পিবিএ, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম এখন মাদক দ্রব্য পাচারে আর্ন্তজাতিক রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে মাদককারবারীদের কাছে। সড়ক-নৌ পথ ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চলে যাচ্ছে এসব মাদকদ্রব্য। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন হাজার-হাজার পিচ ইয়াবা,গাঁজা,মদসহ বিভিন্ন মাদক পাচার হচ্ছে।
পরিবহনে সহজ হওয়া সবচেয়ে বেশি আসছে ইয়াবা। আর মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে সীমান্তবর্তি এলাকার গরিব-নিরীহ মানুষদের। মাদক বহন ব্যবহার হচ্ছে নারী-পুরুষ,যুবক,কিশোর এবং শিশুদের। এতে করে মাদক প্রতিরোধে এক প্রকার হিমশীম খেতে হচ্ছে আইনশৃংখলা বাহিনীদের। ইতোমধ্যে রৌমারী উপজেলা দিয়ে নিরাপদ ও আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ব্যবহার করছে মাদক পাচারকারী চক্র গুলো।
এখানে ভারতের আসাম-মেঘালয় রাজ্যের নিকটবর্তি পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় অনায়সে আসছে ইয়াবার বড়-বড় চালানসহ গাঁজা। রাতের আধারে বিএসএফসহ ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীরা কাঁটাতারের উপর দিয়ে ইয়াবা, গাঁজা, হেরোইনসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পার করে দেবার অভিযোগও উঠেছে। বাংলাদেশী মাদক ব্যবসায়ী সীমান্তের লোকজনকে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে মাদকদ্রব্য নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন।
প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে জানাযায়,জেলার ৭টি উপজেলার প্রায় ৬০টি পয়েন্ট এবং ভারতের ৪৫টি পয়েন্ট দিয়ে আসে মাদক। আর এসব মাদকদ্রব্য একাধিক হাতবদল হয়ে চিলমারী-রৌমারী এবং রাজিবপুর দিয়ে নৌ-সড়ক পথে চলে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
অনুসন্ধানে জানাযায়, মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্ধ লেনদেন করছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ইয়াবা সিন্ডিকেট চক্র হুন্ডির মাধ্যমে ভারতে অর্থ পাঠাচ্ছেন। ফলে প্রায় প্রতিদিনেই আসছে ইয়াবা,গাঁজা,হেরোইন,ফেন্সিডিল,মদসহ মাদকদ্রব্য। তবে পরিবহনে সহজলভ্য হওয়ায় অন্যান্য সীমান্তর তুলনায় রৌমারীর সীমান্ত দিয়ে বিপুল পরিমাণে ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। ভারত-বাংলাদেশের যেসব সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আসছে মাদকদ্রব্য। বাংলাদেশের রৌমারী-রাজিবপুর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৪৬কি.মি সীমান্ত এলাকা জুড়ে রয়েছে বালিয়ামারী,মাখনেরচর,আলগারচর,খেওয়ারচর,বকবান্দা,ঝাউবাড়ি,বড়াইবাড়ি, চরফুলবাড়ি, নওদাপাড়া,খাইটয়ামারী,চর বামনেরচর,বেহুলারচর,গয়টাপাড়া, চর বোয়ালমারী,ধর্মপুর,খেতারচর, চর গয়টাপাড়া ও ডিগ্রীরচর।
আর ভারতের সীমান্ত পয়েন্ট হলো-শিংমারী,শিশুমারা,আসামের আলগা,গোধুলী,দ্বীপচর, কুকুরমারা,দিয়ারারচর, ঢালেরচর, কুসনিমারা, জোরডাংগা,সোনারপারা,মানকারচর,কাঁকরিপারা,কালাইরচর।
