সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে হুড়াসাগর নদী ভরাট করে আশ্রয়ন প্রকল্প

পিবিএ,সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চৌবাড়ীতে হুড়াসাগর নদী ভরাট করে আশ্রয়ন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সরকারি নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম তার একক সিদ্ধান্তে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) শিফা নুসরাত।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের কথিত অনুমোদন এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। কয়েক মাস আগে কামারখন্দে বলরামপুর ও চৌবাড়িতে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরই মধ্যে প্রকল্পের বালু ভরাট শেষ হয়েছে। ২৫ টি দুস্থ ও হতদরিদ্র পরিবারের আবাসন তৈরির জন্য কাঠ, টিনসহ অন্যান্য মালপত্র সংগ্রহন করা হয়েছে।

১০ পরিবারের জন্য চৌবাড়ী ইউনিয়নের বলরামপুরে ফসলি ৪৮ শতক খাস জমিতে বালু ফেলা শেষ হয়েছে। অপর ১৫ পরিবারের আবাসনের জন্য চৌবাড়ী গ্রামের দীপু চৌধুরীর বাড়ির অদূরে হুড়াসাগর নদীর পূর্ব পাড় থেকে নদীর অর্ধেকটা দখল করে বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।

সরকারের ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জেলার যমুনা, করতোয়া, বাঙালি, ফুলজোড়, হেুড়াসাগর সহ আরো কয়েকটি নদীতে প্রায় ১৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে খননের মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। যমুনার শাখা নদী হুড়াসাগর এক সময় প্রমত্তা থাকলেও বর্তমানে এটি শুরু খালে রূপ নিয়েছে।

নদীটি বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে করতোয়া নদীতে মিলেছে। সেচের পানি সংগ্রহে হুড়াসাগর নদী জেলার কৃষি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। মৎস্য সম্পদেও এ নদীটি অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক। এসব বিবেচনায় বিগত সময়ে মৎস্য বিভাগ থেকে বিভিন্ন অংশে খনন প্রকল্প নেওয়া হয়। এছাড়া ব-দ্বীপ পরিকল্পনা আওতায় আগামীতে হুড়াসাগর নদীটির প্রায় ৩৫ কিলোমিটার অংশ খননের পরিকল্পনা রয়েছে পাউবোর। এখন নদীটি ভরাট করে হত্যা করা হলে পাউবোর সেই পরিকল্পনা কোন কাজেই আসবে না।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে কারও মতামত না নিয়ে একক সিদ্ধান্তে (ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম নদী ভরাট করে এ আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরি করেছেন। এর আগেও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি তিনি কামারখন্দ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের দেওয়া এক বক্তব্যে, সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারি কোনো প্রকল্পের অনিয়মের তথ্য জানতে তার কাছে গেলে পূর্বানুমতি নিতে হবে। তার এমন বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে তিনি সমালোচনার মুখে পড়েন।
পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, হুড়াসাগর নদীতে বালু ভরাট করে প্রকল্প শুরুর আগে পাউবোর মতামত নেওয়া উচিত। যত্রতত্র খোঁড়াখুঁড়ি বা পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে বালু উত্তোলন ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে নিষিদ্ধ থাকলেও (ইউএনও) কিভাবে ধরনের কাজ করলেন তা আমাদের বোধগম্য নয়।

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, হুড়াসাগর নদী ভরাট করে আশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ একেবারেই অপরিকল্পিত। এটি ডেল্টা খনন পরিকল্পনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ প্রকল্প শুরুর আগে পাউবোর মতামত তো দূরের কথা কাজের নকশা (লেআউট) নিয়ে তাদের কাউকে ডাকা হয়নি। প্রকল্পটি বন্ধ করতে এরই মধ্যে প্রশাসনকে বলা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে কামারখন্দে এসিল্যান্ড শিফা নুসরাত বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের জমিটি খাস কৃষি জমি হিসেবে রেকর্ড রয়েছে। আর প্রকল্প গ্রহণের সময় তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় আমার পরিবর্তে (ইউএনও) দায়িত্বে ছিলেন।

(ইউএনও) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি শুরুর আগে পরে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা কয়েকদফা পরিদর্শন করেছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বী বলেন, নদীর গতিপথ বা পানি প্রবাহ বন্ধ এবং কৃষি জমি ভরাট করে প্রকল্প গ্রহণ সরকারি নীতিমালা বহির্ভূত। চৌবাড়ী আশ্রায়ন প্রকল্পটি আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখবো। প্রকল্পের কাগজপত্র ও জমির নকশা নিয়ে কামারখন্দে এসিল্যান্ডকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আসতে বলা হয়েছে।

পিবিএ/আব্দুল্লাহ আল মারুফ/ইকে

আরও পড়ুন...