যুবলীগের আলোচিত দফতর সম্পাদক আনিস বহিষ্কার

পিবিএ,ঢাকা: শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে সংগঠনটির বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত নেতা কাজী আনিসুর রহমানকে। যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়। সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। কাজী আনিসুর রহমান যুবলীগের দফতর সম্পাদক পদে ছিলেন। তিনি যুবলীগ অফিসের পিয়ন থেকে কেন্দ্রীয় নেতা বনে যান। দুর্নীতি-মাদক-ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযান শুরু হলে তিনি আড়ালে চলে যান।প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা কাজী আনিসের অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশার। কেউ বলছেন, কাজী আনিস দেশত্যাগ করেছেন। কেউ বলছেন আত্মগোপনে আছেন।


আইনশৃংখলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, কাজী আনিসুর রহমানকে খুঁজে বেড়াচ্ছে পুলিশ। তার সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। দুর্নীতি, মাদক আর চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে র‌্যাব-পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে গেছেন কোটিপতি এই নেতা। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার পর লাপাত্তা কাজী আনিস।
যুবলীগ নেতাদের সূত্রে জানা গেছে, কাজী আনিস কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন ২০০৫ সালে। বেতন ছিল মাসে ৫ হাজার টাকা। সাত বছর পর বনে যান কেন্দ্রীয় যুবলীগের দফতর সম্পাদক। যুবলীগের সবশেষ কমিটিতে তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদ দেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব।
কাজী আনিস আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। তিনি এখন একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক। আত্মগোপনে যাওয়ার আগে কোটিপতি আনিস যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক ছাড়া কাউকে পরোয়া করতেন না। তার বেপরোয়া মনোভাবে যুবলীগ নেতাদের অনেকেই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কোনঠাসা।
২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যখন আনিসের চাকরি হয়, তখন তিনি নেতাদের হুট ফরমায়েশ শোনার পাশাপাশি কম্পিউটার অপারেটরের কাজও করতেন। এই সুবাদে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি কার্যালয়ে আসা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও সখ্য হয় তার। সময়ের ব্যবধানে প্রযুক্তিকে পিছিয়ে থাকা নেতাদের নজরেও চলে আসেন আনিস।
কেন্দ্রীয় যুবলীগ সারা দেশে যেসব কমিটি দিত, সেগুলো কম্পিউটারে টাইপ করে দিতেন আনিস। টাইপ করতে গিয়ে কোন জেলায় কে সভাপতি কে সম্পাদক তা নখদর্পণে চলে আসে আনিসের। মুখস্থ বলে দিতে পারতেন যেকোনো কমিটির নেতার নাম। এসব কারণেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি। আবার জেলাপর্যায়ের নেতারাও কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রের তথ্য বা সিদ্ধান্ত জানতে তাকে ফোন করতেন। এভাবে জেলা নেতাদের সঙ্গেও তার সখ্য হয়ে যায়।
২০১২ সালে যুবলীগের কমিটি হলে আনিস পেয়ে যান উপ-দফতর সম্পাদকের পদ। শীর্ষ নেতার আশীর্বাদ থাকায় ছয় মাস পর খালি থাকা দফতর সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেয়ে যান আনিস।
কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আনিসকে সবাই ‘ক্যাশিয়ার’ বলেই চেনে। তবে গত এক যুগে তিনি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিছু যুবলীগ নেতার সব ধরনের অপকর্মের সঙ্গী এই আনিস।
ধানমণ্ডি ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে আনিসের। তবে ওই ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন না। বর্তমানে রাজধানীর ধানমণ্ডির ১০/এ সড়কের একটি বাড়ির ফ্ল্যাটে থাকেন কাজী আনিস। ওই ফ্ল্যাটটিও তার নিজের।
শুধু তাই নয়, গোপালগঞ্জে আনিসের রয়েছে বিপুল স্থাবর সম্পত্তি। আগে পাঁচ-ছয় বিঘা জমি ছিল তাদের। গত চার বছরে কয়েক বিঘা জমি কিনেছেন। বাড়ি করেছেন, পেট্রলপাম্প এবং তার পাশের জমি কিনেছেন। এর মধ্যে পেট্রলপাম্পটি কিনতে কোটি টাকা লেগেছে আনিসের। পাশেই ৫ একর জমি আছে তার কেনা। এ ছাড়া ঢাকায় আনিসের তিনটি বাড়ি আছে।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...