পিবিএ,ঢাকা: জাহিদ ইকবাল- বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুগ্রহে জানতে পারলাম বর্তমান সরকার অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে। সেটা আবার সংবাদ বা তথ্য নয় সেখানে টাকার গুরুতই বেশি দেওয়া হয়েছে ওই প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালায়। বিচিত্র এই আজব সব কা- দেখে বিস্মিত!
একটি পত্রিকার কলামে পড়লাম, এই দেশে সবচেয়ে ভালো লেখাপড়ার সুযোগ আর সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা সেবা পাবে কে? যার টাকা আছে তিনিই। দামী পোশাক, বাড়ী, গাড়ী, রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পাবে কে? যার টাকা আছে তারাই। শেষেরটি মেনে নেয়া যায়। কারণ দামী বাড়ী, দামী গাড়ী, পোশাক মানুষের জীবনের জন্য অপরিহার্য নয়। তবে জ্ঞান অর্জনের জন্য বা সুস্থ্য থাকার জন্য কেবল টাকাই থাকতে হবে? সেলুকাস!
কথা হচ্ছে, “অতীত ভবিষ্যতের শিক্ষক” কথাটি আদৌ সত্য কি-না এই খসড়া দেখে বুঝার কোন উপায় নেই। গণমাধ্যমে তথ্য ও উপাত্ত সবার উপরে আসিন হওয়ার কথা। কিন্তু টাকাই সবার উপরে বলে খসড়ায় তুলে ধরা হচ্ছে। আর টাকার গুরুত্ব বেশি দেওয়াতে দেশের মানুষ আর সরকার চলে যাবে সোজা পুঁজিপুতিদের পকেটে। অনলাইন গণমাধ্যম হারাবে অস্তিত্ব।
যে বা যারা এই নীতিমালা প্রণয়নের সাথে ছিলেন তারা সকলেই দেশের সম্পদ বলেই আমরা জানি। আর এই সব মেধাবী মানুষগুলো কিভাবে একটি
অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশনা ও প্রচারের ক্ষেত্রে কেবল টাকাকেই অতি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হিসেবে বিচার করেন? এর ফলে দেখা যাবে এখানে মেধাবী ছেলে-মেয়েরা যারা সরাসরি অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশ ও প্রচারের সাথে জড়িত, যারা সামান্য টাকায় বা বিনা পারিশ্রমিকে দিন রাত অক্লান্ত কাজ করে যাচ্ছে, যাদের কোন বাড়তি টাকা নেই তারা তো অচিরেই ঝরে যাবে।
সকলের জানা, একটি বিশাল অংশ আজ এই অনলাইন গণমাধ্যমের দৌলতে চাকরি না পেয়েও অনেকটাই শান্ত রয়েছে। ধর্ণা দিচ্ছে না সচিবালয়ে। পায় না কোন সুযোগ নিজেকে অপকর্মে জড়াতে। ‘অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা’।
একথাটি যদি সত্য হয় তাহলে কেন এই মুক্ত সংবাদ মাধ্যমকে গলা টিপে হত্যা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে! জোর দিয়ে বলতে পারি বর্তমানে দেশে সকল প্রকার গণমাধ্যমের মধ্যে অনলাইন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। প্রিন্ট পত্রিকা ও টেলিভিশন মিডিয়ার চেয়ে বেশি মানুষ অনলাইনের সাথে যুক্ত। অনলাইন মানেই ধরে নেয়া হয় অনলাইন গণমাধ্যমকে।
এই জনগুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমটিকে কি করে সু-কৌশলে মেরে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়, একথা চিন্তা করে কুল পাইনা! যেসব সমাজ শুধু পুঁজিবাদিদের হাতে ছিল সেসব সমাজ অমানবিকতার পরিচায়ক। উদাহরণ হিসেবে আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগকে ব্যবহার করতে পারি। যখন বাংলাদেশ সরকার দেশকে ডিজিটালাইজেশন করতে মরিয়া, তখন এক শ্রেণীর বিশেষ মহল সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, তাই হয়ত টাকার ব্যাপারটি বেশি গুরুত্ব না পেয়ে তথ্যের ব্যাপারটি গুরুত্ব পাবে অনেক বেশি। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে ওই বিশেষ সমাজের সকল অপচেষ্টা। জানি, আমাদের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ভীষণ মেধাবী, বিচক্ষণ ও দূরদর্শী।
তিনি ভালো জানেন, কেবল টাকার মাপকাঠিতেই অনলাইন গণমাধ্যমের প্রকাশের সুযোগ দেয়া উচিৎ কি-না? আশা করি সরকার এই “টাকা তত্ত্বকে” বিদায় দিয়ে “অনলাইন গণমাধ্যম” প্রকাশের ক্ষেত্রে মেধা, যোগ্যতা, সৃজনশীলতা, ব্যক্তির পরিচয়কে প্রাধান্য দেবে। রাষ্ট্র ও দেশ বিরোধী যে কোন লেখা প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকার নিজেই একটি নিয়ন্ত্রণ সেল চালু রাখতে পারে। গড়ে তুলতে পারে একটি অনলাইন মনিটরিং সেল।
অনলাইন গণমাধ্যম প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রকাশকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আয়কর প্রত্যায়নপত্র, যে বা যারা অনলাইন গণমাধ্যমটির সাথে জড়িত তাদের পরিচয়, তথ্যসহ সব কিছু জেনে নিয়ে অনলাইন গণমাধ্যমটির নিবন্ধন করা যেতে পারে যার ফি হবে নূন্যতম।
অনলাইনবান্ধব নীতিমালা করে বর্তমান সরকার ইতিহাসের অংশ হতে পারে। যা ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা দেখেছি ইতিমধ্যে তথ্য প্রযুক্তির প্রচার-প্রসারে এই সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ গুণীসমাজে প্রশংসনীয় হয়েছে। তাই, সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া নতুন এই শিল্পটিকে কোন আইনের বেড়াজালে আটকে না দিয়ে বিকশিত-প্রসারিত হতে দিন।
কোটি বেকারের এই দেশে যেখানে গড়ে উঠছে না আশানুরূপ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান, যেখানে নিত্য-নতুন আইডিয়া অপ্রতুল, চারদিকে বেকারত্বের হাহাকার, অগ্নিমিছিল সেখানে কারো কথায়, ইশারা-ইঙ্গিতে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” দাবীদার বর্তমান সরকার কোনক্রমেই অনলাইন গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র টাকার মাপকাঠিতে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিতে পারে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।
লেখক : প্রধান সম্পাদক পিবিএ ফটো নিউজ এজেন্সি ও সভাপতি বাংলাদেশ অনলাইন জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন(বিওজেএ)।
পিবিএ/ইকে