চরভদ্রাসনে গরুর রশি ছেড়া উৎসবে মানুষের ঢল

পিবিএ, ফরিদপুর : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গীর পদ্মা নদীর চরে অনুষ্ঠিত হলো ঐতিহ্যবাহী গরু আড়ং উৎসব। যেখানে রশি ছেড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল রোববার বিকালে পৌষ সংক্রান্তী উপলক্ষে এ মেলার আয়োজন করা হয়।

উৎসবকে কেন্দ্র করে পদ্মা পাড়ের বিশাই মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রাম কয়েক হাজার নারী-পুরুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়। উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রমান চৌধুরী নিক্সন। অন্যান্যের মধ্যে চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান এজিএম বাদল আমীন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো: কাউসার হোসেন, আনোয়ার আলী মোল্য, মোশারফ হোসেন (ভিপি মোশা), গাজিরটেক ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইয়াকুব আলী, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কে এম ওবায়দুল বারি দিপু, জুলহাস শিকদার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

আয়োজক কমিটি জানায়, পদ্মার এ চরে গত পাঁচ বছর ধরে গরুর আড়ং উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। হরিরামপুর ইউনিয়নের মানুষের কাছে বছরের দুটি ঈদের পরে এটিই বড় উৎসব।

স্থানীয়রা জানান, উৎসবকে ঘিরে মেয়ে-জামাই-নাতি-নাতনী আর স্বজনদের আগেভাগেই দাওয়াত করে বাড়িতে আনা হয়। সেই সাথে বাড়ীতে বাড়ীতে চলে পিঠাপুলি তৈরির আয়োজন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আমির খান বলেন, স্বজনের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের নিয়ে দুপুরে একসাথে খাওয়া দাওয়া সেরে গরু নিয়ে মাঠে হাজির হন প্রতিযোগীরা।

বিকেলে মেলার উদ্বোধনের পর শুরু হয় প্রতিযোগীতা। দলের সদস্যরা একটি ষাড়ের গলায় দড়ি বেঁধে ধরে রাখে বা খুটির সাথে বেঁধে দেয়। এরপর চলে গরুকে উত্তেজিত করার পালা।

প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়া মানুষেরা জানান, গরুকে বাঁধার পর লাল কাপড় প্রদর্শনের পাশাপাশি লাঠি দিয়ে ভয় দেখানো হয়। এতে গরু উত্তেজিত হয়ে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে দড়ি ছিড়ে নিয়ে গরু পালানোর চেষ্টা করে। তারা জানান, যত দ্রুত গরু দড়ি ছিড়তে সমর্থ হবে জয়ের হিসেবে সে ততই এগিয়ে থাকবে।

উৎসবে আসা তানজিনা আক্তার বলেন, ‘দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবছরও গরু আড়ং দেখতে এসেছি। পদ্মার চরের অবহেলিত মানষেরা বিনোদনের সুযোগ পায় এ আয়োজনের মাধ্যমে।’

আয়োজকরা জানান, এবারের উৎসবে আশেপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে সুসজ্জিত ৩৭টি গরু এ প্রতিযোগীতায় অংশ নেয়। এর মধ্যে বিচারকদের প্রদত্ত নম্বরের ভিত্তিতে প্রথম পুরস্কারের ২১ ইঞ্চি এলইডি টিভি লাভ করেন ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার মো: আজিজ মোল্যা, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পুরস্কারের ২১ ইঞ্চি কালার টিভি লাভ করেন যথাক্রমে দোহারের আসলাম বেপারী ও চরভদ্রাসন উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের শেখ আবুল। এছাড়া প্রতিটি গরুর মালিককে সান্তনা পুরুস্কার হিসেবে একটি করে বালতি দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত এলাকাভেদে দেশের একেক অঞ্চলে এ প্রতিয়োগীতা কোথাও গরুর দাবড়, গরু দৌড়, গরুর রশি ছেড়া বা গরুর আড়ং নামের এই পরিচিত।

পিবিএ/এমআইটি/জিজি

আরও পড়ুন...