পিবিএ ডেস্ক: মন চলে মনের গতিবেগে। নানা ঘাত-প্রতিঘাত মানুষের শান্তি নষ্ট করে। সবরকম পরিস্থিতিতে মানিয়ে চলতে জীবনের প্রতিটি স্তরে মনকে বশে রাখা দরকার। কোন বয়সে মনের কী চাহিদা? ভাল থাকে নিজেই করুন নিজের কাউন্সেলিং। সেই উপায় সরলীকরণ করে দিলেন সাইকোলজিষ্ট বিশেষজ্ঞ।
একদিকে পরিস্থিতির চাপ অন্যদিকে বয়সের উর্ধ্বগামীতার পারদ বৃদ্ধি। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পরিপক্ক হতে শুরু করে মন। জন্মায় ভাল-মন্দের বিচার বোধ। পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে ঠিক-বেঠিকের হিসাব কষতে শেখেন। মানতে না পারার বিষয় গুলোই একসময় কম্প্রোমাইজের জাঁতাকলে জব্দ হয়। কখনও ভাঙা, কখনও গড়া। এরই নাম জীবন।
শরীরের পরিবর্তন তো চোখে পড়ে কিন্তু মনের পরিবর্তনটা! চলমান মনের ছন্দপতন ঘটলেই বিপদ। পরিস্থিতি অধিকাংশ সময় সেটা করতেই বাধ্য করে। তাল কাটলে প্রকাশ করতে পারেন না অনেকেই। চেপে রাখতে রাখতে পাকিয়ে যায় অসুখ, মন থেকে শরীর পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার। আর মেনে নিতে না পারলে জীবনটা অর্থহীন, অপ্রাসঙ্গিক। পরিস্থিতকে বশে রাখলেও বয়সের ফলস্বরূপ অনেক পরিবর্তনেই আটকে রাখা বেশ কঠিন ব্যাপার। স্রোতের বিপক্ষে যেতে গেলেও বিপদ। যদিও চৌকাঠ পেরোতে গিয়ে হোঁচট লাগতে পারে। আর ঠিকভাবে উতরে গেলেও বয়সের নিজস্ব চাহিদা মেটাতে গিয়ে গলদঘর্ম হন অনেকেই। এই দোলাচল থাকবেই। আসলে একটা বয়সের গাঁট পেরিয়ে অন্য একটা বয়সে প্রবেশ করলে সেক্ষেত্রে মনে কিছু ক্রাইসিস অবশ্যই তৈরি হয়। অর্থাৎ মানসিক দ্বন্ধ চলে। নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও ভাল থাকা যায়। যদি জানা থাকে বয়সভেদে মনের পরির্তনের ক্ষেত্রগুলি ও তা নিয়ন্ত্রণের উপায়।
টিন থেকে টোয়েন্টি (১৩ বছরের পর): টিনএজ পেরিয়ে একধাপ এগোন। শরীরের নানা পরিবর্তন শুরু হয়। মনেও পড়ে তার প্রভাব।
মনের গতিবিধি:
শারীরিক নানা পরিবর্তনকে গ্রহণ করার ক্ষমতা তৈরি।
বন্ধু মহলে মানিয়ে চলা। গ্রহণযোগ্যতা বাড়ান।
কেরিয়ারের সঠিক দিক নির্দেশের জন্য মানসিক প্রস্তুতি।
বশে আনতে:
অভিভাবকদের সন্তানের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
এই সময় শরীরের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে। পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাস জরুরি।
ঠিকঠাক বন্ধু-বান্ধবের গ্রুপে নিজেকে যুক্ত করা ও নিজের রোল মডেল ঠিক করা জরুরি।
নিয়মিত এক্সারসাইজ জরুরি।
ব্যর্থ হলে: বন্ধুবান্ধব দ্বারা প্রভাবিত, আইডেনটিটি ক্রাইসিস, কেরিযার কেন্দ্রিক অতিরিক্ত মানসিক চাপ, শারীরিক চাহিদা বৃদ্ধি।
