মা-বাবার থেকে গর্ভস্থ সন্তানের ডায়াবেটিস হতে পারে

মা-বাবার থেকে গর্ভস্থ সন্তানের ডায়াবেটিস হতে পারে

পিবিএ ডেস্কঃ শুধু বয়স্কদেরই নয় এখন ডায়াবেটিসের সাঁড়াশি আক্রমণে শিশুরাও। কাজেই ছোট বলে এক্ষেত্রে যেমন-তেমন ভাবার কোনও কারণ নেই। শিশুদের মধ্যে মূলত চার ধরনের ডায়াবেটিস দেখা দেয়।

শিশুর মধুমেহ

সদ্যোজাতর ডায়াবেটিস– জন্মের পর থেকে ৬ মাস বয়সের মধ্যেই ধরা পড়ে নিওনেটাল ডায়াবেটিস। এই অসুখ খুবই বিরল। ৪ লাখের মধ্যে একজনের হয়। জিনগত কারণে হতে পারে এই ডায়াবেটিস।

আর্লি অনসেট টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস– যখন অটোইমিউন রোগের (শরীরের রোগ প্রতিরোধক শক্তি যখন শরীরকেই আক্রমণ করে) কারণে শরীরে অগ্ন‌্যাশয়ের বিটা কোষ (যেটা ইনস‌ুলিন সংশ্লেষণ ও নিঃসরণ করে) নষ্ট করে, ফলস্বরূপ শরীরে ইনস‌ুলিন তৈরি হয় না। তখন সুস্থ থাকতে ইনস‌ুলিন দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। শিশুদের এই ডায়াবেটিসে আক্রান্তের হার এদেশে বেশি। সদ্যোজাতর টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস হয় না। ছয়মাস বয়সের পরে এটা দেখা দেয়।

টাইপ টু ডায়াবেটিস– টাইপ টু ডায়াবেটিস শিশুদের সাধারণত পাঁচ বছর বয়সের পর ধরা পড়ে। সংখ‌্যা ভিত্তিতে ধরতে গেলে এই ধরনের ডায়াবেটিস শিশুদের বেশি হয়।
এম ও ডি ওয়াই (ম্যাচুরিটি অনসেট ডায়াবেটিস অফ দি ইয়ং)- এই ডায়াবেটিসও জিনগত কারণে শিশুদের হয়। এই ডায়াবেটিসের আক্রান্তের হারও কম।

কখন প্রয়োজন টেস্ট

শিশুদের ক্ষেত্রে যে প্রধান লক্ষণগুলি দেখা দেয় সেগুলি হল-
টাইপ-১- এর ক্ষেত্রে

বাচ্চা খুব খিটখিটে হয়ে যায়
শিশু খেতে চায় না
শরীরে অনেক বেশি সংক্রমণ হতে থাকে
হাতে-পায়ে ব্যথা
পেটে ব্যথা
গা বমি ভাব বা বমি
টাইপ-২ এর ক্ষেত্রে
বাচ্চা সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে
বেশি মোটা হয়ে যেতে শুরু করে
প্রস্রাব করার পর সেইস্থানে পিঁপড়ে চলে আসে

রোগ প্রতিরোধ কখনঃ নিওনেটাল ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে গেলে সমগোত্রে বিবাহ করা চলবে না।
বাচ্চাকে অতিরিক্ত খাইয়ে মোটা করবেন না। ভারতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিশু টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তার মূল কারণ কিন্তু এটাই। সাধারণত বাবা-মায়েরা বা অন্য বাড়ির লোকেরা বাচ্চাদের তিনটি বয়সে জোর করে বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। যথা- (১) উইনিং পিরিয়ড অর্থাৎ যে সময় শিশু মাতৃদুগ্ধ ছেেড় অন্য খাবার খাওয়া আরম্ভ করে (২) যখন শিশু স্কুলে যাওয়া আরম্ভ করে এবং (৩) বয়ঃসন্ধিকালে। ফলে ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
এটা মোটেই স্বাস্থ‌্যকর লক্ষণ নয়।

