পিবিএ ডেস্কঃ জরায়ুর জন্মগত ত্রুটি! আগে থেকে বোঝা দায়। যা সন্তানধারণের পথে বড় বাধা। তাই বারবার মিসক্যারেজ হলে দ্রুত চিকিৎসকের দ্বারস্থ হোন। প্রয়োজনে উপযুক্ত সার্জারি করে নিলে সমাধান মিলতে পারে।
ইউটেরাস বা জরায়ু, মায়ের সন্তানধারণের অন্যতম অঙ্গ। সহজ কথায় শরীরের অভ্যন্তরে যে স্থানে ভ্রূণের বৃদ্ধি হয় বা মাতৃজঠর। এই স্থানে কোনও রকম প্রতিবন্ধকতা থাকলে তা সন্তাণ ধারণের ক্ষেত্রে নানা প্রতিকূলতা সৃষ্টি করে। যা আগে থেকে বোঝাও দায়। মিসক্যারেজ বা প্রিম্যাচিওর ডেথ হওয়ার এটিও একটি অন্যতম কারণ। কখনও কখনও সফল প্রেগন্যান্সি আনতে আগে থেকে সঠিক চিকিৎসা করে এই সমস্যা ঠিক করা জরুরি। তাই সাবধান হন প্ল্যানিং-এর সময় থেকেই।
ত্রুটির ধরনঃ যেকোনও মহিলার ক্ষেত্রেই ইউটেরাসের ত্রুটি সাধারণত জন্মগত কারণেই হয়। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে তিন জনের এমন সমস্যা দেখা যায়। গঠন কিংবা আকার ঠিক না থাকাই সমস্যা। সচরাচর একটা কন্যাভ্রূণ যখন মাতৃজঠরে বড় হচ্ছে তার ১০ সপ্তাহের মধ্যে সেই ভ্রূণের ইউটেরাস গঠিত হয়ে যায়। কারও কারও ক্ষেত্রে এই সময় মুলেরিয়ান ডাক্ট ঠিক মতো জোড়া লাগে না। ফলে ইউটেরাসের স্বাভাবিক গঠন তৈরি হয় না। মুলেরিয়ান ডাক্টের উপরের অংশ ফ্যালোপিয়ন টিউব এবং নিচের অংশ জরায়ু তৈরি করে। মুলেরিয়াম ডাক্টের মাঝখানে এসে জুড়ে যাওয়ার
তারতম্যের উপরই জরায়ুর গঠনের তারতম্য তৈরি হয়।
বাইকরনুয়েট ইউটেরাস (হার্ট শেপ ইউটেরাস)- স্বাভাবিক ইউটেরাসে যেমন একটাই ক্যাভিটি থাকে এক্ষেত্রে দুটো ক্যাভিটি তৈরি হয়।
সেপটেট ইউটেরাস- এক্ষেত্রে ইউটেরাস দুটি ভাগে ভাগ হয়ে যায়। কলা বা পর্দা ইউটেরাসকে বিভাজন করে। এতে মুলেরিয়ান ডাক্ট সম্পূর্ণভাবে আলাদা হয়ে দুটি জরায়ু তৈরি করে। সেক্ষেত্রে দু’টি জরায়ু একটা ভ্যাজাইনা অবস্থান করতে পারে, কারও আবার দু’টি আলাদা ভ্যাজাইনা বা যোনিপথ থাকতে পারে। এমন হলে মহিলাদের সন্তানধারণের ক্ষেত্রে বারবার মিসক্যারেজ হতে থাকে।
হাইপোপ্লাস্টিক ইউটেরাস- জরায়ু খুব ছোট হলে তাকে রুডিমেন্টারি জরায়ু বলে। সব ঠিক অথচ আকারে ছোট জরায়ুকে হাইপোপ্লাস্টিক জরায়ু বলা হয়।
ইউনিকর্নেট ইউটেরাস- এক্ষেত্রে ইউটেরাসের অর্ধেক অংশ তৈরি
হয় মাত্র।
সমস্যাতেই প্রকাশঃ
জরায়ুর মুখ বন্ধ হলে সার্ভাইক্যাল অ্যাট্রেশিয়া হতে পারে। জরায়ুর গঠনগত ত্রুটি বৈচিত্রের ফলে বিভিন্নরকম রক্তস্রাব ও অনিয়মিত ঋতুচক্র হতে পারে। তলপেটে, কোমরে ব্যথা, সাদাস্রাব ও মাসিক না হওয়ার সমস্যা প্রকাশ পায়।