কুড়ি পেরোলেই বুড়ি (২১ বছরের পর): বুড়ি নয়, বড় হওয়া। একজন যখন ত্রিশে প্রবেশ করছে তখন মন পরিপূর্ণতা পেতে শুরু করে। কিন্তু মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তখনও পাকাপোক্ত হয় না।
মনের গতিবিধি:
পড়াশোনা কিংবা চাকরির ক্ষেত্রে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।
ইমোশনাল ইনভেস্টমেন্ট দরকার।
কর্মক্ষেত্র ও সম্পর্ক দুক্ষেত্রেই স্থিতিশীল অবস্থা জরুরি।
পরিবারের বাইরে খুব বুঝে বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী বাছাই।
দায়িত্ব নিতে সক্ষম।
বশে আনতে: সম্পর্কের ভীত তৈরি, জোরাল প্রতিশ্রুতি, কস্ট-বেনিফিট রিলেশনশিপ।
ব্যর্থ হলে: সম্পর্কের দোলাচল, না পাওয়া থেকে মানসিক অবসাদ, জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা, ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্ভাবনা।
মনের গতিবিধি:
বেশি মনযোগী হতে হবে কাজের জগতে।
পরিবারের প্রতি অতিরিক্ত দায়িত্ববোধ।
সব কিছুর মধ্যে ব্যালান্স করে চলার প্রবণতা।
বশে আনতে: সোশ্যাল সাপোর্ট দরকার। বন্ধু বা কাছের মানুষকে নিজের সমস্যার কথা প্রয়োজনে বলতে হবে। মনে চেপে রাখা খারাপ।
মি-টাইম জরুরি। নিজের চলতি কাজের বাইরেও নিজের পছন্দের কাজে কিছুটা সময় দিন।
নিয়মিত মেডিটেশন, যোগা করতে হবে। এতে শরীর-মন দু’ই ভাল থাকে।
ব্যর্থ হলে: একঘেয়েমি, হীনমন্যতা। চলে গেল চল্লিশ (৪০ বছরের পর)
চল্লিশ পেরিয়ে পঞ্চাশের দোরগোড়ায় মানেই শরীর ধীরে ধীরে ভাঙতে শুরু করে। এমটিনেস্ট ফিলিং বাড়তে থাকে। সন্তানরা বড় হয়ে পড়াশোনা বা কেরিয়ারের সূত্রে বাইরে থাকতে শুরু করে। ফলে এটা নিঃসঙ্গতা পুনরায় জীবনে দেখা দেয়।
মনের গতিবিধি :
ঘরে বন্দি না থেকে বাইরের জগতে কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।
নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
সোর্স অফ স্যাটিসফেকশন জরুরি।
বয়স বাড়ছে সেটা মানতে না পারা।
বশে আনতে: বেড়াতে যান এই বয়সি বন্ধু-বান্ধবদের একটা গ্রুপ তৈরি করে অবসর কাটান। তাহলে সহজে জীবনের প্রতিকূলতা মেনে নিয়ে মনে-প্রাণে উৎফুল্ল থাকা সম্ভব।
ব্যর্থ হলে: একাকিত্ব, অবহেলিত মন, শরীর ভঙ্গুর হতে শুরু করে।
মনের গতিবিধি: ঘুরে তাকানোর সময় এই বয়স। জীবন সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায় এইসময়। চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কষা শুরু হয়। শরীরের প্রভাবে মন খারাপও হতে থাকে।
বশে আনতে:
যা আছে তাই নিয়েই খুশিতে থাকা জরুরি।
পোস্ট রিটায়ারমেন্ট প্ল্যানিং করুন।
শরীরের প্রতি খুব যত্নশীল হোন। নিয়মিত চেক আপ জরুরি।
মনে নেতিবাচক চিন্তা একেবারেই নয়।
কারও সঙ্গে তুলনা না করে নিজের দিকে তাকান। নিজে কী করেছেন, কতটা পেয়েছেন সেটাই শেষ কথা।
পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে বিচার করাই শ্রেষ্ঠ উপায়।
পিবিএ/এমআর