শৈশবে হলে কি সেরে যায়ঃ টাইপ-ওয়ান বা টাইপ টু ডায়াবেটিস একবার হলে সারাজীবনই এই অসুখ বয়ে বেড়াতে হয়। নিওনেটাল ডায়াবেটিসের একটি ধরণ হল ট্রানজিয়েন্ট ডায়াবেটিস।

এই রোগে আক্রান্তদের ৫০ শতাংশ রোগীরই ৪-৫ মাসের মধ্যেই একটা সাময়িক নিরাময় হয়। কিন্তু আবার এদের ডায়াবেটিস ফিরে আসে ৫-৬ বছর বয়সে বা বয়ঃসন্ধিকালে।

সুরাহা কিসেঃ ট্রানজিয়েন্ট ও টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ইনস‌ুলিনই একমাত্র ওষুধ। নিওনেটাল ডায়াবেটিসের কিছু ক্ষেত্রে Sulsomylurea- জাতীয় ওষুধ দেওয়া হয়। বাকিগুলির ক্ষেত্রে ইনস‌ুলিনই ভরসা। এম ও ডি ওয়াই এবং টাইপ টু ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ওষুধই ভরসা।

সাধারণ সাবধানতা

১) বাবা-মা বা পরিবারের অন‌্য কারও ডায়াবেটিস থাকলে সতর্ক থাকুন।
২) শিশুর ওজন বাড়লে চলবে না।
৩) শিশুকে রোজ খেলাধুলো বা এক্সারসাইজ করানো দরকার।
৪) শিশুকে সুষম খাদ্য দিন। কার্বোহাইড্রেট খাওয়ানোর সময় তার জিআই অর্থাৎ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (খাবারে উপস্থিত সুগারের মাত্রা) জেনে খাওয়ান।
৫) ফাস্ট / জাঙ্ক / প্রসেসড ফুড না খাওয়ানোই ভাল।

রোগ ধেরতে গেলে

সঠিক সময় ইনস‌ুলিন নেওয়ার ব্যবস্থা রাখুন।
ইনস‌ুলিন ইনজেকশন দেওয়া শরীরের যে স্থানে হচ্ছে সেই স্থানে মাঝে মধ্যেই পাল্টান। তবে একদিনের সবকটা ইনজেকশন যেন পাশাপাশি জায়গাতেই দেওয়া হয়।
শিশুর ব্লাড সুগার নিয়মিত মাপা এবং তার রেকর্ড রাখা দরকার।
নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডায়াবেটিক কিটোঅ‌্যাসিডোসিস (এমন একটা অবস্থা যেখানে শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে ইনস‌ুলিন থাকে না বরং বেশি মাত্রায় ব্লাড অ‌্যাসিড তৈরি হয়) যাতে না হয় তার জন্য যা যা করণীয় করতে হবে। এমন হলে শিশুকে হাসপাতলে ভরতি করার দরকার। কারণ এই অবস্থায় শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

অবাধ‌্য নয়ঃ যে শিশুরা টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তারা যখন বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছয় তখন তাদের একটু আলাদা রকম গাইডেন্স এবং কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন। কারণ টাইপ ওয়ানের ক্ষেত্রে সঠিক সময় মতো নিয়মিত ইনস‌ুলিন নিতে হয়। জীবনশৈলীতে নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হয়। এই বয়সে এত রকমের বারণ খুব মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ফলে মাঝেমধ্যেই শিশু অবাধ‌্য হলে নিষিদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করে দেয়। এমন পরিস্থিত তৈরি হলে শিশুকে বোঝাতে হবে। না হলে হঠাৎ করে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে কাউন্সেলিং করা দরকার। বোঝাতে হবে যে খুব ইচ্ছে হলে তখন একটু নিয়ম ভাঙা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে ইনস‌ুলিনের ডোজ বাড়াতে হবে।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...