পিবিএ ডেস্কঃ বিদেশি নাগরিকত্ব গ্রহণ করা অনেক বাংলাদেশির কাছে স্বপ্ন। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে। তবে এক দেশে জন্মে অন্য দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বেশ কঠিন একটি কাজ। বেশিরভাগ দেশেই এই নিয়ে পোহাতে হয় নানা জটিলতা। এছাড়া অনেক দেশে অনুমোদন সূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া গেলেও নাগরিকের পূর্ণ অধিকার দেওয়া হয় না। কিন্তু আপনারা অনেকেই হয়তো জানেন না, পৃথিবীতে এমন বেশ কিছু দেশ রয়েছে যেখানে নাগরিকত্ব লাভ করা তেমন কঠিন নয়। এসব দেশের আইনে আপনাকে গ্রহন করার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া। কোন ধরনের জটিলতা ছাড়াই এসব দেশের অধিবাসী হওয়া যায়। আজ আমরা পাঠকদের জানাবো আমেরিকার এমনই পাঁচটি দেশের অভিবাসন নীতির কথা, যেখানে বাংলাদেশিরা সহজেই নাগরিকত্ব পেতে পারেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক__
১) উরুগুয়ে
দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ উরুগুয়ে। দেশটিতে খুবই অল্পসংখ্যক মানুষ বসবাস করে। এখানকার মানুষের যথেষ্ট বন্ধুসুলভ। ভিসার মাধ্যমে যে কেউ সহজে দেশটিতে যেতে পারবেন। এই দেশটিতে অভিবাসী হিসেবে নাগরিকত্ব পেতে চাইলে প্রয়োজন কিছু নির্দিষ্ট কাগজপত্র। এখানে নাগরিকত্বের জন্য কমপক্ষে পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে, তবে বিয়ে করলে এই সময়সীমা তিন বছর। দেশটিতে পাঁচ বছর বসবাসের লিগ্যাল ডকুমেন্ট থাকতে হবে, এর পর দেশটিতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে।
আবেদনের জন্য এখানে ৬টি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এক) স্থায়ী অভিবাসনের জন্য উরুগুয়ে সরকারকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। দুই) সঠিক জন্ম সনদ দিতে হবে যা উরুগুয়ে সরকার গ্রহণ করেন। তিন) বিয়ের কাগজপত্র যদি থাকে তাহলে দিতে হবে। চার) নির্ভরযোগ্য মাসিক আয় দেখাতে হবে এবং এর হিসাব দেখাতে হবে। পাঁচ) মেডিকেল সনদ দিতে হবে। ছয়) বৈধ উরুগুয়ের ঠিকানা দিতে হবে।
এই প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে এক থেকে দুই বছরের মধ্যে উরুগুয়ের বৈধ নাগরিকত্ব পাওয়া যায়।
২) ইকুয়েডর
দক্ষিণ আমেরিকার আরেকটি দেশ ইকুয়েডর। দেশটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় তুলনামূলক কম এবং মুদ্রা হিসেবে মার্কিন ডলার ব্যবহৃত হয়। এখানকার অভিবাসী হতে হলে আপনার মাসিক আয়ের ৮০০ ডলার হতে হবে এবং এর বৈধ কাগজপত্র থাকতে হবে। এর পাশাপাশি আপনাকে ১০০ ডলার অতিরিক্ত নির্ভরযোগ্যতার জন্য দেখাতে হবে। এটি পেনশন ভিসার অধিনে পড়ে, তবে এদেশের সরকার যাচাই করে না যে আপনি আসলে পেনশন ভিসা নিচ্ছেন কিনা। পেনশন ভিসা পাওয়ার ২১ মাস পর এখানে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।
ইকুয়েডরে নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে হলে চারটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এক) অন্তত তিন বছর ইকুইডরে বসবাস করতে হবে। দুই) ইকুয়েডর সরকার কর্তৃক যাচাইকৃত জন্মসনদ থাকতে হবে। তিন) ইকুয়েডরে বসবাসরত আবাসটি দেশটির সরকার কর্তৃক যাচাই করে সঠিক কাগজপত্র দিতে হবে। চার) নাগরিকত্ব পেতে সাক্ষাৎকার দিতে হবে এবং সেখানে পাস করতে হবে।
