পিবিএ ডেস্ক : নাগরিকত্ব সংশোধন বিল নিয়ে আসামে তীব্র উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকটি জেলায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জারি করা হয়েছে কারফিউ। স্থগিত করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ। গুয়াহাটি ইউনিভার্সিটি এবং কটন ইউনিভার্সিটি তাদের সব আন্ডারগ্রাজুয়েট এবং গ্রাজুয়েট পরীক্ষা স্থগিত করেছে। ধিব্রুগড়মুখী অথবা ধিব্রুগড় থেকে সব ফ্লাইট উড্ডয়ন বৃহস্পতিবারের জন্য বাতিল করেছে ইন্ডিগো বিমান সংস্থা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। এতে বলা হয়েছে, রেলওয়ের সম্পত্তি নিরাপদ রাখতে গত রাতেই উত্তরপূর্বাঞ্চলের আক্রান্ত এলাকায় আরপিএসএফের ১২ কোম্পানি মোতায়েন করা হয়। দূরপাল্লার ট্রেনগুলোকে গুয়াহাটি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গুয়াহাটি ও কামাক্ষ্যায় আটকা পড়ে আছেন বহু ট্রেনযাত্রী। নিরাপত্তা ইস্যুতে আসাম ও ত্রিপুরার সব যাত্রীবাহীন ট্রেন স্থগিত করেছে নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে। ওদিকে গুয়াহাটি ও আগরতলায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল চতুর্থ দিনের জন্য রনজি ট্রফি গেমস। কিন্তু কারফিউয়ের জন্য তা স্থগিত করা হয়েছে।
সেনা মোতায়েন নিয়ে সংবাদমাধ্যম পিটিআই-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল পি খোঙ্গসাই। তিনি জানান, গুয়াহাটি শহরে দুই কলাম (এক কলামে থাকে ৭০ জন জওয়ান, যার নেতৃত্বে থাকেন এক বা দুইজন অফিসার) সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তারা এলাকায় টহল দিচ্ছে। তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় ও জোড়হাট জেলাতেও টহল দিচ্ছে সেনারা।
আসামের বৃহত্তম শহর ও বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। বহু জায়গায় বন্ধ করে ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোওয়াল এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামেশ্বর তেলির বাসভবন লক্ষ্য করে বিক্ষোভকারীরা পাথর নিক্ষেপ করে। মূলত এরপরই জোরদার করা হয় ডিব্রুগড়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। লক্ষ্মীনগর এলাকায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পাথর নিক্ষেপের পাশাপাশি বিক্ষোভকারীরা দুলিয়াজনে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বাড়িতেও ভাঙচুর চালায়। বিক্ষোভকারীরা যেভাবে রাস্তায় টায়ার আর গাছপালা ফেলে তাতে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে দাবানলের সঙ্গে তুলনা করছেন অনেকে।
ভারতের বিজেপি সরকার বলছে, এই নাগরিকত্ব বিল পাসের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় কারণে নিপীড়িত অমুসলিমদের আশ্রয়স্থল হবে ভারত। তবে সমালোচকদের মতে, দেশটির মুসলমানদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করতেই এ বিল আনা হয়েছে। বিলটিকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। বিতর্কিত ওই বিলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে ভারতে গিয়ে বসবাসরত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পার্সি এবং খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটিকে মুসলিমদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
এইচআরডব্লিউ’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক প্রধান মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, ‘ভারত সরকারের দাবি, নাগরিকত্ব আইনের লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানের আহমদিয়া এবং মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের বাদ দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষা করা। বিলে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথা বলা হলেও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ধর্মীয় ভিত্তিতে বৈষম্য করা হয়েছে।
পিবিএ/জেডআই