ক্যাসিনোর ভিডিও ফুটেজ র‌্যাবের হাতে

নির্বাচনের আগে দেড় কোটি টাকা নেন রাশেদ খান মেনন

rased_khan_menon-PBA
রাশেদ খান মেনন। ফাইল ফটো

পিবিএ, ঢাকা: র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানান, গত সংসদ নির্বাচনের আগে ক্যাসিনোর সুবিধাভোগী হিসেবে উঠে এসেছে ইয়াংম্যানস ক্লাবের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এককালীন দেড় কোটি টাকা নেন। পার্টির ফান্ডে নির্বাচনী ডোনেশন হিসেবে এই টাকা নেন তিনি। এ ছাড়া পোস্টার ছাপানো থেকে শুরু করে নির্বাচনী ক্যাম্প বানানো ও মাইকে প্রচারের সবকিছুই আয়োজন করে দেন সম্রাট। খালেদের মাধ্যমে এসব নির্বাচনী আনুষ্ঠানিকতা সম্পর্কিত খরচের বিল দেয়া হতো।

ক্ষমতাসীন জোট ১৪ দলের এই বর্ষীয়ান নেতা ঢাকার ক্যাসিনো কারবারের নায়ক ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার কাছ থেকে ক্যাসিনোর টাকার ভাগ নিতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান রাশেদ খান মেননকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন তাকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা দিতেন তারা। এর বিনিময়ে মেনন তাদের ক্যাসিনো কারবারে সহযোগিতা করতেন।

তাদের দেয়া এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে র‌্যাব এরই মধ্যে অনেক সত্যতা পেয়েছে। ক্যাসিনো সম্রাট ও খালেদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে রাশেদ খান মেননসহ যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতাকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতার বক্তব্যেও রাশেদ খান মেননকে জিজ্ঞাসাবাদের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ক্যাসিনো
ইয়ংমেন্স ক্লাবের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান স্থানীয় সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন

রমনা থানায় করা অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় সম্রাট ১০ দিন এবং তার সহযোগী এনামুল হক ওরফে আরমান পাঁচ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। সোমবার তাদের রিমান্ডের ছয় দিন পার হয়েছে। র‌্যাব-১ কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক নেতা নামধারী অনেকেই সম্রাটের দফতরে হাজির হতেন জুয়ার টাকার ভাগ নিতে। প্রতি মাসে ব্যাগভর্তি করে জুয়ার টাকা নিয়ে তারা বেরিয়ে যেতেন। সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজেও এর প্রমাণ রয়েছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন নেতা ছাড়াও টাকার ভাগ পেতেন পল্টন, মতিঝিল ও ফকিরাপুল এলাকার প্রভাবশালীরা।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট তার চাঁদাবাজির টাকার ভাগ নেয়া প্রভাবশালী যাদের নাম বলেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসার এবং যুবলীগের একজন শীর্ষ নেতা।

সম্রাটের কাছ থেকে মাসে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিতেন মেনন। এমনকি প্রতি মাসে নিয়মিত মাসোহারা না পেলে তিনি অকথ্য ভাষায় যুবলীগের নেতাদের গালাগাল করতেন। জুয়ার টাকায় ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমণসহ বিলাসী জীবনযাপন শুরু করেন বর্ষীয়ান এই বামপন্থী নেতা। ইয়াংমেনস ক্লাব থেকে র‌্যাবের উদ্ধার করা চাঁদাবাজির খাতায় মেননের নাম রয়েছে ৫নং সিরিয়ালে।

সম্রাট আরও বলেন, তিনি নিজেও ঢাকা-৮ আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। রাশেদ খান মেনন তাকে নির্বাচনে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন। সম্রাটকে বিশেষ স্নেহ করতেন রাশেদ খান মেনন। রাজনৈতিক মহলে সম্রাটের অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেন। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রকাশ্যেই বলতেন ‘সম্রাটের হৃদয় আকাশের মতো উদার। সে একদিন অনেক বড় নেতা হবে’।

আদালত চত্ব‌রে সম্রা‌ট সমর্থক‌দের ভিড়
ক্যাসিনো সম্রাট

জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট জানিয়েছেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী থেকে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে যুবলীগের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেন রাশেদ খান মেনন। খালেদকে আরও বড় পদ-পদবি দেয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে তদবির করেন। মেননের আশ্রয় পেয়ে রাজধানীর বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেন খালেদ। রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে খালেদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কলেজে নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে উন্নয়নকাজ ও শিক্ষার্থী ভর্তিতে বিপুল অংকের টাকা লেনদেন হয়। খালেদের মাধ্যমে এই টাকার একটি বড় অংশ চলে যেত রাশেদ খান মেননের পকেটে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি থাকাকালেও মেননের বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। নামকরা দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন ও আইডিয়াল কলেজে ভর্তি বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন রাশেদ খান মেনন ও তার সহযোগীরা।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...