পিবিএ ডেস্ক: বছর খানেক ধরে ‘বিবিসি আফ্রিকা আই’ পশ্চিম আফ্রিকায় এই সমস্যা নিয়ে অনুসন্ধান করছে। তারা কয়েকজন ছাত্রীর সাথে কথা বলেছে যারা এই হয়রানির শিকার হয়েছে। পশ্চিম আফ্রিকার দুটো স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে – ইউনিভার্সিটি অব লেগোস এবং ইউনিভার্সিটি অব গানা – যারা যৌন হয়রানি করেন তাদের কাছে ছাত্রীর ছদ্মবেশে রিপোর্টার পাঠানো হয়েছে। বিবিসির কিকি মোরদির রিপোর্ট।
আমার মেট্রিক পরীক্ষা পাশের ছবি।
আমি উচ্ছল সুখী একটি মেয়ে ছিলাম সুন্দর একটা জীবন পার করছিলাম। ১৯ বছর বয়সে নাইজেরিয়ার সবচেয়ে নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কিন্তু আমি যে ভাবতাম বিষয়টি তেমন ছিল না। আমার একজন পরীক্ষক শর্ত দিলেন পরীক্ষায় তিনি ভালো নম্বর দিবেন কিন্তু বিনিময়ে তাকে শারীরিক সম্পর্ক দিতে হবে। আমি প্রত্যাখ্যান করলাম।
আমি কখনোই ভাবিনি এমন পরিস্থিতির শিকার হতে হবে। তবে আমি মাথা ঠান্ডা রাখলাম কিছুই করলাম না। কিন্তু এই হয়রানির জন্য আমাকে চরম মূল্য দিতে হলো; বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হলো আমাকে। পশ্চিম আফ্রিকাজুড়ে অনেক ছাত্রীকে এমনই পরিণতি ভোগ করতে হয়। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি সেখানে বহুদিন ধরে বড় সমস্যা হয়ে আছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিবিসি আফ্রিকা আই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে। বিবিসির পক্ষ থেকে ছদ্মবেশে সাংবাদিক পাঠিয়ে ঘটনার অনুসন্ধান চালানো হয়েছে।
লেগোস ইউনিভার্সিটি’তে অনেক ছাত্র-ছাত্রী সঙ্গে কথা বলার সময় একটি নাম বারবার এসেছে ডক্টর বনিফেস। ফরাসি ভাষার একজন সিনিয়র লেকচারার। একই সঙ্গে একজন যাজক। তার সঙ্গে কথা বলতে বিবিসি ছদ্দবেশী একজন সাংবাদিক পাঠায়। নারী এই সাংবাদিক ১৭ বছরের একজন ছাত্রী সেজে ইউনিভার্সিটি’তে যায়। গিয়ে তিনি বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ইচ্ছুক।
যে বয়সের কারো সাথে যৌন সম্পর্ক নিষিদ্ধ নারী সাংবাদিক সেই বয়সের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। ওই শিক্ষক তাকে বলেন, তুমি কি জানো তুমি কত সুন্দর একটি মেয়ে? কয়েক দফা সাক্ষাতের সময় ওই শিক্ষক বারবার তার সাথে এধরনের অশোভন কথা বলেছেন।
তিনি বলেছেন, তুমি কি জানো আমার বয়স পঞ্চাশের কোঠায়? এবং তুমি অবাক হবে যে এই বয়সে এখনো আমি ….। বুঝলে? আমি যদি তোমার মত ১৭ বছরের একটি মেয়েকে চাই। আমাকে শুধু তার সাথে মিষ্টি করে কথা বলতে হয়। এবং তার হাতে কিছু পয়সা তুলে দিলেই আমি তাকে পাই।
