পিবিএ, জামালপুর : ইউনিয়ন পরিষদের জমি দখল করে শেয়ারে এক প্রি-ক্যাডেট এন্ড স্কুল বসিয়েছে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মিরন। সরকারি জমি ব্যবহারে নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় এক শিক্ষকের সাথে যৌথভাবে স্কুল ও কোচিং চালালেও তার প্রভাবের কাছে এতদিন মুখ খুলতে সাহস পায়নি কেউ। দুদক ও জেলা প্রশাসনে সরকারি জমি জবরদখল নিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হলে ঘটনাটি তদন্ত করেছে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিধুলী ইউনিয়ন পরিষদের ভবন মেয়াদোত্তীর্ণ হলে অন্যত্র ৩০ শতাংশ জমিতে নতুন কমপ্লেক্স ভবন নির্মিত হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ দুটি ভবন ও একটি টিনশেড ঘর ইউনিয়ন পরিষদের টিআর কাবিখার গোদাম হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। জায়গাটির প্রতি লোলুপদৃষ্টি পড়ে চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মিরনের। তিনি সেই গোদামটি নিলামে ভেঙে দিয়ে ৫ শতাংশ খালি জায়গা দখল করে নেন। সেখানে কালিবাড়ী প্রি-ক্যাডেট এন্ড স্কুল নামে একটি বাণিজ্যিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজ পকেটের টাকা দিয়ে শেয়ার হন। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে এই স্কুল ও কোচিং সেন্টার চালু রয়েছে। স্কুল থেকে লাভের অংশ যাচ্ছে চেয়ারম্যানের পকেটে। সরকারি জমিতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপন নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা
চললেও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পেরে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেন এলাকাবাসীর পক্ষে মাদারগঞ্জের সিধুলী ইউনিয়নের বীর ভাটিয়ান গ্রামের ইউপি সদস্য জগলু মিয়া, চর ভাটিয়ানি গ্রামের আমজাদ হোসেন ও চর লোটাবর গ্রামের মানিক মিয়া নামে তিন ব্যক্তি। আরেকটি অভিযোগ দায়ের হয় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়েও। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্ত করে জেলা প্রশাসন। সরেজমিনে তদন্ত হলেও এখনো তদন্ত রির্পোট চূড়ান্তÍ হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবির উদ্দিন।
চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মিরনের সাথে কথা বললে তিনি শেয়ারে স্কুল পরিচালনার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এলাকার স্বার্থে এই স্কুলকে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিয়েছেন।
সিধুলী ইউনিয়নের চর ভাটিয়ান গ্রামের স্কুলের পরিচালক বজলুর রহমান বলেন ভিন্ন কথা। বজলুর রহমানের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার এই স্কুলটি ছিল শ্যামপুর কালিবাড়ী বাজারে। সেখান থেকে স্থানান্তর করে চেয়ারম্যান মাহবুব আলম মিরন তার দখলে থাকা রায়গঞ্জ বাজারের পাশে ইউনিয়ন পরিষদের জমিতে স্কুলটি পরিচালনার জন্য তাকে ২ লাখ টাকা দেন। প্রতিমাসে তিনি এই স্কুল থেকে নেন নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা। এখানে প্লে থেকে ৫ম শ্রেণি একাডেমিক ক্লাস ও ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত কোচিং করানো হয়।
স্কুল পরিচালক বজলুর রহমানের কথা অনুয়ায়ী ফের চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ২ লাখ টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করেন। কিন্তু শেয়ারে স্কুল পরিচালনার কথা অস্বীকার করেন। সরকারি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে স্কুল পরিচালনার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে রেজুলেশন করে ভাড়া দিয়েছেন কিনা, জানতে চাইলে, তিনি বলেন, না কোনো রেজুলেশ হয়নি, ভাড়াতেও দেইনি। মানবিক কারণে স্কুলটি পরিচালনার জন্য ঘর তুলে দিয়েছি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ৯৫ নম্বর ভাটিয়ান মৌজার ৪৩৭ নম্বর বিআরএসে ১০ শতাংশ ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি জমির ওপর পরিষদের ২টি পুরাতন ও ১টি টিনশেড ঘর ভেঙে এই স্কুলঘর নির্মাণ করেন মাহবুব আলম মিরন। এছাড়া রায়গঞ্জ বাজারের ড্রেন বন্ধ করে কালিবাড়ী প্রি ক্যাডেট এন্ড স্কুলের নামকরণ করে প্রতিমাসে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা বেতন উত্তোলন করে নিজের পকেটে ভরেন তিনি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ কবির উদ্দিন বলেছেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিবিএ/রাজন্য রুহানি/জেডআই