যে কারণে সিংহাসনে বসেন না জাপানের সম্রাট

পিবিএ ডেস্ক: জাপানের ১২৬তম সম্রাট হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন নারুহিতো। মঙ্গলবার রাজকীয় কিছু রীতিনীতি পালনের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজসিংহাসনে আরোহণ করেন তিনি। জাপান সম্রাটের রাজ্যাভিষেকের কিছু অনুষঙ্গ তুলে ধরেছে এএফপি। সোনালি রাজসিংহাসন : ‘সেইদেন-মাৎসু-নো মা’ নামে রাষ্ট্রীয় কক্ষে ষড়ভুজ আকারের দুটি মঞ্চ। দর্শকদের অবস্থান থেকে বামদিকে বসানো মঞ্চটি দ্বিতীয় মঞ্চের চেয়ে কিছুটা উঁচু।

সেখানেই ষড়ভুজ আকারের বেদির ওপর সম্রাট নারুহিতোর সিংহাসন। ‘তাকামিকুরা’ নামের ওই সিংহাসনের উচ্চতা প্রায় সাড়ে ছয় মিটার। পাশে নিচু আসনটি সম্রাজ্ঞী মাসাকোর। এর নাম ‘মিচোডাল’। এ সিংহাসনের ওজন আট টন। এর কাঠামো সোনালি বার্নিশ করা চিরহরিৎ বৃক্ষের কাঠ দিয়ে তৈরি। ওপর থেকে বেগুনি রঙের পর্দা ঝুলছে, যেগুলো সিংহাসনের পাঁচ খুঁটিতে বাঁধা। পঞ্চভুজের মাথায় সোনালি রঙের বিভিন্ন পাখির মূর্তি। কিন্তু রাজকীয় এ অনুষ্ঠানের সময় সিংহাসনে বসতেই পারেন না সম্রাট, ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সিংহাসনটি জাপানের প্রাচীন রাজধানী কিয়োটোর রাজপ্রাসাদেই থাকে। অনুষ্ঠানের জন্য সেখান থেকে এটি টোকিওতে আনা হয়। অনুষ্ঠান শেষে আবার সেখানে রেখে আসা হয়।

সম্রাটের সিল্কের পোশাক : সিল্কের ‘সোকুতাই’ নামের রাজকীয় পোশাক পরেছিলেন সম্রাট। এ সাজসজ্জায় সম্রাটকে খুব কমই দেখা যায়। লম্বা, প্রশস্ত হাতা এবং একটি চাঁচা কোমরযুক্ত বাদামি-স্বর্ণের রঙে বানানো পোশাক। রাজকীয় পোশাকে প্রায়শই পাখির প্রতিচিত্র থাকে। একে স্বর্গীয় দূত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্রাটের পোশাকের গৌরব হল ‘কানমুরি’ টুপি। এর পেছনে গাঢ় কালো রঙের লেজ যুক্ত করা, যা ৬০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২৪ ইঞ্চি) উঁচু। সম্রাজ্ঞীর ভারি পোশাক : সম্রাজ্ঞী মাসাকো পরেছিলেন ১২ স্তরের চাকচিক্যময় রাজকীয় কিমোনো। এর নাম ‘জুনিহিটোই’ (বহু স্তরযুক্ত পোশাক)। লাল হাতা এবং বিভিন্ন দৈর্ঘ্যরে একাধিক স্তরের পোশাক এটি। শীর্ষ স্তরগুলোতে হালকা বেগুনি ও সবুজ শেডযুক্ত।

বিস্তৃত ঐতিহ্যবাহী এ পোশাক এতটাই ভারি যে চলাচলে বেগ পেতে হয়। রাজকীয় অনুষ্ঠান এবং বিবাহের বাইরে এ পোশাক পরতে সম্রাজ্ঞীকে খুব কমই দেখা যায়। মাসাকোর চুলের পেছন থেকে দীর্ঘ পনিটেল এবং তার কপালের উপরে একটি বৃহৎ সোনালি চুলকোটা পিন্টেল দিয়ে প্রসারিত করে পাশের দিকে ছড়িয়ে দেয়া হয়।

সম্রাটের বৈধতার প্রমাণ ‘পবিত্র রত্নভাণ্ডার’ : ‘পবিত্র ধনরত্ন’ ছাড়া রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয় না। জাপানি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, দুই সহস্রাব্দ পূর্বে সূর্যদেবী আমাতেরাসু রাজকীয়ভাবে এর ভার অর্পণ করেছিলেন। ভাণ্ডারগুলো হল ‘ইয়াতা নো কাগামি’ নামের একটি আয়না, ‘কুসানগি নো তসুরুগি’ নামের একটি তলোয়ার এবং ‘ইয়াসাকানি নো মাগাতামা’ নামের অগণিত রত্ন। এই তিনটি ‘পবিত্র ধন’ সম্রাটের বৈধতার চূড়ান্ত প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে তাদের কোনো ছবি নেই। এমনকি সম্রাটও এগুলো কখনও স্বচক্ষে দেখেননি। ঐতিহ্যগতভাবে এগুলো কাপড়ে মুড়িয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আনা হয়।

পিবিএ/বাখ

আরও পড়ুন...