জাবি ক্যাম্পাস কি ইকো পার্কে পরিণত হচ্ছে?

jabi
ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং

পিবিএ, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কি ইকো পার্কে পরিণত হচ্ছে ? ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা কি চিড়িয়াখানার প্রাণী ? বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে জাবির শিক্ষার পরিবেশ, ক্যাম্পাসে বসেই ঢাকার জ্যাম উপভোগ! ক্যাম্পাস যেন এখন সাফারি পার্ক! এভাবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সপ্তাহজুড়ে দর্শনার্থীদের কোলাহল আর প্রশাসনের অব্যবস্থাপনার চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বইছে সমালোচনার ঝড়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার মনে একটাই প্রশ্ন জাবি ক্যাম্পাস কি ইকো পার্কে পরিণত হচ্ছে?

সরে জমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো সপ্তাহজুড়ে দর্শনার্থীদের কোলাহল, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, উচ্চ হর্ণ, ঢাকঢোল, গান বাজানো, ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট, দোলনা খেলা, শাড়ি, জামা কাপড় বিক্রি, খেলনা সামগ্রী বিক্রি, পিঠা-পুলি কেনাকাটা এবং তাবু গেড়ে বনভোজন আয়োজন, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন পালনে রীতিমতো পুরো ক্যাম্পাস এলাকা হাটে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবারসহ অন্যান্য ছুটির দিনে ক্যাম্পাসে বাড়ছে দর্শনার্থীদের ভীড়। এতে একদিকে যেমন নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ তেমনি হারতে বসেছে ক্যম্পাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কি ইকোপার্ক, নাকি পড়াশোনার স্থান?

প্রশাসনের উদাসীনতা ও খামখেয়ালীপনার কারণেও এই অবস্থা বলে অভিযোগ করছেন একাধিক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘দর্শনার্থীদের চাপে পড়াশোনার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ঠিকমতো পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছি না।’ আইন ও বিচার বিভাগের শিহাব শাহরিয়ার বলেন, ‘শান্তিময় পরিবেশ নষ্ট করছে দর্শনার্থীরা। তাদের কোলাহলে ক্যাম্পাস থেকে অতিথি পাখিরা চলে গেছে। দ্রুত দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রনের মধ্যে আনা না গেলে আমরাও ক্যাম্পাস থেকে বিলীন হয়ে যাবো।’ ইতিহাস বিভাগের জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘দোকানপাটে দর্শনার্থীদের চাপে আমরা ঠিকমতো খাবার খেতে পারছি না। ফলে বাধ্য হয়ে হলের ক্যান্টিন, ডাইনিংয়ে খাচ্ছি।’ আন্তর্জাতিক বিভাগের তাওফিক হাসান বলেন, ‘প্রশাসন কি শিক্ষার্থীদের সাথে মজা নেয়? এভাবে আর কত? দর্শনার্থীরা গাড়ি নিয়ে আবাসিক হলের সামনে এসে হুই-হুল্লোর করছে। এটা কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকি বিনোদন স্পট?’

এদিকে দর্শনার্থীদের নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে ক্যাম্পাসে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। যার প্রভাব দেখা গিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও। ‘আমরাই জাহাঙ্গীরনগর’ নামক এক গ্রুপে শিক্ষার্থীরা একের পর এক প্রতিবাদী পোস্ট করছেন। সমালোচনা করছেন প্রশাসনের এমন দায়সারা আচরণ দেখে। এক শিক্ষার্থী ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা আজ যাযাবর! মনে হচ্ছে চিড়িয়াখানায় আছি! বাহিরের থেকে দর্শনার্থীরা দেখতে এসেছেন! সত্যি বলতে কি ক্যাম্পাসে যে হারে দর্শনার্থী আসছেন সেই হারে দর্শনার্থী চিড়িয়াখানায় বাঘ-ভল্লুক দেখতে যায় কি না সন্দেহ আছে।‘

চলমান এ পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধে প্রবেশ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বিভিন্ন শিক্ষককের রেফারেন্স দিয়ে বহিরাগতরা গাড়ি নিয়ে ভিতরে আসেন। ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা অক্ষুন্ন রেখে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প উপায় হাতে নিবো। যতদ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো এবং ক্যাম্পাস এলাকাকে নিরাপদ রাখার চেষ্টা করব।’

পিবিএ/জিজি

আরও পড়ুন...