ইতোমধ্যে অবশ্য অনেকেই চেষ্টা করছেন নির্বাচনটা বির্তকিত হোক। তবে আমি মনে করি, এ নির্বাচনকে বিতর্কিত করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ ভোট দেবেন ছাত্রদলের কাউন্সিলররা। যারা বিভিন্ন জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ছা্ত্রদল নেতারা।

ছাত্রদলের কাউন্সিলের প্রধান নির্বাচন কমিশানার বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, আমাদের দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একটা সফল কাউন্সিলের দিকে যাচ্ছি। তাকে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমাদের বিরোধী পক্ষ নানাভাবে ছাত্রদলে কাউন্সিলকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমরা সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে গিয়ে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন করবো, ইনশাল্লাহ।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যারা

ছাত্রদলের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, হাফিজুর রহমান, মাহমুদুল হাসান বাপ্পী, রিয়াদ মো. তানভীর রেজা রুবেল, মো. এরশাদ খান, মো. ফজলুর রহমান খোকন, এসএম সাজিদ হাসান বাবু, এবিএম মাহমুদ আলম সরদার মোট ৮ জন। এছাড়া, পরবর্তিতে আপিলের মাধ্যমে সভাপতি পদে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন মো. মামুন খান।

এদিকে, ১৯ সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জুয়েল হাওলাদার (সাইফ মাহমুদ জুয়েল), আমিনুর রহমান আমিন, তানজিল হাসান, শেখ আবু তাহের, জাকিরুল ইসলাম জাকির, মোহাম্মদ কারিমুল হাই (নাঈম), মাজেদুল ইসলাম রুমন, ডালিয়া রহমান, শাহ নাওয়াজ, সাদিকুর রহমান, কেএম সাখাওয়াত হোসাইন, সিরাজুল ইসলাম, মো. ইকবাল হোসেন শ্যামল, মুন্সি আনিসুর রহমান, মো. মিজানুর রহমান শরিফ, শেখ মো. মশিউর রহমান রনি, মোস্তাফিজুর রহমান, সোহেল রানা, কাজী মাজহারুল ইসলাম।

আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রদলে ৬ষ্ঠ কাউন্সিলে এই দুটি পদে ভোট হবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১২ সেপ্টেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা প্রচার চালাতে পারবেন। ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোটে অংশ নেবেন সংগঠনটির সারাদেশের ১১৭টি ইউনিটের ৫৮০ জন কাউন্সিলর।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সাবেক ছাত্রদল নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি ও শামসুজ্জামান দুদু’র নেতৃত্বে ৩ সদস্যের আপিল কমিটির দায়িত্ব পালন করেন।

পিবিএ/বিএইচ

আরও পড়ুন...