গামছা পেঁচিয়ে হত্যা করে চীনা নাগরিককে, দুই সিকিউরিটি গার্ড ৪ দিনের রিমান্ডে

পিবিএ, ঢাকা : বনানীতে চীনা নাগরিক গাউজিয়ান হুই (৪৩) হত্যার পর আট দিন পর খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করে ঘটনায় জড়িত বাসার দুই সিকিউরিটি গার্ডকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- আব্দুর রউফ (২৬) ও এনামুল হক (২৭)। পরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় বনানী থানায় করা হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুল হক। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে হত্যার বর্ণনা দেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান আবদুল বাতেন।

তিনি বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আবদুর রউফ (২৬) ও এনামুল হককে (২৭) গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে– বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে তারা কর্মরত ছিল। ওই ভবনের ছাদে বসবাস করত। একত্রে চাকরির সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

ওই ভবনে বসবাসকারী বিত্তবান লোকদের জীবনযাত্রা দেখে তারা হতাশাগ্রস্ত হয় এবং নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় বারবার কীভাবে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় তা নিয়ে কথা বলে।

একপর্যায়ে হত্যাকাণ্ডের কয়েক দিন আগে রউফ প্রস্তাব দেয় যে, চীনা নাগরিক গাউজিয়ান অনেক বড় ব্যবসায়ী, অনেক টাকা-পয়সা নিয়ে আসা-যাওয়া করে, ফ্ল্যাটে একা থাকে। তাকে হত্যা করে টাকা নিতে পারলে জীবনে আর কিছু করা লাগবে না।

পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা সুযোগ খুঁজতে থাকে। এদিকে তারা নিশ্চিত হয় যে ভবনের সিসিটিভি ক্যামেরাতে ভিডিও রেকর্ড কাজ করে না।

পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ ডিসেম্বর তারা নিজের ব্যবহৃত গামছা সঙ্গে নিয়ে গাউজিয়ানের ফ্ল্যাটের সামনে যায়। গাউজিয়ান দরজা খুললে তারা ইশারায় পানির কথা বলে। মুহূর্তেই তারা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং এনামুল গলায় গামছা পেঁচিয়ে ধরে।

অল্প সময়ের মধ্যেই হুইয়ের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে যায়। পাশেই ড্রইংরুমের টেবিলের ওপরে ছোট একটি ব্যাগ ছিল। রউফ ওই ব্যাগটি খুলে সেখানে থাকা ৩টি ১ হাজার টাকার বান্ডিল, কিছু খুচরা টাকা ও মোবাইল নেয়। সেখানে মোট সাড়ে ৩ লাখ টাকা ছিল।

খুনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ডিবির এই প্রধান কর্মকর্তা বলেন, টাকা নিয়ে লাশ ঘরে রেখে গামছা দিয়ে রক্ত মুছে ছাদে চলে যায় রউফ ও এনামুল। পরে এক সঙ্গে গোসল করে দুজন। রাতেই বনানী সুপার মার্কেটের পাশে একটি চায়ের স্টলে বসে চা খায় এবং টাকাগুলো কি করবে তা নিয়ে আলোচনা করে। পরে টাকাগুলো তারা ভাগ করে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

আবদুল বাতেন বলেন, ওই দিন রাতে রউফ নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে ডিউটিতে ছিল। রাত ১১টার দিকে ভবনের পেছনের দিকে বালু মাটিতে কাঠের টুকরো দিয়ে গর্ত করে ওপরে ওঠে। লাশ টেনে নিয়ে লিফট দিয়ে নামিয়ে মাটিচাপা দেয়।

ঘটনার একদিন পর গাউজিনের গাড়িচালক তার ব্যবহৃত স্যান্ডেলে রক্তের দাগ দেখে খোঁজা শুরু করেন। একপর্যায়ে চালক ভবনের পেছনে মাটিচাপা অবস্থায় পায়ের গোড়ালি দেখে পুলিশকে খবর দেন।

১১ ডিসেম্বর বনানীর ২৩ নম্বর রোডের ৮২ নম্বর ভবনের পেছনে মাটিচাপা অবস্থায় জে জিয়াং ফি নামে এক চীনা নাগরিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...