পিবিএ ডেস্ক: পানির বদলে মাছের বৃষ্টি, এ-ও কি সম্ভব? এই অদ্ভুত অবিশ্বাস্য ব্যাপারটি হন্ডুরাসে হয়ে আসছে প্রায় ১০০ বছর ধরে। ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি কোন এক বছরের মে কিংবা জুন মাসে ইউরো শহরে প্রচণ্ড ঝড় হয়, ভারি বৃষ্টিপাত আর বজ্রের গর্জনে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। ঝড় থেমে যাবার পর শহরের লোকজন রাস্তায় বের হয়ে ভারি অদ্ভুত একটি দৃশ্য দেখতে পায়। জলজ্যান্ত মাছ রাস্তায় লাফালাফি করছে, তাও এক-দুইটি নয়, শত শত!
ইউরো শহরে মাছ বৃষ্টি।
আর এটা মাঝে মধ্যে নয়, প্রত্যেক বছরই রাস্তা-ঘাটে, বাড়ির সামনে, ছাদে লাখ লাখ মাছ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকেন হন্ডুরাসের মানুষ।
প্রতি বছরই হন্ডুরাসের বিভিন্ন জায়গায় বছরের মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে এমন ‘মাছ বৃষ্টি’ হয় ।
স্থানীয়রা এই ঘটনাকে বলেন ‘জুভিয়া দে পেতেস’ (Lluvia de Peces)। স্প্যানিশ এই শব্দটির অর্থ হল ‘মাছের বৃষ্টি’। শুধু মাছ-ই নয় আকাশ থেকে ঝরে পড়তে থাকে ব্যাঙ, স্কুইড ও আরও অনেক কিছু! স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মে থেকে জুলাই মাস এ সময় রীতিমতো লোকজন নামিয়ে রাস্তাঘাট পরিষ্কার করাতে হয়।
জানা যায়, একটা সময় পর্যন্ত এ অঞ্চলের বহু মানুষ বিশ্বাস করতেন, এক সন্তের আশির্বাদেই এমনটা (মাছ বৃষ্টি) হয়। ১৮৫৬ থেকে ১৮৬৪ সাল এই সময়ের মধ্যে খ্রীষ্ট ধর্মযাজক হোসে সুবিরানা হন্ডুরাসে আসেন। সে সময় এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ অত্যন্ত দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাতেন। ওই সমস্ত দারিদ্র লোকদের দুর্দশা দূর করতে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থণা করেন তিনি। হোসে সুবিরানার প্রার্থণার পর থেকেই দারিদ্রের কষ্ট দূর করতে সৃষ্টিকর্তা আকাশ থেকে ‘মাছের বৃষ্টি’ বর্ষণ করেন বলে বিশ্বাস করতে শুরু করেন ওই অঞ্চলের মানুষ।
অনেকেরই প্রশ্ন কেন ‘মাছের বৃষ্টি’ হয় হন্ডুরাসে?
শোনা যায়, ১৯৭০ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের পক্ষ থেকে একটি বিশেষ দলকে পাঠানো হয় হন্ডুরাসে। ওই দলের সদস্যরা এই ‘মাছের বৃষ্টি’র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ওই সদস্যরা জানান, এই অঞ্চলে আকাশ থেকে যেসব মাছের বৃষ্টি হয়, তা কোনো সমুদ্রিক মাছ নয়। সেগুলো মিষ্টি জলের মাছ। অর্থাৎ, আকাশ থেকে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়া মাছগুলো কোনো নদী, পুকুর বা হ্রদের মতো মিষ্টি জলের জলাশয়ের মাছ। শুধু তাই নয় বেশির ভাগ মাছই প্রায় একই প্রজাতির। যদিও ১৯৭০ সালে হন্ডুরাসে ‘মাছের বৃষ্টি’র সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সদস্যদল পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেনি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল কর্তৃপক্ষ। তথ্যসূত্র, জিনিউজ।
প্রতি বছর যে অঞ্চলের এক- দু’বার ‘মাছ বৃষ্টি’ হয়, সেখান থেকৈ আটলান্টিক মহাসাগর প্রায় ২০০ মাইল দূরে।
এ বিষয়টি নিয়ে অনেকে মনে করেন, সামুদ্রিক ঝড় বা টর্নেডো আটলান্টিক মহাসাগরের বিভিন্ন অংশের মাছ উড়িয়ে এনে ওই অঞ্চলে এনে ফেলে। এমন ঘটনা প্রতি বছর কী করে সম্ভব তা নিয়ে এখনো যথেষ্ট ধোঁয়াশা রয়েছে। ফলে আসলে ঠিক কীভাবে এই ‘মাছ বৃষ্টি’ হয়, তা নিয়ে রহস্য থেকেই যাচ্ছে।
পিবিএ/ইকে