মিলারদের কারনেই বেড়েছে চালের দাম

পিবিএ,ঢাকা: অতি মুনাফার লোভে মিলাররা কারসাজি করে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়েছে ৪-৬ টাকা। যা দুই সপ্তাহ পরও বাড়তিই আছে। এদিকে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আনতে বৃহস্পতিবার মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য ও খাদ্যমন্ত্রী। এরপর দুই দিন অতিবাহিত হলেও চালের দাম কমেনি। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই দিন আগেই মিলাররা বলেছেন, নির্বাচন ঘিরে পরিবহন সংকটের কারণে চালের সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় চালের দাম বেড়েছে। আর নির্বাচনের পর ধানের দাম বেশি এই অজুহাতে চালের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন মিল মালিকরা। তবে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য ও খাদ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠকে তারা বলেছেন, মিল পর্যায়ে চালের দাম বাড়েনি।

তবে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছে।

নির্বাচনের তিন দিন আগেই মিলাররা বাজারে চালের সরবরাহ কমিয়ে দেয়। সে সময় মিলাররা পরিবহন বন্ধের অজুহাত দেখায়। কিন্তু পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকার পরও এখন পর্যন্ত চালকল মালিকরা বাজারে চালের সরবরাহ বাড়ায়নি। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমছে না। তারা বলছেন, মিলাররা ভেবেছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়ায় সরকারি দলের সঙ্গে এক ধরনের কোন্দল হবে।

এতে দেশের পরিবহন সেক্টর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। আর এই সুযোগে তারা কারসাজি করে চালের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা লুটবে। কিন্তু এ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলেও মিলাররা নানা অজুহাতে অতি মুনাফা করছে। এ কারণে ভোক্তারা বেশি দামে চাল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

জানা গেছে, ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারি গুদামে খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ১৩ লাখ ৫৪ হাজার টন। এর মধ্যে চাল ১১ লাখ ৭৯ হাজার টন ও গম ১ লাখ ৭৫ হাজার টন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, দেশে খাদ্যশস্যের মজুদ সন্তোষজনক। মাসিক চাহিদা ও বিতরণ পরিকল্পনার তুলনায় পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। এ মুহূর্তে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি নেই বা ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, সদ্য শেষ হওয়া আমন মৌসুমে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এ মৌসুমে ৫৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫৯৪ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। আর আউশ ও বোরোর ফলনও ভালো হয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা মণে ধান বিক্রি হচ্ছে। ফলে বাজারে ধান ও চালের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। এ অবস্থায় চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই।

মিলাররা শনিবার বিআর-২৮ চাল প্রতি কেজি ৩৫ টাকায় বিক্রি করেছে। দুই সপ্তাহ আগে এ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩০ টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৭ টাকায়। দুই সপ্তাহ আগে যা বিক্রি হয় ৩২ টাকায়। মিল পর্যায়ে এ চালের দাম বাড়ায় পাইকারিতে কেজিতে দাম বেড়েছে ৬ টাকা। যা এখন পর্যন্ত কমেনি। শনিবার খুচরা পর্যায়ে একই চাল বিক্রি হয়েছে ৪২-৪৪ টাকা কেজি। আর দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩৮-৪০ টাকায়।

এ ছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা মিল পর্যায়ে শনিবার বিক্রি হয়েছে ৩৩ টাকা কেজি। দুই সপ্তাহ আগে এ চাল বিক্রি হয় ৩০ টাকা কেজি। পাইকারি বাজারে একই চাল শনিবার বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা। দুই সপ্তাহ আগে এ চাল প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৩২ টাকায়। শনিবার খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়। যা দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয় ৩৪-৩৬ টাকায়। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৪ টাকা।

রাজধানীর চালের বৃহৎ পাইকারি আড়ত বাবুবাজার-বাদামতলীর আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, নির্বাচনের সময় বিভিন্ন কারণে মোটা ও চিকন চালের দাম কেজিতে দুই থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। দেশের বড় বড় মিল ও আড়তদাররা আছেন তারা যদি সিদ্ধান্ত নেন চালের দাম আর বাড়বে না। তাহলে আর বাড়ার সুযোগ নেই। তারা যদি বলেন, কেজিতে এক থেকে দুই টাকা কমবে তাহলে কাল থেকেই কমে যাবে। কারণ সারা বাংলাদেশে তারাই চালের জোগান দিয়ে থাকেন।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...