ডক্টর বনিফেস ইউনিল্যাগে তাকে ভর্তি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, যদি বিশেষ পরীক্ষায় পাশ কর আমি তোমাকে ভর্তি করিয়ে দেব। মেয়েটি তখন বলে আপনি সত্যি বলছেন? শিক্ষক বলেন, আমি একজন এসোসিয়েট প্রফেসর। ইউনিল্যাগের সিনিয়র স্টাফ ক্লাবে কি ধরনের হয়রানি হয় তা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেন তিনি।
শিক্ষক বলেন, স্টার ক্লাব এর উপর একটি জায়গা আছে। সেখানে শিক্ষকরা মেয়েদের নিয়ে যান। তাদের চুমু খান। ছাত্রীরুপি বিবিসির সাংবাদিক তখন বলে বিস্ময় প্রকাশ করেন। জানতে চান তারা কেন ছাত্রীদের সেখানে নিয়ে যান। শিক্ষক বলেন, তারা রোমান্স করেন। চুমু খান। তাদের বুকে হাত দেন। শরীরের সব জায়গায় হাত দেন। মেয়েটি বিস্মিত হয়ে বলে হায় যীশু।
এবার শিক্ষক বলেন, এটা একটি ক্লাব। সুতরাং তারা এটিকে কোল্ড রুম বলে বিবেচনা করেন। শিক্ষক তাকে জানান এটি একটি বিশ্রাম কক্ষ। বিবিসি জানায়, তারা পরে সেখানে গোপনে ছবি তুলে। তথাকথিত কোল্ড রুমের ছবিও তোলা হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষককে পাওয়া যায়। তারা মেয়েদের সাথে নাচ ছিলো। পরে শিক্ষকরা অভিযোগ অস্বীকার করে বিবিসিকে জানান, ওই মেয়েগুলো ইউনিভার্সিটির ছাত্রী। জন্মদিনের উৎসব করছিলো।
প্রায় একই সময়ে আফ্রিকা আইয়ের আরেকদল সাংবাদিক গানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছিল। বিবিসির ভাষ্য অনুযায়ী সেখানে আমরা কিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখছিলাম। প্রফেসর র্যান্সফোর্ড জ্যাম্পোর বিরুদ্ধে। তিনি একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সুপরিচিত বিশ্লেষক।
একজন শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে একজন সাংবাদিককে পাঠানো হয়। ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর মেন্টর হতে রাজি হন। কয়েক সপ্তাহ পর অধ্যাপক জ্যাম্পো এক রবিবার বিকেলে তাকে ফোন করে ওই মেয়েটিকে তার বাসায় আসতে বলেন। বাসার বদলে একটি বিপণিবিতানের দেখা করাতে রাজি করানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে।
সাক্ষাতের পুরো সময়টা ওই শিক্ষক বারবার অশোভন কথা বলতে থাকেন। তোমাকে কি কখনো জোর করে চুমু খাওয়া হয়েছে? তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দেন। শিক্ষক আরো বলেন আমি তোমাকে জাপ্টে ধরে চুমু খাব এবং আমি যখন তোমাকে ছাড়বো তুমি দেখবে তোমার আর জড়তা নেই।
মেয়েটি উঠে যেতে চাইলে ওই প্রফেসর বলেন, যাওয়ার আগে তুমি কি আমাকে একবার আলিঙ্গন করবে? তুমি কি আলিঙ্গন করবে না? এই সাক্ষাতের দৃশ্যটি বিবিসি গোপনে ধারণ করে। তবে পরে এ ব্যাপারে জ্যাম্পো ওকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সব অস্বীকার করেন।
ইউনিভার্সিটি অব গানা বলছে, যে অভিযোগ উঠেছে প্রফেসর জ্যাম্পোর বিরুদ্ধে তা খুবই গুরুতর। যৌন হয়রানি মোকাবিলায় তাদের কড়া বিধিনিষেধ রয়েছে এবং এই সমস্যা সমূলে দূর করতে তারা বদ্ধপরিকর।
পিবিএ/বিএইচ