একজন প্রতিমন্ত্রীর হাত ধরে টং দোকানদার রাজিব রাজনীতিতে আসে

ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা
ডিএনসিসি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা তারেকুজ্জামান রাজীব

পিবিএ, ঢাকা: সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রীর হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া বর্তমান ডিএনসিসি ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা তারেকুজ্জামান রাজীবকে গ্রেফতারের পর তার সম্পর্কে বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। তার অপরাধ জগত নিয়ে উঠে আসছে নানা অভিযোগ। এতদিন ভয়ে যারা টু শব্দটি করার সাহস করেননি তারা রাজীবের গ্রেফতারের পর নির্ভয়ে কথা বলছেন।

যুবলীগ নেতা রাজীবের উত্থানের পেছনে রয়েছে লম্বা ইতিহাস। ফুটপাতের সামান্য টং দোকানদার ছিলেন রাজীব। সেই যুবলীগ নেতাই এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। মালিক হয়েছেন কয়েক কোটি টাকার। তাকে গ্রেফতারের পর বাসা থেকে পাওয়া গেছে ৫ কোটি টাকার চেক। গড়েছেন স্থাবন সম্পত্তি। রয়েছে ঢাকায় বিলাসবহুল একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট।

স্থানীয় সূত্র জানায়, টং দোকানদার থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়া মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ, চন্দ্রিমা হাউজিং, সাতমসজিদ হাউজিং, ঢাকা উদ্যানসহ বিভিন্ন এলাকায় দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে রাজীবের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে প্রবাসীদের বাসাসহ এলাকার অনেকের জমিদখলের অভিযোগও রয়েছে। বর্তমানে মোহাম্মদপুর এলাকায় একাধিক বাড়ি, জমি ও একাধিক বিলাসবহুল গাড়ির মালিক তিনি।

একসময় টং দোকানদার ছিলেন রাজীব। এখন তিনিই কোটি কোটি টাকার মালিক। বসবাস করেন আলিশান বাড়িতে। গুলশান ও মোহাম্মদপুরে আটটি ফ্ল্যাট রয়েছে তার। চড়েন বিলাসবহুল গাড়িতে। যার মধ্যে রয়েছে মার্সিডিজ, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কারও।

সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রীর হাত ধরে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হওয়া রাজীব ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কাউন্সিলর পদে জয়লাভ করেন। এর পর থেকেই মূলত ভাগ্য আরও খুলে যায় তার। আর পিছু তাকাতে হয়নি তাকে।

রাজীবকে গ্রেফতারের পর র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরওয়ার আলম বলেন, রাজীবের একটি রাজকীয় বাড়ি রয়েছে। এ বাড়িটির বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকার মতো। বাড়ির প্রত্যেকটা আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস তিনি বাহির থেকে আমদানি করে নিয়ে এসেছেন। এটি তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত বলে আমাদের মনে হয়েছে। তার কিন্তু আসলে কাউন্সিলর হওয়ার আগ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। সিটি কর্পোরেশন থেকে যে সম্মানী পায়, সেটি তার প্রধান আয়। এ ছাড়া বাকি সব অবৈধ লেনদেন।

শনিবার রাতে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার চার নম্বর সড়কের ৪০৪ নম্বর বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় রাজীবকে। পরে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম এক তাৎক্ষণিক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, জমিদখল, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সারোয়ার বিন কাশেম জানান, ‘সি’ ব্লকের আফতাব উদ্দিন রোডের ৯ তলা ভবনটির সপ্তম তলা থেকে রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়। এটি তার বন্ধু মিশু হাসানের ভাড়া নেয়া বাসা। ওই বাসার ভেতরে রাজীবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদসহ বাসাটিতে তল্লাশি চালানো হয়। ওই বাসা থেকে বিদেশি মদের সাতটি বোতল, ৩৩ হাজার টাকা, একটি পাসপোর্ট, একটি অবৈধ পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিন রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...