জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী ইয়াংঘি লি

রাখাইনে এখনো ভয়ঙ্কর পরিবেশ,রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া নিরাপদ নয়

জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী ইয়াংঘি লি
জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী ইয়াংঘি লি

পিবিএ ডেস্ক: রাখাইনে এখনো ভয়ঙ্কর পরিবেশ বিরাজ করছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের সেখানে ফিরে যাওয়া নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্তকারী ইয়াংঘি লি। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা নিপীড়নকারী ব্যবস্থা অকার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে মিয়ানমার। শুক্রবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিতরণ করা এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলেছেন জাতিসংঘের নিয়োগকৃত মিয়ানমার বিষয়ক এই তদন্তকারী।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে এখনও থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা ভয়ঙ্কর পরিবেশে বসবাস করছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। একই বছরের ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, গত বছরের ১৫ নভেম্বর প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। তবে আবারও হামলার মুখে পড়ার আশঙ্কায় রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে অস্বীকৃতি জানানোয় ব্যর্থ হয় ওই উদ্যোগ। দ্বিতীয় দফায় গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তারিখ নির্ধারিত হলেও আবারও তা ব্যর্থ হয়। সম্প্রতি শেষ হওয়া জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের পার্শ্ব বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের সঙ্গে যৌথ ওয়ার্কিং কমিটি গঠনে সম্মত হয়েছে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ।
এমন প্রেক্ষাপটে শুক্রবারের প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তদন্তকারী ইয়াংঘি লি বলেন, রাখাইনে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারা তাদের গ্রামের বাইরে যেতে পারছে না, জীবিকা উপার্জন করতে পারছে না। ফলে নির্ভর করতে হচ্ছে সেখানে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া সীমিত মানবিক সাহায্যের ওপর।
তিনি বলেন, যখন এই পরিস্থিতি বিরাজ করছে তখন শরণার্থীদের স্থায়ীভাবে ফিরে আসা নিরাপদ নয়।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার ঘটনার পর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সাত লাখেরও বেশি মানুষ। তাদের সঙ্গে রয়েছেন ১৯৮২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত নানা অজুহাতে নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া আরও অন্তত সাড়ে তিন লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলে বাংলাদেশে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। আর এখনও রাখাইনে থেকে গেছে আরও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা।
শুক্রবারের প্রতিবেদনে জাতিসংঘের তদন্তকারী ইয়াংঘি লি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গ্রামের বসতি গণনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, প্রশাসনিক রেকর্ড থেকে রোহিঙ্গাদের মুছে ফেলতে এই প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে আর এতে তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনাকে আরও কমিয়ে দেবে।
লি বলেন, তিনি এখনও রোহিঙ্গাদের মারধর, হত্যা, বাড়িঘর ও চালের গুদাম পুড়িয়ে দেওয়ার খবর পাচ্ছেন।
মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী বরাবরই মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি বিদ্রোহী হামলার প্রেক্ষিতে বৈধ অভিযান চালাচ্ছে তারা।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...