শেষ পর্যন্ত তেরেসাই থাকলেন প্রধানমন্ত্রী

teresa-may-PBA

পিবিএ,ডেস্ক: শেষ পর্যন্ত তেরেসাই থাকলেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রেক্সিট চুক্তির ভোটাভুটিতে ধরাশায়ী হলেও অনাস্থা ভোটে উতরে গেলেন তিনি। মাত্র ১৯ ভোটের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী হলেন তেরেসা।

বুধবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৭টায় হাউস অব কমন্সে অনাস্থা ভোটে (বাংলাদেশ সময় রাত দেড়টা) তেরেসার পক্ষে ভোট দেন ৩২৫ এমপি। আর বিপক্ষে ভোট দেন ৩০৬ এমপি।

মঙ্গলবার রাতের একই সময় ব্রেক্সিট চুক্তিতে এমপিদের না ভোটের পরপরই তেরেসার বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের প্রস্তাব দেন বিরোধী লেবার পার্টিপ্রধান জেরেমি করবিন। তেরেসাই থাকলেন প্রধানমন্ত্রী, টরিদের দখলেই সরকার।

প্রধানমন্ত্রী মে এ পরীক্ষায় ব্যর্থ হলে নির্ধারিত সময়ের তিন বছর আগেই যুক্তরাজ্যকে আরেকটি সাধারণ নির্বাচনে যেতে হত। এখন ব্রেক্সিট সংকট সমাধানের ভিন্ন পথ খুঁজতে হবে যুক্তরাজ্যকে।

সে ক্ষেত্রে বিকল্প হতে পারে ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ (চুক্তিহীন ব্রেক্সিট) বা ব্রেক্সিট প্রশ্নে আরেকটি গণভোট। তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট হলে ইউরোপের দেশগুলোতে যারা ব্যবসা করছেন তাদের বাড়তি আমদানি-রফতানি কর গুনতে হবে। আর অভিবাসীদের ক্ষেত্রে ইইউর নীতিমালা বাদ দিয়ে যুক্তরাজ্যের তৈরি নতুন নীতিমালা মেনে চলতে হবে।

জটিল এসব সমীকরণের সহজ সমাধান দিয়েছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে একমাত্র বাস্তব সমাধান হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) থেকে যাওয়া। খবর বিবিসি ও এএফপির।

২০১৬ সালের ২৩ জুন যুক্তরাজ্যে এক গণভোটে ইইউর সঙ্গে দেশটির চার দশকের সম্পর্কচ্ছেদের রায় হয়। ভোটে হারের পর রক্ষণশীল দলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন। তেরেসা মে ক্ষমতায় এসে বিচ্ছেদের পথরেখা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করেন।

এ জন্য সময় নেয়া হয় ২১ মাস। আগামী ২৯ মার্চ সেই সময়সীমা উত্তীর্ণ হওয়ার আগে যুক্তরাজ্যকে তার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে। সেই লক্ষ্যে ইইউর সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি খসড়া চুক্তি মঙ্গলবার পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে তোলেন মে। এ ভোট হওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরেই। কিন্তু নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে তেরেসা তা পিছিয়ে দেন। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি।

এখন কয়েকটি বিকল্প রয়েছে। এর একটি হল চুক্তিহীন ব্রেক্সিট। সে ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ হবে হুট করেই। অনাস্থা ভোটে তেরেসা হেরে গেলে তার দল বিকল্প সরকার গঠনের সুযোগ পাবে। কনজারভেটিভ পার্টি নতুন কোনো সরকার গঠন করতে না পারলে দেখা হবে বিরোধী দল থেকে কেউ সরকার গঠন করতে পারে কিনা।

সে ক্ষেত্রে নতুন সরকারকে ১৪ দিনের মধ্যে আস্থার প্রমাণ দিতে হবে। অন্য কোনো দল সরকারে না এলে ২৫ কার্যদিবস পর সাধারণ নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হবে ব্রিটেনকে। যদিও তেরেসার সরকারের মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত।

সরকারে যারাই আসুক, তারা নতুন প্রস্তাব নিয়ে ইইউর সঙ্গে দরকষাকষিতে যেতে পারে, সে জন্য দরকার সময়। ইইউর দেয়া চূড়ান্ত সময়সীমা ২৯ মার্চ থেকে আরও বাড়িয়ে নেয়ার কথাও তারা ভাবতে পারে।

অন্য বিকল্প হল আরেকটি গণভোট। ব্রিটেনের নাগরিকদের কাছে আবারও জানতে চাওয়া হবে- তারা সত্যিই ব্রেক্সিট চান কি না। সে জন্যও ইইউর কাছে বাড়তি সময় চেয়ে নিতে হবে।

ইইউসহ বিশ্ব প্রতিক্রিয়া : ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত সমাধান হচ্ছে যুক্তরাজ্যের ইইউতে ‘থেকে যাওয়া’।

ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লদ জাঙ্কার বলেন, সময় প্রায় শেষ। এখন ‘চুক্তি ছাড়াই’ বিশৃঙ্খল পথে যুক্তরাজ্যের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেল। এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় কমিশনও ‘চুক্তি ছাড়াই’ অগ্রসর হওয়ার পরিকল্পনা এগিয়ে নেবে।

অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ টুইটারে বলেন, ‘ব্রেক্সিট ভোটের ফলাফলে দুঃখ প্রকাশ করছি। কোনোভাবেই বিচ্ছেদ চুক্তি নিয়ে নতুন আলোচনার সুযোগ নেই। কোনো চুক্তি ছাড়াই ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে যুক্তরাজ্যই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মন্তব্য করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাজ্য অপ্রত্যাশিতভাবে ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলে তা হবে ‘ভয়ংকর সর্বনাশ’।

পিবিএ/এফএস

আরও পড়ুন...