কারও কারও ঋতুচক্র হতে সমস্যা হয়। বন্ধাত্বের সমস্যাও দেখা দেয়।
প্রিম্যাচিওর বার্থ হতে পারে জরায়ুর ত্রুটি থাকলে। ভ্রূণের বৃদ্ধি খুব ধীরে ধীরে হয়। মিসক্যারেজের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে এক্ষেত্রে।
এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় সন্তানের অবস্থান বদলে যেতে পারে। জরায়ুর গঠনগত ত্রুটি থাকলে সিজার করে সন্তান প্রসবই একমাত্র উপায়।
কীভাবে বুঝবেন সমস্যাঃ জরায়ুর ত্রুটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্তান ধারণের সমস্যা প্রকাশ পায়। আগে থেকে জন্মগত এই ত্রুটি বোঝা বেশ কঠিন। বেশ কিছু টেস্ট রয়েছে যা ইউটেরাসের গঠন নির্ণয়ে কার্যকর।
ভ্যাজাইন্যাল বা থ্রি ডি আল্ট্রাসাউন্ড- এই টেস্ট গর্ভাবস্থায় করা সম্ভব। এই আল্ট্রাসাউন্ড করে ইউটেরাসের গঠন ঠিক রয়েছে কি না তার স্পষ্ট ছবি পাওয়া সম্ভব।
সোনোহিস্টারোগ্রাম- এক্ষেত্রে জরায়ুতে সালাইন ওয়াটার প্রবেশ করিয়ে ভ্যাজাইলান আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। এতে আরও স্পষ্ট ছবি পাওয়া সম্ভব।
এমআরআই- এমআরআই করেও ইউটেরাসের গঠনগত ত্রুটি নির্ণয় সম্ভব।
সমাধানঃ এক্ষেত্রে ভ্রূণ নষ্ট বা অ্যাবরশন (abortion) ছাড়া প্রি-ম্যাচিওর প্রসব হয়ে সদ্যোজাতর বিপদ হতে পারে। জরায়ুর রোগ নির্ণয়ের পর কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। পরস্পর কয়েকটি ভ্রূণ নষ্ট হলে দম্পতি ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। সেক্ষেত্রে জরায়ুর ত্রুটি নির্ণয় হতে পারে, যা রোগিণীর অজানা। এই সমস্যা নিরাময়ে সার্জারি অনেক সাফল্য আনে। অনেক সময় সেপটেট জরায়ুর সেপটাম বা পর্দা বাদ দেওয়া (Septum Resection Opration) হলে স্বাভাবিক প্রেগন্যান্সি বা প্রসব সম্ভব। এছাড়া ইউনিফিকেশন (unification) অপারেশন দ্বারা দু’টি জরায়ুকে একটি জরায়ুতে পরিণত করা যায়। তাতে সমস্যা কমে যায়। সার্জারি করে সার্ভাইক্যাল ও ভ্যাজাইনাল অ্যাট্রেশিয়ায় সুফল মেলে। বাইকরনুয়েট জরায়ুতে একটি ছোট রুডিমেন্টারি হর্নে অস্থানিক ভ্রুণ তৈরি হয়ে জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে সময়ে কারণ নির্ধারণ করে শল্য চিকিৎসা জরুরি–প্রাণরক্ষার হাতিয়ার। অপারেশনের সময় রক্তপাত হলে রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে।
পিবিএ/এমআর