৩) আর্জেন্টিনা
দক্ষিণ আমেরিকার একটি পরিচিত দেশ আর্জেন্টিনা। মেসি-ম্যারাডোনার দেশ হিসেবে বাংলাদেশিদের কাছে আর্জেন্টিনার ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। এদেশ থেকে অল্প সংখ্যক মানুষ বসবাস করে। এই দেশটির অভিবাসী হতে চাইলে আপনার প্রতি মাসে ৮৫০ ডলার আয় থাকতে হবে এবং তার বৈধ কাগজপত্র থাকতে হবে। আর এখানে নাগরিকত্ব পেতে হলে কমপক্ষে দুই বছর বসবাস করতে হবে। এই দুই বছর বসবাসের উপযুক্ত কাগজপত্র আর্জেন্টিনা সরকারের কাছে জমা দিতে হবে।
যে যে কাগজগুলো জমা দিতে হবে- এক) যাচাইকৃত জন্ম সনদ প্রয়োজন হবে। ২) পূর্বে বসবাসরত দেশের প্রমাণ দিতে হবে। তিন) ব্যক্তিকে শনাক্ত করার মত সব ধরনের নথি দিতে হবে। চার) আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সব ধরনের নথি, যেমন ব্যাংক স্টেটমেন্ট, নগদ অর্থের হিসাব, সম্পদের হিসাব দিতে হবে।
৪) ব্রাজিল
সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধশালী দেশ ব্রাজিল। এটি দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম দেশ এবং জনসংখ্যাও অধিক। পেলে, রোনালদো, নেইমারদের কল্যাণে বাংলাদেশিদের কাছে দেশটি অতি পরিচিত। ব্রাজিলে অভিবাসী হতে চাইলে আপনার মাসিক আয় ২০০০ ডলার থাকতে হবে। এখানে দুইজনকে সঙ্গে নিয়ে থাকা যাবে, তবে তাদের প্রত্যেকের জন্য মাসে আরো অতিরিক্ত ১০০০ ডলার করে আয় দেখাতে হবে।
এখানে সহজে নাগরিকত্ব পেতে হলে কোন ব্রাজিলিয়ানকে বিয়ে করতে হবে এবং তার থেকে পিতা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তা না হলে আপনাকে কোন বড় বিজ্ঞানী হতে হবে, গবেষক হতে হবে অথবা উচ্চ আয়ের মানুষ হতে হবে। উচ্চ আয়ের মানুষ বলতে আপনাকে ব্রাজিলে প্রায় ৪৫ হাজার ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। এ ধরনের মানুষ ব্রাজিলে দ্রুত নাগরিকত্ব পান। এর বাইরে একজন অভিবাসী ১৫ বছর ব্রাজিলে বসবাস করার পর দেশটিতে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারে। তবে এই সময় চার বছর কমতে পারে যদি আপনি সেখানে একটি ভালো চাকরি পান এবং কিছু অর্থ বেশি খরচ করতে পারেন।
৫) পানামা
পানামা উত্তর আমেরিকার খুবই চমৎকার একটি দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটিতে খুব সহজেই অভিবাসী হওয়া সম্ভব। পানামা দীর্ঘ সময়ের জন্য অবসর ভিসা দিয়ে থাকে। তবে আপনাকে অবশ্যই এজন্য ১০০০ ডলার মাসিক আয় দেখাতে হবে। আর তরুণরা দেশটির অভিবাসী হতে চাইলে পানামিন ব্যাংকে ৫ হাজার ডলার জমা দিতে হবে। এরপর দেশটি ভিসা প্রদান করবে। পানামার নাগরিকত্ব পেতে চাইলে দেশটিতে পাঁচ বছর বসবাস করতে হবে। এরপর নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। তবে পানামা কিন্তু দ্বৈত নাগরিকত্ব দেয় না, তাই এ দেশের নাগরিকত্ব পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিজ দেশের নাগরিকত্ব প্রত্যাহার করতে হবে।
পিবিএ/এমআর