পিবিএ,ঢাকা: আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে ২০১৭ সালের শেষ দিক থেকে জ্বালানি তেলের দামে যে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছিল, তা সাম্প্রতিক সময়ে নামতে শুরু করেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে দেশে তেল আমদানির একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির মুনাফা অর্জনের ধারাও অব্যাহত থাকবে।
বিপিসি সূত্র জানায়, জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় দরের মধ্যে পার্থক্য রেখে দীর্ঘদিন লোকসানে পরিচালিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে লাভ গুণতে শুরু করে। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে লোকসান থেকে বেরিয়ে আসে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৯৯ সালের পর ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে মুনাফায় ফিরে তারা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা মুনাফা অর্জিত হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারদর সমন্বয় না করে বিক্রিত তেল থেকে বিপিসি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সাত হাজার ৭৫৩ কোটি এবং ২০১৬-১৭ সালে চার হাজার ৫৫১ কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করে। ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ফের লোকসান গুণতে শুরু করে বিপিসি। এবার ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এসে আগের লোকসান কাটিয়ে লাভের টাকা পকেটে নিচ্ছে বিপিসি। সব মিলিয়ে ২০১৯ সাল স্বস্তি নিয়েই শুরু করলো সংস্থাটি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতি বছর বিপিসি ৪০ লাখ টন ডিজেল এবং ২ লাখ টন ফার্নেস তেল আমদানি করে। বিপিসি বিশ্ববাজার থেকে যে দামে তেল কেনে তার চেয়ে বেশি দামে দেশীয় বাজারে বিক্রি করে। এর ফলে সংস্থাটির লাভ বাড়ছে। সদ্যসমাপ্ত ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিপিসি লোকসান কাটিয়ে মুনাফায় ফিরেছে। এর আগে কয়েক মাস দেশীয় বাজারদরের চেয়ে বিশ্ববাজারে তেলের দর বেশি ছিল। ওই সময় বিপিসি মোট ২৭০ কোটি টাকা লোকসান গুণে। এ সময়কালে বিপিসি প্রতি লিটার ডিজেলে ১৭ টাকা এবং ফার্নেস তেলে ১৫ টাকা লোকসান করে।
এ প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান মো. সামছুর রহমান বলেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমতে থাকায় বিপিসি লোকসান কাটিয়ে উঠছে। বর্তমানে ডিজেলে লাভ করলেও ফার্নেস তেলে লোকসান হচ্ছে। বাজার ওঠানামা করছে। সবমিলিয়ে বিপিসি লাভে থাকলে সরকারের কাছে ভর্তুকি চাইতে হবে না।
বিপিসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সালে বিপিসি মোট ৬৭ লাখ টন ডিজেল, জেট ফুয়েল, ফার্নেস তেল এবং অকটেন আমদানি করে। ২০১৮-২০১৯ সালে তা ৭৫ লাখ টনে ছাড়িয়ে যেতে পারে।
গত অক্টোবরের তেলের বাজার বিবেচনায় বিপিসি বার্ষিক ৯ হাজার ৭০০ কোটি টাকা লোকসান প্রাক্কলন করেছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮ হাজার ৫০০ কোটি ভর্তুকি দাবিও করে সংস্থাটি। কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে যে পরিমাণ ও হারে তেলের দাম কমেছে তা অব্যাহত থাকলে সেই ভর্তুকি আর লাগবে না। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে প্রতি ব্যারেল (১৫৯ লিটার) জ্বালানির তেলের দাম ৬৩ থেকে ৬৮ ডলারে ওঠানামা করেছে। মাসখানেক আগে তা ৫৮ ডলারেও নেমে গিয়েছিল। সর্বশেষ গতকাল সোমবার বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েলের দাম ৫৯ ডলারে নেমেছে।
বিপিসির পরিচালক (বিপণন) মো. সরওয়ার আলম বলেন, তেল বিক্রিতে লোকসান না হলে তা বিপিসির জন্য স্বস্তিদায়ক। এখন ডিজেল বিক্রিতে লাভ হচ্ছে। ফার্নেসে লোকসান এখনো হচ্ছে। তবে সার্বিকভাবে ইতিবাচক অবস্থা রয়েছে। এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে নিজস্ব অর্থায়নের পথ কিছুটা হলেও সহজ হবে।
পিবিএ/এফএস