পিবিএ, ফরিদপুর: ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাটকে পূর্ণাঙ্গ নৌ বন্দর ঘোষণা করার চার বছর পেরিয়ে গেলেও অদ্যবদি সরকারীভাবে কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। এমনকি শীত মৌসুমের আগেই নাব্যতা সংকটে প্রায় অচল হতে বসেছে বন্দরটি।
২০১৫ সালে পদ্মা নদীর তীরে ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাটকে “ফরিদপুর নদীবন্দর” ঘোষনার পর শতবছরের ঐহিত্যবাহী এঘাটটিকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছিল এ বন্দর দিয়ে পন্য আনয়ন ও প্রেনরকারী ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও প্রত্যাশা করেছিলো বন্দরের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে ঘিরে তাদের জীবন মান উন্নয়নের। দীর্ঘ সময়েও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন না হওয়ায় হতাশ বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
বন্দর ইজারাদার কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি নাফিজুর রহমাস তাপস জানান, বর্তমান সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী ইঘ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের প্রচেষ্টায় সিএন্ডবি ঘাট ফরিদপুর নদী বন্দরে উন্নীত হয়েছে ২০১৫ সালে। বর্তমানে চট্রগ্রাম, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন বন্দর থেকে সরাসরি পণ্য আসে ফরিদপুর নদী বন্দরে। এবং ফরিদপুর থেকে প্রতিদিন গরু, ধান ও পাটসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। তিনি দাবী করেন বিভিন্ন বন্দর থেকে সিমেন্ট, বালু, কয়লা, রডসহ কমপক্ষে ৫০ ধরণের পণ্য আনা-নেওয়া করা হয়। তিনি বলেন, নাব্যতা সংকট দুরীভূত না হলে মালামাল পরিবহন কমে যাবে, এতে কমে যাবে রাজস্ব আদায়ও। অতি সত্ত্বর নদীটি ড্রেজিং করে ফরিদপুর নৌবন্দরে পন্যবাহী জাহাজ যাতায়াতের সুব্যবস্থা করার পাশা-পাশি বন্দরের নূন্যতম সুযোগ সুবিধা প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
ফরিদপুর নৌ বন্দরের কয়লা ও রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, বিআইডাব্লুউটিয়ের উদাসিনতায় অদ্যবদি সংস্থাটির নিজস্ব কোন স্থায়ী জায়গা বা অফিস হয়নি, নেই সংযোগ সড়কও। তিনি বলেন, একটি মাত্র পন্টুন দিয়ে ধীর গতিতে খালাস হচ্ছে বন্দরের আসা কয়েকশ জাহাজ ও পন্যবাহী কার্গোর মালামাল।
জাহাজের নাবিক মো. দীন ইসলাম জানান বন্দরে সার, সিমেন্ট, চাল, পাথর, কয়লা, বালুসহ বিভিন্ন ধরনের পন্যবাহী জাহাজ গুলো সারিবদ্ধ ভাবে অপেক্ষা থাকতে হয় পদ্মা নদীতে। এতে প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে এরুট দিয়ে পন্য বহনকারী জাহাজ-কার্গোর মালিক ও পন্য সরবরহকারী ব্যবসায়ীদের। পাশা পাশি বন্দর সচল না থাকায় কর্মহীন হয়ে পড়ছে ঘাট শ্রমিকরা।
কুষ্টিয়ার সিমেন্ট ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান জানান, সময় মত মালামাল না আসায় ও আটকে থাকা নৌযান থেকে ছোট ছোট নৌযান ব্যবহার করে পণ্য খালাস করে ঘাটে আনায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
ফরিদপুর নদী-বন্দরের কুলি শ্রমিকের সরদার জাফর শেখ জানান, এই বন্দরের ছয় হাজার বেশি শ্রমিকের জীবন-জীবিকা রয়েছে। যাদের একটি বড় অংশ এখন অলস সময় কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, নদীর নাব্যতা না থাকায় কার্গো জাহাজ এখন কম আসছে। এতে বেকার হয়ে পড়ছে শ্রমিকরা।
বিআইডব্লিউটিএ এর পোর্ট অফিসার সেলিম রেজা ফরিদপুর বন্দরের বিষয়ে বলেন, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে আমরা এরই মধ্যে জরিপের কাজ শুরু হয়েছে। জরিপ শেষে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। এছাড়াও এই বন্দরের বড় ধরণের উন্নয়ন কাজের জন্য ইতিমধ্যেই বড় ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।
পিবিএ/ এমআইটি/এসআই