আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনের পরিচিত মুখ, উজ্জল নক্ষত্র ফাহমিদা নবী। তিনি বাজারি গান করেন না। তার গানের কথা, স্বতন্ত্র্য গায়কী এবং ভিন্ন ফ্যাশনবোধ তাকে অন্য সবার থেকে পৃথক অবস্থানে রাখে সব সময়। বার্তা সংস্থা পিবিএ-এর পক্ষ থেকে সঙ্গীতের নানা প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলেছেন জিয়াউল জিয়া–
প্রশ্ন : আপনার বর্তমান ব্যস্ততা সম্পর্কে জানবো–
ফাহমিদা নবী : এখন তো আসলে সিঙ্গেল ট্র্যাক হয়। তাই এই ফরমেটেই কাজ করছি। গত ১৬ জানুয়ারি ‘অন্যজীবন’ শিরোনামের একটা গান রিলিজ হলো। তার আগের ট্রাকটির শিরোনাম ছিল ‘বন্ধু তোমায় খুঁজি’। আজ বিকেলে অটিজম নিয়ে একটা গানে কণ্ঠ দেব। ওই গানটির সুর করেছেন বেলাল খান। পাশাপাশি স্টেজ শো’র ব্যস্ততা তো আছেই।
প্রশ্ন : অনলাইনে গান প্রকাশিত হচ্ছে। সবাই তাই এখন নতুন গান খুঁজে পান না। আপনার অনুভূতি কি ?
ফাহমিদা নবী : এটা আমাদের দেশের জন্য নতুন একটা ব্যাপার। আমিও অনেক যায়গায় অনেককে বলতে শুনেছি ‘আপনি এখন গান করেন না কেন?’ এখন আসলে আমাদের দীর্ঘদিনের অভ্যস্ততা বদলাতে হবে। গান শোনার মাধ্যম বদলাতে হবে। কিছু করার নেই তো। গান শুনতে চাইলে ইউটিউবে ঢুকতেই হবে। একটু আপটুডেট হতে হবে আমাদের।
প্রশ্ন : ইউটিউব আসায় শুধু আমাদের দেশে সিডি প্রকশ বন্ধ হলো কেন ?
ফাহমিদা নবী : আমরা হুজুগে বাঙালি। নতুন একটা কিছু পেলে আমরা হুমড়ি খেয়ে পড়ি। এখন যেমন ইউটিউব নিয়ে আমাদের ঘুম হারাম। তবে, এটা ভয়ের বিষয়। এতে করে শিল্পীরা আইডেনটিটি ক্রাইসিসে পড়ছে। গান কাউকে উপহার দেওয়ার উপায় নেই। দিতে হয় লিংক। এগুলোতে আগের আবেদনটা নেই। আমাদের শুধুমাত্র ইউটিউবের ওপর এতোটা নির্ভরতা তৈরী করা ঠিক হয়নি।
প্রশ্ন : অনলাইন মাধ্যমের ইতিবাচক দিকটি কেমন ?
ফাহমিদা নবী : গান শোনার ক্ষেত্রে নতুন একটা জেনারেশন তৈরী হয়েছে। গান, গানের ভিডিও ভালই ডাউনলোড হয় শুনেছি। শিল্পীদের এখন আর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয় না। নিজের সৃষ্টিকে নিজেই ছড়িয়ে দিতে পারছে সে। এই সুযোগে প্রচুর গান বের হবে। শ্রোতারা যেটা ভাল মনে করবে নেবে, যেটা ভাল মনে করবে না সেটা নেবে না।
প্রশ্ন : প্লেব্যাকে আপনার গানের সংখ্যা খুবই কম। কেন ?
ফাহমিদা নবী : ‘ভাল গান ছাড়া গাই না‘-একথা বলবো না। আমি নির্দিষ্ট একটা টেস্টের গান বা ধারার গান করি। আমাদের দেশে যেরকম বানিজ্যিক ছবি হয় তাতে এরকম গান করার সুযোগ কম। তাই কম করি। তবে সিনেমার অন্য একটা প্লাটফর্মে এখন কাজ করতে চাই। ভীষণভাবে অপেক্ষা করে আছি।
প্রশ্ন : কি কাজ সেটা?
ফাহমিদা নবী : সিনেমার গান সুর করতে চাই। পাশাপাশি ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর করতে চাই। এই কাজটায় এখন খুব ইন্টারেস্ট ফিল করছি।
প্রশ্ন : সঙ্গীতে প্রতিবছর একজনকে একুশে পদক দেওয়া হোক – এই দাবির সঙ্গে আপনি একমত ?
ফাহমিদা নবী : অবশ্যই একমত। আমার বাবার কথাই ধরুন, বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলের সবাই তাকে চেনেন, তার গান সম্পর্কে জানেন। আজ পর্যন্ত তাকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়নি। কেন দেওয়া হয়নি আমি জানি না। আজই আমার মা আমাকে বললেন, ‘তোরা কেউ এটা নিয়ে কথা বলিস না কেন?’ আসলে কথা বলে কি হবে? শিল্পীর অবদান রাষ্ট্রকে মনে রাখতে হবে ,শিল্পীর অবদান রাষ্ট্র মনে না রাখলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে কথা বলে কি হবে!
প্রশ্ন : শুনলাম আপনি দেশের গানের সুর করেছেন। একটু বলবেন ?
ফাহমিদা নবী : ১৪ টা দেশের গানের সুর করেছি। ১৪ জন শিল্পী গাইবেন। গানগুলোতে বাংলাদেশের চিত্র ফুটে উঠেছে। আছে তরুণদেরকে জাগিয়ে তোলার আহবানও। এ মসেই কাজ শেষ হবে। এই প্রকল্পের নাম রাখা হয়েছে ‘জীবনের জয়গান’। প্রকল্পের মূল বিষয় সবার মাঝে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা। যার মাঝে দেশপ্রেম নেই তার জীবন বৃথা!