পিবিএ ডেস্ক: বড় ধরনের অর্থ সংকটে পড়েছে বিশ্বের জাতিসমূহের সংগঠন জাতিসংঘ। সংকটের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঠিকমতো বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।বর্তমানে প্রায় ২৩ কোটি ডলার অর্থ ঘাটতিতে রয়েছে সংস্থাটি। এখনই অর্থায়ন না হলে চলতি অক্টোবরেই শেষ হয়ে যাবে তহবিল। সোমবার জাতিসংঘের ৩৭ হাজার কর্মীর উদ্দেশে লেখা এক খোলা চিঠিতে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চলতি অক্টোবরেই শেষ হয়ে যেতে পারে আমাদের সব তহবিল। খবর রয়টার্সের।
চিঠিতে মহাসচিব আরও বলেন, কর্মীদের বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে জাতিসংঘকে এখন এক অস্থায়ী ও বিকল্প পন্থা গ্রহণ করতে হবে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থায়নে মোট বাৎসরিক বাজেটের মাত্র ৭০ শতাংশই পূরণ সম্ভব হয়।
চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, এর মাধ্যমে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঘাটতি হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি ডলার। যে কারণে চলতি অক্টোবরের শেষদিকে আমাদের অর্থ সরবরাহ পুরোপুরি থমকে যেতে পারে।
চিঠিতে অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে প্রয়োজন ছাড়া কনফারেন্স ও বৈঠক স্থগিত করার কথা বলেছেন সংগঠনটির এই মহাসচিব। একই সঙ্গে কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের প্রবণতাও কমিয়ে আনার দিকে মনোনিবেশ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আরও বলা হয়, এখন থেকে শুধু অপরিহার্য কার্যক্রমে অংশ নিতেই ভ্রমণ করার সুযোগ পাবেন তারা। এবারের আর্থিক সমস্যা নিরসনে সব সদস্য রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মহাসচিব গুতেরেস।
অর্থ সংকট কাটাতে চলতি বছরের প্রথম দিকেই সদস্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন গুতেরেস। তবে তার এই আহ্বানে সাড়া মেলেনি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে সংগঠনটির এক কর্মকর্তা জানান, জাতিসংঘ মহাসচিবের এ আহ্বানে এখন পর্যন্ত সদস্য রাষ্ট্রই সাড়া দেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘের চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য মাত্র ৫৪০ কোটি ডলার বাজেট বরাদ্দ রয়েছে। যার প্রায় ২২ শতাংশই প্রদান করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তবে জাতিসংঘে অর্থায়ন ক্রমেই কমিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলে অর্থ সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের ১৫০টি দেশে পরিবার পরিকল্পনা ও জনসংখ্যা রোধের মতো নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে সংস্থাটি। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ট্রাম্প বিভিন্ন তহবিলে অর্থ বন্ধ করে দেয়ার যেসব প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করেছিলেন এটি তার মধ্যে প্রথম। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা দেন ট্রাম্প। এই স্বীকৃতির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো অবস্থান নিলে ‘দেখে নেয়া হবে’ বলে হুশিয়ারি দেয় ওয়াশিংটন।
তা সত্ত্বেও জাতিসংঘের বেশির ভাগ সদস্য রাষ্ট্র ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এর পরপরই জাতিসংঘে নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেন, আগামী অর্থবছরে (২০১৮-১৯) জাতিসংঘে অর্থায়ন ২৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার কমাবে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের বাজেট বরাদ্দে আরও কাটছাঁট করা হবে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
পিবিএ/বাখ