পিবিএ,ঢাকা: বার্তা সংস্থা পিবিএ (প্রেস বাংলা এজেন্সি) এর সাথে একান্ত স্বাক্ষাতকারে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নিজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বাংলা চলচিত্রের সফল নায়ক, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোহেল রানা। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান বাড়াতে যেমন কিছু পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন আবার মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া সনদপত্রে ‘‘সাময়িক সনদ’’ লেখা থাকায় বিষ্ময় প্রকাশও করেছেন তিনি।
সোহেল রানা বলেন, একসময় আমি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য ছিলাম। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সে সময় আমি ৫টি বিষয় ঠিক করেছিলাম। কিন্তু ঐ সময় যিনি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের প্রধান ছিলেন তিনি আমার কথা গুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলতে দেননি। মিটিংয়ের আগেই ঠিক করা হয়েছিলো কে কে কথা বলবে। তাই আমি আমার কথা গুলো বলতে পারি নি। কিন্তু আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব সময়ই কথা বলতে পারি। কারণ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আপন। এটা যদি কেউ অস্বীকার করে তবে সে মিথ্যা বলছে। আজ পর্যন্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোন মুক্তিযোদ্ধা গিয়ে খালি হাতে বা নিরাশ হয়ে ফিরে আসেনি। শুধু তাই নয় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি একটি দুটি নয় অনেকগুলো কাজ করেছেন। সেই কাজ গুলোর সাথে যদি আরো দুই একটি কাজ করতে পারতেন তাহলে প্রধানমন্ত্রী অমর হয়ে থাকবেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। প্রধনমন্ত্রীর কাছে মুক্তিযোদ্ধারা সবসময় অগ্রাধিকার পেয়ে থাকেন। তার দরজা সবসময় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য খোলা।
তিনি বলেন, আগমী ৫০ বছর পর একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আর জীবন্ত পাওয়া যাবে না। এই অবস্থায় আমার কথাগুলো আমি বলতে পারি। এতো বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের কেন আইডি কার্ড দেয়া হয়নি। অথচ এই আইডি কার্ড দিতে সরকারের বেশি টাকা পয়সা লাগে না।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটি নিদিষ্ট পোশাক দেয়া যেতে পারে। আমাদের দেশে পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী সবারই আলাদা আলাদা পোশাক আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যও একটি নির্দিষ্ট রংয়ের পোশাক দেয়া যেতো। একটি বিশেষ দিনে তারা সবাই ঐ পোশাকটা পরে বের হতো, তাহলে সবাই তাদের দেখে চিনতে পারবে তারা মুক্তিযোদ্ধা। আমি সদস্য থাকা অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধাদের পোশাকের বিষয়টি একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করেছিলাম তারা তা দিতে রাজিও হয়েছিলো।
মুক্তিযোদ্ধোদের জন্য যে কার্ডটি দেয়া হবে সেই কার্ড দেখিয়ে বাস, ট্রেন, স্টিমারে বিনা পয়সায় ভ্রমণ করতে পারবে মুক্তিযোদ্ধারা । এই সুযোগটা দেয়া হয়েছে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য। সব মুক্তিযোদ্ধাদের এই সুযোগটা দিতে পারে সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম শ্রেণীর মর্যাদা দিয়ে গণপরিবহণে যাতায়াতের বিশেষ সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে।
সোহেল রানা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাবে। মুক্তিযোদ্ধার কার্ড দেখিয়ে তারা এই সুযোগটা পেতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যাতে এই সুযোগটা মুক্তিযোদ্ধাদের দেয়া হয় সেই ব্যবস্থা করতে পারে। সেক্ষেত্রে বলে দিতে পারে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে কেবল ঔষধের দামটা নিতে পারবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের রেশনের ব্যবস্থাও করতে পারে। বর্তমানে টাকা দেয়া হচ্ছে। সেটা অনেকের কাজে লাগছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অনেক সামর্থবান রয়েছে তারা ঐ টাকা নিচ্ছে না। মুক্তিযোদ্ধাদেরও পুলিশের মতো রেশেনের ব্যবস্থা করা হলে যাদের প্রযোজন তারা ঐ কার্ড দেখিয়ে রেশন নিতে পারবে। যদি রেশনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে আমার মতো যারা স্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে তারা কিন্তু রেশন আনতে যাবে না। যাদের অনেক বেশি প্রযোজন তারাই যাবে। আমরা প্রায়ই দেখতে পাই খাবার পাচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধারা। তখন আর এমনটা হবে না।
মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ নিয়ে বিষ্ময় প্রকাশ করে সোহেল রানা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৭ বছর হয়ে গেছে অথচ আমাদের কাছে যে সনদপত্র রয়েছে তাতে লেখা আছে ‘‘সাময়িক সনদপত্র’’। অথচ এই বিষয়গুলো যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা অনেক আগেই বলতে পারতাম তাহলে সবগুলো ব্যবস্থা তিনি করে দিতে পারতেন। এর জন্য সরকারের তেমন কোন বেগ পেতে হতো না। কেবল ঘোষণা করে দিলেই হতো। মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু টাকা দিলেই কি দায়িত্ব শেষ, তাদের তো সম্মানও দিতে হবে।
পিবিএ/বাখ