ফুলবাড়ি উপজেলার ৩৬কি.মি. সীমান্ত এলাকায় গোরকমন্ডল,কিসনান্দ বকসী,বালাটারী,বজেরকুটি,খলিশ কোটাল, করুষা-ফেরুষা,গাজিরটারী,রৌসন শিমুলবাড়ী,নন্দির কুটি,জুম্মার মোড়,চাঁন্দের বাজার,থোসবিদ্যাবাগিস,চোত্তাবাড়ি মোড়,নাখারজান,আজোয়াটারী,কাশিয়াবাড়ি,কাশিপুর,অনন্তপুর এবং উত্তর অনন্তপুর।এখানে ভারতের সীমান্ত পয়েন্ট হলো-নয়ারহাট,মরাকুটি,খাবিদা হাবিদা,নারায়ণগঞ্জ,কিসামত করলা,দোল দেবিরপাট,ভাটিয়ারমোড়,বসকোটাল, থরাইখানা, ধাপরারহাট, সেউতি-১ ও সেউতি-২, চৌধুরীরহাট এবং সাহেবগঞ্জ।
নাগেশ^রীর উপজেলায় সীমান্ত এলাকা প্রসাদের কুটি,নাগরাজ,মডায়টারী,শিঙ্গের ভিটা,চাটাম,সুভারকুটি,বালাবাড়ি, ধলুয়ারবাড়ি,বালারহাট।এখানে ভারতের সীমানা পয়েন্ট হলো-বিন্নছড়া,নালিয়া,বামনহাট,চৌধুরীরহাট, গোলকগঞ্জ।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সীমান্ত এলাকা শিংঝাড়,শালঝোড়,দিয়াডাঙ্গা,রাঙ্গালেরকুটি,বাগভান্ডার,বাশজানি,পাগলার হাট। এবং ভারতের সীমান্ত পয়েন্ট মশালডাঙ্গা, সাহেবড়ঞ্জ এবং কালজানি।
সীমান্তে ভারতীয় সীম ব্যবহার করে বাংলাদেশী-ভারতীয় মাদক ব্যবসায়ীরা আলাপচারিতা করে। ফলে স্থানীয় প্রশাসনও বলতে পারে না কারা এগুলোর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। বিএসএফ কিংবা মাদক ব্যবসায়ীরা ফোনে যোগাযোগ করে দিনে বা রাতের বেলায় ক্রিকেট বলের মতো স্কচ টেপ পেচিয়ে, সিগারেটের প্যাকেটে করে, প্লাষ্টিকের ছোট-ছোট প্যাকেট ভরে ইয়াবা কাঁটাতারের উপর দিয়ে ঢিল মেরে ফেলে দেয়।
আর বহনকারীরা সংকেত পেয়ে কৃষক বা রাখালের ছদ্মবেশে এসব মাদক নিয়ে আসছে অনায়সে। মাদক নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর জন্য ৫/১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়ায় খাটাচ্ছে সীমান্ত এলাকার নারী-পুরুষ,শিশু-কিশোররা।এতে সীমান্তের অনেকেই রাতারাতি স¤পদের মালিক বনে যাচ্ছেন। সীমান্ত এলাকায় অর্থের লোভে পড়ে স্থানীয়রা জড়িয়ে পড়ায় মাদক এখন সহজলভ্য হয়ে পড়ছে জেলার অধিকাংশ এলাকায়।
সীমান্তে ইয়াবা পাচারে মহিলারাই বেশি জরিত। কেননা তারা গরু-ছাগলকে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে ইয়াবার প্যাকেট বুকের মধ্যে বা শরীরের বিভিন্ন অংশে লুকিয়ে পার করে থাকে। স্থানীয় অনেক জনপ্রতিনিধি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ায় মাদক নির্মূল করা যাচ্ছে না। কঠোর পদক্ষেপ নিতে গেলে বিজিবি’সহ প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেমে পড়ে।
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান পিবিএ’কে জানান, সচেতনতা বৃদ্ধিসহ অভিযান জোড়দার করা হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীসহ মানিলন্ডারিংকারীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে এবং দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি আশ^াস দেন।
পিবিএ/মনিরুল ইসলাম বাবু/ জেডআই